ঢাকা, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩১ ভাদ্র ১৪৩২

যুক্তরাষ্ট্রে ডাক পার্সেল সেবা স্থগিত করল বাংলাদেশ

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৫ ১৪:২৫:১০

যুক্তরাষ্ট্রে ডাক পার্সেল সেবা স্থগিত করল বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেক: যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক নীতির কারণে উদ্ভূত জটিলতার জেরে গত দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে সে দেশে ডাকযোগে পার্সেল পাঠানো স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ডাক অধিদপ্তর। ট্রাম্প প্রশাসন কর্তৃক ছোট প্যাকেজের ওপর শুল্ক ছাড় বাতিল করার পর গত ২৮ আগস্ট থেকে এই স্থগিতাদেশ কার্যকর হয়।

‘ডি মিনিমিস’ নামক এই পুরোনো নিয়ম অনুযায়ী, ৮০০ ডলার বা তার কম মূল্যের পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করত। কিন্তু ২৯ আগস্ট থেকে সেই নিয়ম বাতিল হওয়ায় সব ধরনের আমদানি পণ্যে শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে এবং কাস্টমসে কড়াকড়ি শুরু হয়েছে। এই আকস্মিক পরিবর্তনের ফলে বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষেরা যুক্তরাষ্ট্রে পার্সেল পাঠাতে গিয়ে বড় ধরনের সমস্যার মুখে পড়েছেন।

আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম এফপি এবং বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশসহ অন্তত ৮৮টি দেশ তাদের পার্সেল সেবা স্থগিত বা সীমিত করেছে। ইউনিভার্সাল পোস্টাল ইউনিয়ন (ইউপিইউ) জানিয়েছে, এই সিদ্ধান্তের পর ২৯ আগস্ট বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে পাঠানো ডাক পার্সেলের পরিমাণ আগের সপ্তাহের তুলনায় ৮১ শতাংশ কমে গেছে।

বাংলাদেশের অনলাইন বিক্রেতা এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা এই সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তারা ডাক ব্যবস্থার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে পণ্য পাঠাতেন। ঢাকার মিরপুরের 'ফাইনরি' নামের একটি অনলাইন হস্তশিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক দা চিং বলেন, "এই মাসের শুরু থেকে আমার পাঠানো সব পার্সেলই ফেরত এসেছে। ডাকঘর থেকে বলা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে আর পার্সেল গ্রহণ করা হচ্ছে না। এখন আমার নিয়মিত গ্রাহকদের কাছে মুখ দেখানো কঠিন হয়ে গেছে।"

একইভাবে পুরান ঢাকার ইসলামপুরের কাপড় ব্যবসায়ীরা জানান, প্রবাসীদের কাছে শাড়ি ও সালোয়ার কামিজ পাঠাতে না পারায় তাদের বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক অর্ডার বাতিল করতে হয়েছে। তারা বলেন, "বেসরকারি কুরিয়ারে খরচ প্রায় তিনগুণ বেশি। এই হারে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা অসম্ভব।

ব্যবসায়ীদের মতোই সাধারণ মানুষও এই শুল্কের ধাক্কায় বিপাকে পড়েছেন। একজন অভিভাবক জানান, তাঁর সন্তান যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করে। তিনি নিয়মিত পোস্ট অফিসের মাধ্যমে ছেলের জন্য শীতের পোশাক, শুকনো খাবার ও বই পাঠাতেন। তিনি বলেন, “বেসরকারি কুরিয়ারগুলো এতটাই ব্যয়বহুল যে তা আমাদের সামর্থ্যের বাইরে। পোস্ট অফিসই ছিল আমাদের একমাত্র সাশ্রয়ী বিকল্প।”

বর্তমানে ডিএইচএল এবং ফেডেক্সের মতো আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিসগুলো তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, তবে তাদের খরচ অনেক বেশি। একজন নিয়মিত গ্রাহক দীপঙ্কর রায় বলেন, আগে জিপিও-এর মাধ্যমে ২-৩ হাজার টাকায় ২ কেজি পার্সেল পাঠানো যেত, এখন বেসরকারি কুরিয়ারে সেই খরচ ৭-১০ হাজার টাকা।

ফেডেক্সের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ১০০ ডলারের নিচের পার্সেলগুলোতে নতুন কোনো শুল্ক দিতে হচ্ছে না, তবে এর বেশি মূল্যের পণ্যে ৩০ শতাংশ কর প্রযোজ্য হচ্ছে। এ কারণে সামগ্রিকভাবে পার্সেল পাঠানোর হার কমে গেছে।

ডাক অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক পারভীন বানু বলেন, "আমরা মার্কিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছি। আশা করি, আলোচনা ফলপ্রসূ হবে এবং আমরা দ্রুত পার্সেল সেবা পুনরায় চালু করতে পারব।"

এএসএম/

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত