ঢাকা, রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩ ভাদ্র ১৪৩২

প্রবীণ রাজনীতিক ও চিন্তাবিদ বদরুদ্দীন উমর আর নেই

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৭ ১১:৫৪:১৩

প্রবীণ রাজনীতিক ও চিন্তাবিদ বদরুদ্দীন উমর আর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দেশের প্রখ্যাত চিন্তাবিদ, প্রবীণ রাজনীতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অগ্রপথিক বদরুদ্দীন উমর আর নেই। রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা ৫ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর।

জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, অসুস্থ অবস্থায় তাকে বাসা থেকে দ্রুত স্পেশালাইজড হাসপাতালে আনা হয়। সেখানেই তিনি শেষ মুহূর্তে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

এক জীবন সংগ্রামের, চিন্তার এবং লেখনির

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে পেশাজীবন শুরু করা বদরুদ্দীন উমর পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি এবং গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেন।

এক সময় পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে সক্রিয় ছিলেন তিনি। ২০০৩ সালে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করে আজীবন এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।

চিন্তাশীল লেখক ও সাংস্কৃতিক তাত্ত্বিক

১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর ভারতের বর্ধমান জেলায় জন্ম নেওয়া বদরুদ্দীন উমর ছিলেন উপমহাদেশের বিশিষ্ট মুসলিম লীগ নেতা আবুল হাশিমের পুত্র। পারিবারিক রাজনৈতিক আবহেই তার মধ্যে সমাজ ও রাজনীতির বিশ্লেষণধর্মী চিন্তার বীজ বপন হয়, যা পরবর্তী সময়ে তার লেখনীতে প্রকাশ পায়।

ষাটের দশকে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য এবং সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে তার লেখা ‘সাম্প্রদায়িকতা’ (১৯৬৬), ‘সংস্কৃতির সংকট’ (১৯৬৭) এবং ‘সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা’ (১৯৬৯) গভীর প্রভাব বিস্তার করে। এসব বইয়ে তিনি ধর্ম ও রাজনীতির দ্বন্দ্ব, উপনিবেশিক উত্তরাধিকার এবং সমাজে সাংস্কৃতিক বিভাজনের জটিলতা ব্যাখ্যা করেছেন।

শেষ সময় ও স্বীকৃতি

গত ২২ জুলাই শ্বাসকষ্ট ও নিম্ন রক্তচাপজনিত সমস্যায় তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। ১০ দিন চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরলেও বয়সজনিত নানা অসুস্থতা তাকে গ্রাস করে রাখে।

২০২৫ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ প্রদান করে। তবে বদরুদ্দীন উমর এই পুরস্কার গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান।

তিনি শুধু একজন লেখক বা রাজনীতিক ছিলেন না—ছিলেন মুক্তবুদ্ধি, ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের এক নির্ভীক কণ্ঠস্বর। তার চিন্তা ও লেখনী আজও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক চর্চায় প্রাসঙ্গিক।

ইএইচপি

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত