ঢাকা, শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১ ভাদ্র ১৪৩২

ইউসিবির সংস্কার প্রক্রিয়ায় বাধা: প্রতারণার দায়ে ছয়জনকে জরিমানা

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৬ ০০:১৬:৩৫

ইউসিবির সংস্কার প্রক্রিয়ায় বাধা: প্রতারণার দায়ে ছয়জনকে জরিমানা

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতারণার মাধ্যমে রিট পিটিশন দাখিল করে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসির (ইউসিবি) সংস্কার কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ছয় ব্যক্তিকে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আদালত তাঁদের ভবিষ্যতে এ বিষয়ে কোনো আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন।

দণ্ডিত ব্যক্তিরা হলেন—এম এ সবুর, বশির আহমেদ, শওকত আজিজ রাসেল, বজল আহমেদ, আহমেদ আরিফ বিল্লাহ ও সুজন চন্দ্র নাথ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের নেতৃত্বাধীন ইউসিবির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়। পরবর্তীতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক মামলায় গ্রুপটির ২৩ জনের শেয়ার জব্দ করার নির্দেশও জারি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গ্রুপটির একটি অংশ ২০২৫ সালের জুলাইয়ে ব্যাংকের ১০ শতাংশের বেশি শেয়ারহোল্ডার দাবি করে কোম্পানিজ অ্যাক্ট, ১৯৯৪–এর ২৩৩ ধারার অধীনে রিট পিটিশন করে।

তাঁরা পরিচালনা পর্ষদের পুনর্গঠন, বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ও সংশ্লিষ্ট এজেন্ডার বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানান। প্রাথমিকভাবে হাইকোর্ট এজিএম স্থগিতের নির্দেশ দিলেও, আপিল বিভাগের চেম্বার জজ পরে সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার অনুমতি দেন।

সম্প্রতি ইউসিবির আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান আদালতকে জানান, রিটকারীদের মধ্যে কয়েকজন দেশের বাইরে অবস্থান করলেও তাঁরা স্বশরীরে উপস্থিত থাকার শপথনামা জমা দিয়েছেন। এতে শপথ কমিশনার ও আদালতকে প্রতারিত করার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এছাড়া ন্যূনতম শেয়ারহোল্ডিংয়ের যোগ্যতা সম্পর্কেও মিথ্যা তথ্য প্রদান করা হয়েছে, যার উদ্দেশ্য ছিল ব্যাংকের সংস্কারপ্রক্রিয়া ব্যাহত করা।

অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত রিটকারীদের মোট ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করেন। এর মধ্যে ১২ লাখ টাকা ইউসিবিকে এবং ৩ লাখ টাকা সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ও মার্শাল অফিসে জমা দিতে হবে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে একই বিষয়ে নতুন করে মামলা দায়েরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

ইউসিবির পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা আদালতকে জানান, পিটিশনকারীদের কার্যক্রম কেবল প্রতারণাই নয়, বরং এটি ব্যাংকের পুনর্গঠনপ্রক্রিয়া ব্যাহত করার একটি সুস্পষ্ট চেষ্টা। তাঁদের মতে, এ রায় শুধু আর্থিক জরিমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং সংশ্লিষ্টদের ব্যক্তিগত সুনামেও বড় ধরনের আঘাত হেনেছে।

খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, এ সিদ্ধান্ত ব্যাংকিং খাতে একটি শক্ত বার্তা পাঠাবে। ভবিষ্যতে সংস্কার প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়ার যেকোনো প্রচেষ্টা আদালতের কঠোর নজরদারির মধ্যে থাকবে এবং দোষীদের দায় বহন করতে হবে।

বর্তমানে ইউসিবি সক্রিয়ভাবে সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে। ব্যাংকটির লক্ষ্য আমানতকারীদের আস্থা পুনর্গঠন ও আর্থিক স্থিতিশীলতা জোরদার করা। ইতিমধ্যে চলতি বছরের প্রথম আট মাসে ব্যাংকটি ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি নেট ডিপোজিট প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে এবং নতুন করে ৪ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে—যা ব্যাংকের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড।

এএসএম/

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত