ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ ভাদ্র ১৪৩২
ভোটের আগেই কেন এত গাড়ি? পর্দার আড়ালে কী চলছে?

নিজস্ব প্রতিবেদক:পরবর্তী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য ৬০টি বিলাসবহুল মিতসুবিশি পাজেরো কিউএক্স (২৪২৭ সিসি) মডেলের গাড়ি কেনার প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রতিটি গাড়ির দাম ধরা হয়েছে এক কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এই গাড়িগুলো কিনতে ব্যয় হবে প্রায় ১০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
এই ক্রয় প্রক্রিয়া শুধু মন্ত্রীদের গাড়ি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের জন্য আরও ২২০টি গাড়ি কেনার প্রক্রিয়া চলছে। এর মধ্যে রয়েছে ১৯৫টি পাজেরো জিপ ও ২৫টি মাইক্রোবাস। সব মিলিয়ে ২৮০টি গাড়ি কিনতে সরকারের খরচ হবে প্রায় ৪৪৪ কোটি ৮৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের পর গঠিত নতুন সরকারের মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের ব্যবহারের জন্য এসব গাড়ি কেনা হচ্ছে। গাড়িগুলো সরবরাহ করবে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। সরাসরি ক্রয় প্রক্রিয়ায় এসব গাড়ি কিনবে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর, যা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি প্রতিষ্ঠান।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ব্যবহৃত গাড়িগুলো ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কেনা, যেগুলো নিয়মিত মেরামত করতে হয়। ফলে সময় ও অর্থ দুই দিক থেকেই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে সরকার। এই কারণেই নতুন গাড়ি কেনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
অর্থ বিভাগ এ প্রস্তাবে সম্মতি দিলেও এতে বেশ কয়েকটি শর্ত সংযুক্ত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে—জিপ ও মাইক্রোবাসগুলো ‘প্রাধিকারভুক্ত’ হিসেবে বিবেচিত হবে, পুরোনো গাড়ি অকেজো ঘোষণার প্রমাণপত্র দিতে হবে, এবং ক্রয় প্রক্রিয়ায় পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন-২০০৬ ও বিধিমালা-২০০৮ অনুসরণ করতে হবে।
তবে এখানেই উঠছে বড় প্রশ্ন। কারণ, গত ৮ জুলাই জারি করা একটি সরকারি পরিপত্রে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছিল—বর্তমান বাজেটে সব ধরনের নতুন যানবাহন কেনা বন্ধ থাকবে। কেবলমাত্র ১০ বছরের বেশি পুরোনো গাড়ি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হলে তা অনুমোদনের শর্তে কেনা যাবে।
সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বর্তমানে ব্যবহৃত মন্ত্রীদের গাড়ির বয়স ৯ বছর—তাহলে এই ক্ষেত্রে পরিপত্র লঙ্ঘিত হয়েছে কি না, তা নিয়ে উঠছে সমালোচনা।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন,"পরবর্তী সরকারের জন্য গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত বর্তমান সরকারের নেওয়া অনুচিত। এটি একটি অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নয়। এতে ব্যয়সংকোচন নীতিরও সুস্পষ্ট ব্যত্যয় ঘটেছে।"
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বিদেশে থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অর্থ সচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
অবশ্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান বলেন,"নিয়ম অনুযায়ী, এসব গাড়ির মেয়াদ শেষ হয়েছে, তাই নতুন গাড়ি কেনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।"
তবে পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে নাগরিক সমাজ ও নীতিনির্ধারকদের মধ্যে যে প্রশ্ন উঠেছে, তা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। নির্বাচনপূর্ব অন্তর্বর্তী সময়ে এমন ব্যয়বহুল সিদ্ধান্ত কতটা যৌক্তিক—তা নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক।
নয়ন
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে শেয়ারবাজারের ১১ কোম্পানিতে
- কোম্পানি পুরোদমে উৎপাদনে, তারপরও শঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা!
- বিও অ্যাকাউন্টের ফি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের সুখবর দিল বিএসইসি
- মার্জারের সাফল্যে উজ্জ্বল ফার কেমিক্যাল
- তালিকাভুক্ত কোম্পানির ১৫ লাখ শেয়ার কেনার ঘোষণা
- শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পর প্রথম ‘নো ডিভিডেন্ড’
- এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় ৫ কোম্পানি
- তদন্তের খবরে থামছে দুই কোম্পানির ঘোড়দৌড়
- শেয়ারবাজারে মিডল্যান্ড ব্যাংকের নতুন যাত্রা
- আট কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কাড়াকাড়ি
- নতুন উচ্চতায় অগ্রসর হচ্ছে দেশের শেয়ারবাজার
- ডেনিম উৎপাদন বাড়াতে এভিন্স টেক্সটাইলসের বড় পরিকল্পনা
- সর্বনিম্ন দামে আটকে গেল ৭ কোম্পানির শেয়ার
- চলতি সপ্তাহে ঘোষণা আসছে ৫ কোম্পানির ডিভিডেন্ড-ইপিএস
- পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কার পথে এগোচ্ছে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার