ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ২ কার্তিক ১৪৩২
ইসলামী ব্যাংকের সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা আদায়ে অদৃশ্য বাধা

দেশের অন্যতম বৃহত্তম বেসরকারি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, একটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বছরের পর বছর ধরে খেলাপি থাকা এস আলম গ্রুপের কাছে থাকা ১০ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা ঋণ আদায়ে ব্যাংকটি এখন নানা আইনি জটিলতা ও হুমকির শিকার হচ্ছে। মূলত এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ এই ঋণের বেশিরভাগ অংশের জন্য দায়ী। ইসলামী ব্যাংকের অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানটি বন্ধক রাখা সম্পত্তিগুলো নিলামে বিক্রি করা আটকাতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে।
ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রাম খাতুনগঞ্জ করপোরেট শাখার কর্মকর্তারা জানান, ঋণের বিপরীতে বন্ধক রাখা সম্পত্তি নিলামে তোলার প্রথম চেষ্টা ব্যর্থ হয়। তাদের অভিযোগ, সম্ভাব্য ক্রেতাদের নানাভাবে হুমকি ও চাপ দিয়ে নিলামে অংশ নেওয়া থেকে বিরত রাখা হয়েছে। যখন দ্বিতীয়বার নিলামের ঘোষণা দেওয়া হয়, তখন কোম্পানিটি উল্টো আদালতে মামলা করে বসে। তাদের দাবি, এই সম্পত্তিগুলো কখনোই বন্ধক রাখা হয়নি।
ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ জামাল উদ্দিন এই পদক্ষেপকে "সময়ক্ষেপণের কৌশল" হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, "এস আলম গ্রুপের চাপ এবং প্রচারণার কারণে কোনো ক্রেতা আসেনি। বন্ধক সংক্রান্ত সব আইনি নথি আমাদের কাছে আছে। আমরা খুব শিগগিরই আরেকটি নিলাম ডাকব, এবং যদি সেটিও ব্যর্থ হয়, তাহলে টাকা আদায়ের জন্য আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।"
ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, বন্ধক রাখা সম্পত্তি বিক্রি করে সর্বোচ্চ ২ হাজার কোটি টাকা পাওয়া যেতে পারে, যা মোট ঋণের তুলনায় খুবই সামান্য। বাকি ঋণ আদায়ের জন্য ব্যাংককে এস আলম গ্রুপের অন্য সম্পত্তিগুলোও বিক্রি করতে হতে পারে, যেগুলো সরাসরি ব্যাংকের কাছে বন্ধক রাখা হয়নি।
এক কর্মকর্তা জানান, ২০১০ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে এস আলম রিফাইন্ড সুগার প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল, যার এক কিস্তিও তারা পরিশোধ করেনি। ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত সুদসহ এই ঋণের পরিমাণ বেড়ে ১০ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
ব্যাংকিং আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার ইমরান আহমেদ ভূঁইয়া জানান, আইন অনুযায়ী ঋণের বিপরীতে বন্ধকি সম্পত্তির মূল্য ঋণের মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। তিনি অভিযোগ করেন, এস আলম গ্রুপের ঋণের বিপরীতে বন্ধক রাখা সম্পত্তির মূল্য শত শত গুণ বেশি দেখানো হয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রে জাল দলিল ব্যবহার করা হয়েছে, যা পুরো ঋণ আদায়ের প্রক্রিয়াকে অত্যন্ত জটিল করে তুলেছে।
অন্যদিকে, এস আলম গ্রুপের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহদী ইবনে হাসান দাবি করেন, ব্যাংকের কোনো আইনি অধিকার নেই। তার মতে, "ব্যাংক বেআইনিভাবে কিছু সম্পত্তি নিলামের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা কোনোদিন বন্ধক রাখা হয়নি। আমাদের মক্কেল এই ঋণের জন্য দায়ী নন।" তবে, বন্ধক সংক্রান্ত নথি থাকা সত্ত্বেও কেন মামলা করা হয়েছে, এই বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এদিকে, ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওমর ফারুক খান বলেন, তাদের কাছে বন্ধকের সব আইনি নথি আছে এবং এস আলম গ্রুপের দাবি "ভিত্তিহীন"। তিনি নিশ্চিত করেন যে, যদি বন্ধক রাখা সম্পত্তি বিক্রি করে পুরো ঋণ আদায় না হয়, তবে আইন অনুযায়ী তারা এস আলম গ্রুপের অন্যান্য চিহ্নিত সম্পত্তি দখল করে বকেয়া আদায়ের ব্যবস্থা নেবেন।
শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তান, খেলাটি সরাসরি দেখুন (LIVE)
- বাংলাদেশ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা, খেলাটি সরাসরি দেখুন (LIVE)
- ৪০ বছরের ইতিহাসে ডিভিডেন্ডে নজির ভাঙল এপেক্স ট্যানারি
- ডিভিডেন্ড ঘোষণায় রেকর্ড ভাঙ্গল লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স!
- শেয়ারবাজারে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার নতুন তদন্তে বিএসইসি
- একদিনে 'এ' ক্যাটাগরিতে ফিরল দুই কোম্পানি
- মার্জিন ঋণ আতঙ্কে হঠাৎ ধস নামলো শেয়ারবাজারে!
- বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তান,ফ্রিতে দেখবেন যেভাবে
- বস্ত্র খাতের ৮ কোম্পানিতে বেড়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করবে তালিকাভুক্ত ৪ কোম্পানি
- মার্জারের দুই ব্যাংকে ফেঁসে গেল প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করবে তালিকাভুক্ত তিন কোম্পানি
- ১৪ অক্টোবর: এক নজরে শেয়ারবাজারের ২০ খবর
- পাকিস্তান বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা: নোমান আলীর শিকার মার্করাম
- শেয়ারবাজার কি ধ্বংসের পথে? আর কত রক্তক্ষরণ?