ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২

৫০% শুল্কে ভারতের রপ্তানি খাতে ধস, বন্ধ পোশাক উৎপাদন

ডুয়া নিউজ- আন্তর্জাতিক
২০২৫ আগস্ট ২৭ ১৪:৫৪:৪৬
৫০% শুল্কে ভারতের রপ্তানি খাতে ধস, বন্ধ পোশাক উৎপাদন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তে ভারতের রপ্তানি শিল্পে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে এসেছে। আজ বুধবার থেকে কার্যকর হওয়া এই শুল্কের জেরে ভারতের তিনটি প্রধান শহর - তিরুপুর, নয়ডা এবং সুরাটের টেক্সটাইল ও পোশাক কারখানাগুলো উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়্যারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনস (এফআইইও) মঙ্গলবার জানিয়েছে যে অতিরিক্ত শুল্কের কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ভারতীয় রপ্তানিকারকদের পক্ষে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা ধরে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে তারা সরকারের কাছে অবিলম্বে সহায়তার আবেদন জানিয়েছে।

এদিকে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ফলে এশিয়া মহাদেশে ভারত এখন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সর্বোচ্চ শুল্কের বোঝা বহনকারী দেশ। এফআইইও সভাপতি এস.সি. রালহান এই পরিস্থিতিকে "বড় ধাক্কা" আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এর ফলে ভারতীয় রপ্তানি পণ্যের প্রবাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, ৩০-৩৫ শতাংশ মূল্যহীনতার কারণে ভারতীয় পণ্য এখন চীন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ফিলিপাইন এবং অন্যান্য দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশের পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না।

রালহান জানান, যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, যার ফলে মোট শুল্কহার সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশে পৌঁছেছে। এই পদক্ষেপ পোশাকশিল্প খাতে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে, যেখানে ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ ইতোমধ্যে কম দামের কারণে বাজারে এগিয়ে রয়েছে।

সংগঠনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারতের সামুদ্রিক খাদ্য, বিশেষত চিংড়ির ৪০ শতাংশ রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। শুল্ক বৃদ্ধির কারণে এই খাতে মজুত ক্ষতি, সরবরাহ ব্যবস্থায় বিপর্যয় এবং চাষিদের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

এছাড়াও, চামড়া, সিরামিক, রাসায়নিক, হস্তশিল্প, কার্পেটসহ অন্যান্য শ্রমনির্ভর খাতগুলো তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে। ইউরোপ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং মেক্সিকোর পণ্যের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া তাদের জন্য কঠিন হয়ে উঠবে। রপ্তানি খাত এখন অর্ডার বাতিল, সরবরাহে দেরি এবং মূল্য প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার মতো মারাত্মক সংকটে ভুগছে।সরকারের কাছে সহায়তার আবেদন এবং ভবিষ্যৎ উদ্বেগ

পরিস্থিতি সামাল দিতে রপ্তানিকারক সংগঠনের প্রধান সরকারকে সুদ সহায়তা প্রকল্প এবং রপ্তানি ঋণ সহায়তা প্রদানের আহ্বান জানিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, পোশাক, টেক্সটাইল, রত্ন ও গয়না, চিংড়ি, কার্পেট এবং আসবাবপত্রের মতো নিম্ন-লাভজনক ও শ্রমনির্ভর পণ্যগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অযোগ্য হয়ে পড়বে। এর ফলে নিম্নকুশলী শ্রমিকদের কর্মসংস্থান মারাত্মকভাবে ঝুঁকির মুখে পড়বে। ভারত ইতোমধ্যে বেকারত্ব সংকট, দক্ষ কর্মী ছাঁটাই এবং স্থবির মজুরির চাপের মধ্যে রয়েছে।

আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের পণ্য রপ্তানির মূল্য আগের বছরের তুলনায় ৪০-৪৫ শতাংশ কমে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে মোট রপ্তানির দুই-তৃতীয়াংশই ৫০ শতাংশ শুল্কের আওতায় পড়বে, ফলে কয়েকটি খাতে কার্যকর শুল্কহার ৬০ শতাংশেরও বেশি হতে পারে।

গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (জিটিআরআই) হিসাব করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের পণ্য রপ্তানি ২০২৪-২৫ সালের প্রায় ৮৭ বিলিয়ন ডলার থেকে চলতি বছরে ৪৯.৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসতে পারে।

দ্য ওয়্যার জানিয়েছে, নতুন শুল্ক কাঠামোয় বোনা ও নিট পোশাক সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, পাশাপাশি অন্যান্য টেক্সটাইল খাতও মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হবে। কর বিশেষজ্ঞ বেদ জৈন প্রশ্ন তুলেছেন, "তিন দেশের দ্বন্দ্বে এক দেশ শুধু মধ্যস্থতাকারী হয়েও যদি শুল্কচাপ বহন করে, সেটা কতটা যৌক্তিক?"

এদিকে, কূটনীতিকদের একাংশ মোদি সরকার এবং বিশেষ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদে এই বিষয়টি সঠিকভাবে সামলাতে ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন। সাবেক পররাষ্ট্র সচিব বিবেক কাটজু বলেছেন, এ বিষয়ে ভারতের জনগণের কাছে সরকারের জবাবদিহি করা উচিত।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত