ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২
২৬ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার

আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছরের শাসনামলে দেশের ব্যাংকিং খাতে যে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে, তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এর অংশ হিসেবে ২৬টি সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান, পরিচালক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইতিমধ্যেই তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও সম্পদের তথ্য তলবসহ তদন্ত শুরু করেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ গত ১৯ আগস্ট দুদক চেয়ারম্যানকে পাঠানো এক চিঠিতে জানায়, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত (সরকার পতনের দিন) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর এবং বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
একই চিঠিতে ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক— সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক—এর তৎকালীন বোর্ড চেয়ারম্যান, পরিচালক ও এমডিদের বিরুদ্ধেও তদন্তের কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও, ব্যাপক ঋণ কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত ১৮টি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাদেরও এই তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে।
দুদক ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংকের তিন সাবেক গভর্নর— ড. আতিউর রহমান, ড. ফজলে কবির এবং আবদুর রউফ তালুকদার—সহ ছয়জন সাবেক ডেপুটি গভর্নরের ব্যাংক হিসাবের তথ্য তলব করেছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং ভবিষ্যতে বড় আকারের দুর্নীতি প্রতিরোধ করার জন্য এটি সরকারের একটি বড় সংস্কার উদ্যোগ। তারা নিশ্চিত করেছেন যে, সম্প্রতি পুনর্গঠিত বা একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকা সব বেসরকারি ব্যাংকও এই তদন্তের আওতায় রয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত হলমার্ক কেলেঙ্কারি, ব্যাপক অর্থ আত্মসাৎ এবং অর্থ পাচারের মতো কিছু ভয়াবহ আর্থিক কেলেঙ্কারির সাক্ষী হয়েছে। বেসিক ব্যাংক এবং জনতা ব্যাংক বিশাল অঙ্কের খেলাপি ঋণের কারণে কার্যত ভেঙে পড়েছে। একইসঙ্গে, পদ্ধতিগত অনিয়মের কারণে ১৮টি বেসরকারি ব্যাংকও দুর্বল হয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে এস আলম গ্রুপের ছয়টি ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি ব্যাংক এখন আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে হিমশিম খাচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র অনুযায়ী, ৫ আগস্টের পর যে ১৫টি বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে, সেগুলো এখন তদন্তাধীন। এই ব্যাংকগুলো হলো: ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), আইএফআইসি ব্যাংক, ইউসিবি, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক (এনআরবিসি), মেঘনা ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেড (বিসিবিএল) এবং প্রিমিয়ার ব্যাংক।
এছাড়াও, এবি ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক এবং আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক—এই তিনটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলছে, যাদের পর্ষদ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গঠিত হয়েছিল। যেগুলোও লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছিল।
অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, "ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা যোগসাজশ করে টাকা আত্মসাৎ ও পাচার করেছেন। এক ব্যাংকের চেয়ারম্যান, যিনি একসময় আমার ছাত্র ছিলেন, তিনি আমার কাছে স্বীকার করেছেন, তার ব্যাংকের ৯৫শতাংশ ঋণই খেলাপি—অর্থাৎ মালিক ও পরিচালকরা প্রায় পুরো টাকাই তুলে নিয়েছেন।" এই মন্তব্যই দেশের ব্যাংকিং খাতের ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- তিন কোম্পানির কারখানা বন্ধ, ক্ষোভ বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের
- আইসিবি’র বিশেষ তহবিলের মেয়াদ ২০৩২ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি
- কেয়া কসমেটিক্সের ৮ হাজার কোটি টাকা উধাও, চার ব্যাংককে তলব
- সম্ভাবনার নতুন দিগন্তে শেয়ারবাজারের খান ব্রাদার্স
- ব্লুমবার্গের টেকসই তালিকায় বাংলাদেশের ১১ তালিকাভুক্ত কোম্পানি
- মূলধন ঘাটতিতে দুই ব্রোকারেজ হাউজ, ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ
- দুই খবরে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ শেয়ারের চমক
- চলতি বছর শেয়ারবাজারে আসছে রাষ্ট্রায়াত্ব দুই প্রতিষ্ঠান
- সাকিবের মোনার্কসহ ৮ ব্রোকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ
- ২৩ আগস্ট : শেয়ারবাজারের সেরা ৮ খবর
- হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে প্রতারণা, বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করল ডিএসই
- বিএসইসির নতুন মার্জিন বিধিমালার খসড়া অনুমোদন
- বিমা আইন সংস্কার: বিনিয়োগ ও আস্থায় নতুন দিগন্ত
- কোম্পানির অস্বাভাবিক শেয়ারদর: ডিএসইর সতর্কবার্তা
- শেয়ারবাজারের জন্য সুখবর: কমছে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদ