ঢাকা, বুধবার, ২৭ আগস্ট ২০২৫, ১২ ভাদ্র ১৪৩২

মার্কিন শুল্কের আঘাতে বিশ্বের বিখ্যাত হীরা ব্যবসায় ধস

ডুয়া নিউজ- আন্তর্জাতিক
২০২৫ আগস্ট ২৬ ১৬:১৭:৪৭
মার্কিন শুল্কের আঘাতে বিশ্বের বিখ্যাত হীরা ব্যবসায় ধস

ভারতের গুজরাটের সুরাট ডায়মন্ড বোরস, যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় অফিস কমপ্লেক্স হিসেবে পরিচিত, এখন অস্বাভাবিক নীরবতায় ঢেকে গেছে। আকারে এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেন্টাগন ভবনের চেয়েও বড় হলেও, ব্যবসায়িক মন্দার কারণে সেখানে কার্যক্রম কার্যত থমকে আছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের তথ্যমতে, চীনে চাহিদা কমে যাওয়ায় বর্তমানে ভারতের হীরা রপ্তানি নেমে এসেছে গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে। এর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক আরোপ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। অথচ আমেরিকাই ভারতের হীরার সবচেয়ে বড় বাজার—যেখানে প্রতিবছর প্রায় ২৮.৫০ বিলিয়ন ডলারের হীরা ও গয়না রপ্তানি হয়। ভারতের মোট রপ্তানির এক-তৃতীয়াংশই যায় যুক্তরাষ্ট্রে।

বিশ্বের ৮০ শতাংশের বেশি অপরিশোধিত হীরা সুরাটে কেটে-ঘষে প্রস্তুত করা হয়। সাধারণত বছরের এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিসমাস ও নিউ ইয়ারকে সামনে রেখে বাড়তি অর্ডার মেটাতে সুরাটের কর্মশালাগুলো দিনরাত ব্যস্ত থাকে। কিন্তু এ বছর দৃশ্যপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। মার্কিন শুল্কের ভয়ে ক্রেতারা অর্ডার দিচ্ছেন না, বড় রপ্তানিকারকরা ইতিমধ্যেই উৎপাদনের কিছু অংশ বতসোয়ানার মতো দেশে সরিয়ে নিচ্ছেন।

হীরার ব্যবসায়ী হিতেশ প্যাটেল জানালেন, নতুন শুল্ক আরোপে বার্ষিক আয় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। অন্যদিকে জেম অ্যান্ড জুয়েলারি এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিলের (জিজেইপিসি) সহসভাপতি শৌনক পারিখ জানিয়েছেন, চাহিদা কমে যাওয়ায় কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনা হয়েছে। প্রায় পাঁচ হাজার ব্যবসায়ীর অফিস থাকার কথা থাকলেও এখন সক্রিয় রয়েছে মাত্র আড়াই শতাধিক।

পরিচয় গোপন রাখার শর্তে একজন মুম্বাই-ভিত্তিক ব্যবসায়ী রয়টার্সকে জানান, তিনি গত বছর সুরাট ডায়মন্ড বোরসে জায়গা কিনেছিলেন। কিন্তু এখনো সেখানে কার্যক্রম শুরু করেননি। তাঁর মতে, মার্কিন শুল্ক ব্যবসাকে নড়বড়ে করে দিয়েছে, তাই অতিরিক্ত ঝুঁকি নিয়ে মুম্বাই থেকে সুরাটে কার্যক্রম সরাতে তিনি দ্বিধাগ্রস্ত।

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই ভবনকে ভারতের নতুন শক্তি ও প্রতিশ্রুতির প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। ঝকঝকে কাচের দেয়াল ঘেরা ৬ দশমিক ৭ মিলিয়ন বর্গফুট আয়তনের ১৫ তলা বিশাল এই স্থাপনাতে ব্যাংক, কাস্টমস অফিস, সুরক্ষিত ভল্ট থেকে শুরু করে গয়নার শপিং মল পর্যন্ত সবই আছে। এক ছাদের নিচে বৈশ্বিক হীরা ব্যবসার সব সুবিধাই এখানে রাখা হয়েছে।

কিন্তু বাস্তবতা এখন ভিন্ন। শৈলেশ মাঙ্গুকিয়া, যিনি সুরাটে হীরা কাটিং ও পলিশিং ইউনিট চালান, জানালেন, গত বছর যে হীরার দাম ছিল ২৫ হাজার রুপি, এবার সেটি ১৮ হাজার রুপিতেও বিক্রি করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়ে তিনি কর্মী ছাঁটাই করেছেন—আগে তাঁর অধীনে ২৫০ জন কাজ করলেও এখন তা অর্ধেকে নেমে এসেছে।

জিজেইপিসির হিসাব বলছে, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শুল্ক কমানোর কোনো সমঝোতা না হলে অন্তত দেড় থেকে দুই লাখ কর্মী চাকরি হারাতে পারেন। এ অবস্থায় মার্কিন ক্রেতারা ইসরায়েল, বেলজিয়াম বা বতসোয়ানার দিকে ঝুঁকছেন। অন্যদিকে ভারতীয় রপ্তানিকারকেরা এশিয়া, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে বাজার খোঁজার চেষ্টা করছেন, যদিও তা সহজ কাজ নয়। ফলে নগদ প্রবাহ ধরে রাখতে অনেক প্রতিষ্ঠান কাঁচা হীরা কেনা কমিয়ে দিয়েছে, আর ছোট ছোট ইউনিটগুলো বাধ্য হয়ে বড় ধরনের ছাড়ে হীরা বিক্রি করছে।

তবে এই সংকটের মাঝেও কিছুটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে অভ্যন্তরীণ বাজারে। ভেনাস জুয়েলের অংশীদার হিতেশ শাহ বলেন, ভারত এখন চীনের জায়গা নিয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম হীরা বাজারে পরিণত হয়েছে। তাঁর মতে, গত ১০–১৫ দিনে বিক্রি কিছুটা কমলেও, স্থানীয় চাহিদা এখনও বাড়ছে এবং সেটিই মার্কিন ক্ষতির কিছুটা ভারসাম্য রক্ষা করছে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত