ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ২৭ কার্তিক ১৪৩২

নির্বাচন ও সেনাবাহিনী: স্থিতিশীলতা ও আস্থায় নতুন চ্যালেঞ্জ

২০২৫ আগস্ট ২০ ২২:০৩:৫৯

নির্বাচন ও সেনাবাহিনী: স্থিতিশীলতা ও আস্থায় নতুন চ্যালেঞ্জ

আবদুস সাত্তার মিয়াজী: আগামী ফেব্রুয়ারিতে রমজানের আগে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন, এবারের নির্বাচনে তার সেনারা একটি ইতিবাচক পার্থক্য তৈরি করবে। মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) ঢাকা সেনানিবাসে অফিসারদের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, দেশ একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং তার বাহিনী সরকারকে এই কাজে সহায়তা করতে পুরোপুরি প্রস্তুত।

নির্বাচনে সেনাবাহিনীর ভূমিকা সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৯১ সাল থেকে তারা বেশ কয়েকটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করেছে। তবে এর বিপরীত চিত্রও রয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে শেখ হাসিনা তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রেখেছিলেন, যেখানে সেনাবাহিনী নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল। গত ৫ আগস্ট একটি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। এর মধ্য দিয়ে এটি প্রমাণিত হয়েছে যে, নেতৃত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে সেনাপ্রধানরা তাদের বাহিনীকে নেতৃত্ব দেন, তারাই তাদের ভূমিকা নির্ধারণ করেন।

জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান স্পষ্ট করে দিয়েছেন, আসন্ন নির্বাচনে তার সেনারা ভিন্ন ভূমিকা পালন করবে। মঙ্গলবার তিনি সেনাবাহিনীর সব সদস্যকে আইন অনুযায়ী নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান। হাসিনার পতনের পর পুলিশের দুর্বল অবস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে আসন্ন নির্বাচনে সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এবারের নির্বাচনে প্রায় এক লাখ সেনা সদস্য মোতায়েন করা হতে পারে, যা অতীতের যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে অনেক বেশি।

নির্বাচন কমিশনও সেনাবাহিনীর ভূমিকার গুরুত্ব বিবেচনা করে নির্বাচনী আইনে পরিবর্তন আনার প্রস্তাব দিয়েছে। এই পরিবর্তন কার্যকর হলে পুলিশ সদস্যদের মতো সেনাবাহিনীও পরোয়ানা ছাড়াই ঝামেলা সৃষ্টিকারীদের গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা পাবে। এই ক্ষমতা ২০০১ সালের নির্বাচন থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত কার্যকর ছিল। তবে ২০০৯ সালে হাসিনা সরকার গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে এই ক্ষমতা বাতিল করে দেয়। এর ফলে গত তিন বিতর্কিত নির্বাচনে সেনা সদস্যদের ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশের ওপর নির্ভর করতে হয়েছিল, যা তাদের যথাযথ ভূমিকা পালনে বাধা দেয় এবং তাদের ভাবমূর্তিকে কিছুটা ম্লান করে।

২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে ছবিসহ ভোটার তালিকা তৈরি করে সেনাবাহিনী একটি অসাধারণ কাজ করেছিল, যা ভোটার তালিকা নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্ক দূর করেছিল। আর গত জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এবং এর পরে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সেনাবাহিনী ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসও ইতিমধ্যে স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তার সরকার পরবর্তী নির্বাচনকে "সর্বকালের সেরা এবং ঐতিহাসিক" করতে পরিকল্পনা করছে, যা জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এবং তার বাহিনীর জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং ইতিবাচক স্বীকৃতির সূচনা হিসেবে ধরা হচ্ছে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত