ঢাকা, শনিবার, ১৬ আগস্ট ২০২৫, ১ ভাদ্র ১৪৩২

ঢাবি ক্যাম্পাসকে এখন মৃত্যুপুরী মনে হচ্ছে : উমামা ফাতেমা

ডুয়া নিউজ- বিশ্ববিদ্যালয়
২০২৫ আগস্ট ১৬ ১৪:৪২:৩০
ঢাবি ক্যাম্পাসকে এখন মৃত্যুপুরী মনে হচ্ছে : উমামা ফাতেমা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ডামাডোলের বাইরে ক্যাম্পাসকে এখন মৃত্যুপুরী মনে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র ও সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা।

শনিবার (১৬ আগস্ট) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে তিনি এই মন্তব্য করেন।

উমামা ফাতেমা লিখেছেন, গত এক মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে জ্বরের প্রকোপ শুরু হয়েছে। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া টেস্ট নেগেটিভ এসেছে। কিন্তু প্রচন্ড জ্বর, দূর্বলতা, অরুচি তৈরি হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো প্রকার পাত্তা নেই। জ্বরের সময়ে ঢাবি ক্যাম্পাসের খাবার খাওয়া যায় না। শরীর আরও দূর্বল হয়ে পড়ে। এই গরমে মহামারির মতো পরিস্থিতি হলেও ছাত্ররা অসুস্থ হচ্ছে কিন্তু প্রশাসনের সামান্য তদারকি নেই।

তিনি বলেন, “গতকাল সকালে এই বমি ও দূর্বলতা নিয়ে ঢাবি মেডিকেলে গেলাম। অসুস্থতার থেকেও খারাপ লাগছিল এই ক্যাম্পাসে প্রতি পদে পদে বিমাতাসুলভ আচরণ, নিজেরই সন্তানদের কতটা অপর করে তুলতে পারে।”

উমামা ফাতেমা আরও উল্লেখ করেন, এরপর ঢাবি মেডিকেল থেকে তাকে এক অ্যাম্বুলেন্সে ইবনে সিনা হাসপাতালে নেয়া হয়। “অ্যাম্বুলেন্সে একটি মাত্র ফ্যান ছিল, সেটা ড্রাইভারের জন্য। পুরো সময় হাঁসফাঁস লাগছিল। একটা মান্ধাত্ত্বার আমলের পরিত্যক্ত যন্ত্রাংশকে অ্যাম্বুলেন্সের নামে চালিয়ে দেয়ার ধৃষ্টতা শুধু আমাদের প্রশাসনই করতে পারে।”

তিনি জানান, এই পরিস্থিতির মধ্যে শুনেছেন বঙ্গমাতা হলের ছোটবোন লিজার মৃত্যুর সংবাদ। নিজের অসুস্থতার মধ্যেই এই মৃত্যু প্রচন্ড অসহায়ত্ব তৈরি করেছিল। মুহূর্তের মধ্যে ক্যাম্পাসের সবকিছু ওলটপালট হয়ে যায়।

রাতে আবার অসুস্থ হলে ঢাবি মেডিকেলে যান। সেখানে দেখেন বিজয়-৭১ হলের ছোটভাই তানিম এবং জিদানকে নিয়ে আসা হয়েছে, যাদের একই ধরনের অসুস্থতা। “তানিমকে স্টেবল করার জন্য স্যালাইন দেওয়া হলো। ডাকসুর ডামাডোলের বাইরে মনে হচ্ছে ক্যাম্পাস এখন একটা মৃত্যুপুরী। হরেদরে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হচ্ছে। এই ক্যাম্পাসে এমন ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে, সুস্থ মানুষকেও শেষ করে ফেলে ভিতর থেকে।”

উমামা ফাতেমা বলেন, “রাতে ছোটবোন লিজার কথাই বারবার মনে হচ্ছিল। সে এতদিন ধরে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত, তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগ কি? তাকে তো সন্তানের মতো আগলে রাখার কথা। কোথায় কি! এই অথর্ব প্রশাসনিক ব্যবস্থার থেকে আমাদের মুক্তি দরকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ছাত্রদের জন্য গড়ে তুলতে না পারলে এই ক্যাম্পাসের ভগ্নদশা দেখার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, এসব ভাবনার মধ্যে চোখে পড়েছে Ummay Suhala-র পোস্ট। “কাল সারাদিন ঘুরে বেড়ানো চিন্তাগুলো তার কথায় উঠে এসেছে। রাত প্রায় ১টা বাজে হঠাৎ প্রচন্ড অসুস্থ পড়েছিলাম। সেই রাতে উপলব্ধি করলাম এই জঘন্য ভয়াবহ বাস্তবতা। প্রচণ্ড পেট ব্যথায় অসার হয়ে যাওয়া অবস্থায় ফ্রেন্ড ও রুমমেটরা আমাকে ধরে হল গেটে নিয়ে গেল। কোনো স্ট্রেচার ছিল না। নামেমাত্র একটি হুইলচেয়ারও খুঁজে পাওয়া যায়নি।”

১০০ বার কল দেওয়ার পর হাউস টিউটর এক ঘণ্টা পর এসে জানান, “তোমার লোকাল গার্ডিয়ান না থাকায় হাসপাতালে নেওয়া যাবে না। এত রাতে লোকাল গার্ডিয়ান সাভার থেকে আসবে, তারপর নিয়ে যাওয়া হবে!”

তিনি বলেন, অবস্থা যখন ভয়াবহ তখন কলাভবনের ডিন এবং তার ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো: সিদ্দিকুর রহমান খান স্যারের উদ্যোগে প্রভোস্ট ম্যামকে কল দেওয়ার পর হল গেট খুলে দেয়। এরপর তাকে হলের বাইরে নেওয়া হয়। সেই রাতে ঢাকা মেডিকেল থেকে সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে আবার ঢাকা মেডিকেল। অবশেষে বারডেমে ভর্তি করা হয়।

“২ ঘণ্টা পর লোকাল গার্ডিয়ান আসে। প্রতিটি হলে সিক বয়/গার্ল থাকে নামেমাত্র কোনো দায়িত্ব পালন করে না। এর সমাধান কি? আজও কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি।”

উমামা ফাতেমা শেষে বলেন, “আজ বঙ্গমাতা হলের লিজা আপু মারা গেলেন। হয়তো আল্লাহ তাঁর হায়াত এই পর্যন্ত রেখেছিলেন। কিন্তু হল প্রশাসন বা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কোনো গাফিলতি ছিল না? অ্যাম্বুলেন্স সময়মতো কেন এলো না? হল প্রশাসন কেন জরুরি ব্যবস্থা নিল না?”

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত