ঢাকা, শনিবার, ৯ আগস্ট ২০২৫, ২৫ শ্রাবণ ১৪৩২

সেন্টমার্টিন ঘিরে মহাপরিকল্পনা

ডুয়া নিউজ- জাতীয়
২০২৫ আগস্ট ০৯ ১০:০৩:২৬
সেন্টমার্টিন ঘিরে মহাপরিকল্পনা

দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনকে ঘিরে মহাপরিকল্পনা প্রণয়নে কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার। দ্বীপটির উন্নয়ন ও সংরক্ষণে পরিকল্পনাটি চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। এর সঙ্গে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও স্থানীয়দের বিকল্প আয়ের সুযোগ তৈরির উদ্যোগও হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা দীপংকর বর।

তিনি আরও জানান, দ্বীপের প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে প্রকৃতির ক্ষতি কমিয়ে একে আবার সুস্থ ও প্রাণবন্ত করতে পর্যটন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণসহ নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

শুক্রবার মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত এক বছরে পরিবেশ সুরক্ষা, বন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় মন্ত্রণালয় বেশ কিছু যুগান্তকারী উদ্যোগ নিয়েছে। দূষণ কমাতে সারা দেশের শপিংমলগুলোতে নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করা হয়েছে। পলিথিন উৎপাদন কারখানা, কাঁচাবাজার ও অন্যান্য স্থানে এর ব্যবহার রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যৌথ অভিযান চলছে। পাশাপাশি পলিথিনের বিকল্প হিসেবে সাশ্রয়ী মূল্যে পাটের ব্যাগ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি যৌথ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে ‘জাতীয় বায়ুমান ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া ৮৩০টি অবৈধ ইটভাটা ভেঙে দেওয়া হয়েছে এবং ঢাকার সাভার ও আশুলিয়াকে ‘দূষিত বায়ুম-ল’ এলাকা হিসেবে ঘোষণার প্রক্রিয়া চলছে। অবৈধ সিসার কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং শব্দদূষণ প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে তরুণদের যুক্ত করা হয়েছে। গাজীপুরের গাছা খাল দূষণকারী ৯টি কারখানার সংযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে এবং সব পলিথিন উৎপাদনকারী কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পরিবেশ অধিদপ্তরের জন্য নতুন কর্মসূচি অনুমোদিত হয়েছে এবং এর নিজস্ব ৩৭টি অফিস ভবন নির্মাণের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।

পাহাড় সংরক্ষণের জন্য ১৬টি জেলার তালিকাভুক্ত পাহাড়ের তথ্য অনলাইন ডেটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং নিয়মিত নজরদারি চলছে। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের আওতায় ৩৫১ কোটি টাকার ৪১টি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। এ ছাড়া ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ’ চূড়ান্ত হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ডের ওপর আলোকপাত করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। কক্সবাজার ও সোনাদিয়ায় বিভিন্ন কাজে বরাদ্দকৃত ১০ হাজার ৩২২ একর বনভূমি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। পূর্বাচলে ১৪৪ একর এলাকাকে বিশেষ জীববৈচিত্র্য এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। গত এক বছরে বেদখল হওয়া ৫ হাজার ৯৩ একর বনভূমি পুনরুদ্ধার করে সেখানে আবার বনায়ন করা হয়েছে।

ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি গাছের চারা উৎপাদন ও রোপণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

মধুপুর শালবন পুনরুদ্ধারে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি হাতির চলাচলের জন্য করিডর তৈরি এবং জীববৈচিত্র্য বৃদ্ধি করতে চুনতি ও শেরপুরের বন পুনরুদ্ধারের কাজ চলছে। মানব-হাতি সংঘাত কমাতে গঠন করা হয়েছে ১৫৯টি ‘এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম (ইআরটি)’। বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় ময়ূর ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি বিপন্ন প্রজাতি সংরক্ষণ, জলাভূমি অভয়ারণ্য ঘোষণা এবং বন্যপ্রাণী অপরাধ দমনে ২৯৩টি অভিযানের মাধ্যমে ৫ হাজার ৬৮৪টি প্রাণী উদ্ধার করা হয়েছে।

জাতীয় উদ্যান ও ইকোপার্কগুলোতে প্লাস্টিক ব্যবহার ও পিকনিক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে বন্যপ্রাণী আইন আধুনিকীকরণসহ নতুন আইন, বিধি ও নির্দেশিকা প্রণয়ন প্রক্রিয়া চলছে। মন্ত্রণালয়ের মতে, এসব পদক্ষেপ দেশের পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এবং জলবায়ু সহনশীল ও টেকসই বাংলাদেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত