ঢাকা, শনিবার, ৯ আগস্ট ২০২৫, ২৫ শ্রাবণ ১৪৩২

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সির ঘটনায় আটক ৩

ডুয়া নিউজ- বিশ্ববিদ্যালয়
২০২৫ আগস্ট ০৮ ১৩:১৮:৩৬
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সির ঘটনায় আটক ৩

গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি দেওয়ার অভিযোগে তিনজনকে আটক করেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) চূড়ান্ত ভর্তি প্রক্রিয়ার সময় কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তির জন্য আসা এক শিক্ষার্থীকে সন্দেহ হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জানা যায়, তার নাম ওবায়েত হাসান আফিক এবং তিনি ময়মনসিংহের ত্রিশালের বাসিন্দা। তার ভর্তির রোল নম্বর ছিল ২০১৬৯৭।

জিজ্ঞাসাবাদে প্রক্সি জালিয়াতির বিষয়টি নিশ্চিত হলে আরও দুইজনের তথ্য বেরিয়ে আসে যাদের সঙ্গেও এই প্রতারণার যোগসূত্র রয়েছে বলে ধারণা করছে প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পুরো চক্রকে শনাক্ত করার জন্য তদন্ত চলমান রয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, চূড়ান্ত ভর্তি চলাকালীন বিভাগে নিজের স্বাক্ষর ঠিকমতো দিতে না পারায়, প্রবেশপত্রের সঙ্গে চেহারার অমিল ও ৭৬তম হওয়ার পরও বিজ্ঞান বিভাগের সহজ প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারায় সন্দেহ তৈরি হয় ভাইভা বোর্ডে থাকা শিক্ষকদের। পরে তার অভিভাবকের কথা জানতে চাইলে কল দিয়ে বড় ভাই পরিচয়ে নিয়ে আসেন পনির উদ্দিন খান পাভেল নামের এক ব্যক্তিকে।

তাদের দুজনের কথার মাঝে অসঙ্গতি খুঁজে পেয়ে ভর্তি হতে আসা শিক্ষার্থীর ফোনের হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজ চেক করে পাভেলের সাথে কিভাবে স্বাক্ষর করবে এবং ভর্তির লেনদেন বিষয়ক আলাপ পাওয়া যায়। পরে পাভেলের ফোন চেক করে সেখানে অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছু ও চাকরিপ্রার্থীদের প্রবেশপত্র ও প্রার্থীদের ছবি দেখতে পান দায়িত্বরত শিক্ষকরা। এরপর শিক্ষকদের জেরায় প্রক্সি জালিয়াতির কথা স্বীকার করেন আফিক।

এ সময় পাভেলের ফোনে সিয়াম নামের একজন কল করে এবং অপর প্রান্ত থেকে বলতে শোনা যায়, ‘ভর্তির কি অবস্থা ভাই?’। পরে কলের কথা শেষ হলে সিয়ামের পরিচয় জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু পাভেল তা জানাননি। এ সময় সিয়ামের নাম ও মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাটাবেইজে সার্চ করেন সিএসই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম। দেখা যায়, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে আইন ও বিচার বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী। তার পুরো নাম সালমান ফারদিন সাজিদ সিয়াম।

সিয়ামকে বিভাগে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে ও তার হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজ যাচাই করে পাভেলের সাথে তার সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায় আরেক প্রক্সিকাণ্ডে। সিয়ামের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, তিনি কৌশিক কুমার চন্দ নামের এক শিক্ষার্থীর পরীক্ষা প্রক্সি দিয়েছেন যেখানে পাভেল তাকে প্রায় ১ লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। জানা যায়, প্রক্সি শিক্ষার্থী ইতিমধ্যেই ভর্তি হয়েছেন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগে। কৌশিকের গুচ্ছ ভর্তি রোল ২০৪৩৯৩।

সিয়ামের স্বীকারোক্তি চলাকালীন সময়ে তার ফোনে কল আসে শান্ত ভূইয়া নামের এক শিক্ষার্থীর। তিনি কল করে সিয়ামকে বলেন, ‘তোর ক্যান্ডিডেটের নাকি সমস্যা হয়েছে?’ পরবর্তীতে এ বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জানা যায়, ফোন দেওয়া শিক্ষার্থী সিয়ামের বন্ধু শান্ত ভূইয়া, যিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। মূলত শান্তর মাধ্যমেই পাভেলের সাথে পরিচয় হয় সিয়ামের।

জানা যায়, পনির উদ্দিন খান পাভেল মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদীখান উপজেলার বাসিন্দা। ভর্তি হতে আসা ওবায়েত হাসান আফিকের বাড়ি ত্রিশালের চরপাড়ায়। এ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিয়ামের ফোনে পাওয়া যায় আরেক শিক্ষার্থীর ওএমআর-এর ছবি। যিনি ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়েছেন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। তবে পাভেল বলছে, বাবু নামের আরেকজনের নির্দেশে কাজ করেন তিনি। ভর্তি সংক্রান্ত সব বিষয় সে দেখে। এছাড়াও তিনি জানান, লোক প্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগের কৌশিক কুমার চন্দকে ভর্তি করতে বাবু গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন।

এ ঘটনায় ওবায়েত হাসান আফিকের প্রক্সি কে দিয়েছে তা এখনও জানা যায়নি। তবে আফিক ও কৌশিক এই দুজনেরই প্রক্সি দেওয়া হয় জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে। এ ঘটনায় অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ার দুর্বলতা, বিভিন্ন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রে পরীক্ষায় অসচ্ছতা, জামালপুরের কেন্দ্রকে টার্গেট করে গড়ে ওঠা জালিয়াতি চক্রের বিস্তারসহ নানান বিষয়ে।

ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, “সবার সহযোগিতায় সত্য উদঘাটন সম্ভব হবে। যদিও ঘটনাটি জামালপুরে ঘটেছে, তবুও আমাদের এখানে সবার আন্তরিক প্রচেষ্টায় বিষয়টি ধরা পড়েছে। তদন্ত চালালে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে আমরা আশা করছি।” তিনি আরও জানান সঠিক তথ্য তুলে ধরতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করবে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত