ঢাকা, সোমবার, ১১ আগস্ট ২০২৫, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২

কলকাতায় ‘পার্টি অফিস’ খুলেছে আ.লীগ, যাতায়াত করেন কারা?

ডুয়া নিউজ- জাতীয়
২০২৫ আগস্ট ০৮ ১১:১১:৩৪
কলকাতায় ‘পার্টি অফিস’ খুলেছে আ.লীগ, যাতায়াত করেন কারা?

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতার এক ব্যস্ত বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সে সম্প্রতি দেখা মিলছে কিছু অপরিচিত মুখের। তাদের চলাফেরা, আনাগোনা আকৃষ্ট করছে স্থানীয়দের দৃষ্টি। কারণ কয়েক মাস আগেও তারা এখানে ছিলেন না। এই নবাগতদের অধিকাংশই একসময় বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তারা ছিলেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্রীয় বা মধ্যম পর্যায়ের নেতা।

বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়েছে, ওই কমপ্লেক্সের এক অংশে এখন ‘পার্টি অফিস’ চালাচ্ছে পতিত আওয়ামী লীগ। এটি নতুন একটি উদ্যোগ যা শেখ হাসিনার দেশত্যাগের (২০২৪ সালের ৫ আগস্ট) পর ভারতে অবস্থান নেওয়া নেতাকর্মীদের সংগঠিত রাখার প্রয়াস হিসেবে দেখা হচ্ছে।

প্রথম দিকে কলকাতায় অবস্থানরত আওয়ামী লীগের নেতারা দলীয় বৈঠক কিংবা সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতেন ব্যক্তিগত বাসভবনে। কখনো কখনো বড় পরিসরের সভার জন্য ভাড়া নিতে হত রেস্তোরাঁ বা ব্যাংকোয়েট হল। এই অনিশ্চয়তা দূর করতেই একটি নির্দিষ্ট পার্টি অফিসের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন নেতারা। এর ফলশ্রুতিতে গড়ে তোলা হয় এই নতুন দলীয় কার্যালয়। এখন সেখানেই নিয়মিত বসছে বৈঠক, নেওয়া হচ্ছে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত।

সেই ‘পার্টি অফিস’ যেমন:

বাণিজ্যিক পরিসরটির লিফট দিয়ে উঠে বাঁদিকে গেলেই সার দিয়ে বাণিজ্যিক সংস্থার দপ্তর। করিডোরের দুদিকে হাল্কা বাদামী রঙের একের পর এক দরজা। তার মধ্যেই একটিতে আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস। শুধু বাইরে কেন ২৫০০ বা ২৬০০ স্কোয়ার ফুটের ঘরটিতে উঁকি মারলেও কেউ বুঝতে পারবেন না যে এই ঘরটির সঙ্গে কোনোভাবে আওয়ামী লীগ জড়িত আছে।

কোনো সাইন বোর্ড, শেখ হাসিনা অথবা শেখ মুজিবুর রহমানের কোনো ছবি কোথাও নেই ঘরটির বাইরে বা ভেতরে।

এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বা নেত্রীর কোনো ছবি, সাইনবোর্ড কোনো কিছুই আমরা রাখিনি। আমরা চাইনি যে এই ঘরটার পরিচিতি প্রকাশ করতে। এমনকি একটা দলীয় দপ্তরে যেসব ফাইল ইত্যাদি থাকে সেসবও এখানে রাখা হয় নি। নিয়মিত দেখা-সাক্ষাৎ, বৈঠক ইত্যাদির জন্য একটা ঘর দরকার ছিল, এটা পাওয়া গেছে। এটাকে আমরা পার্টি অফিসই বলি কিন্তু বাস্তবে এটি একটি বাণিজ্যিক অফিস। আগে যে সংস্থা কাজ করত এখানে তাদেরই ছেড়ে যাওয়া চেয়ার, টেবিল এসবই আমরা ব্যবহার করি।’

তিনি জানান, ৩০-৩৫ জনের বৈঠক এই দপ্তরেই হয়ে যায় কিন্তু একটু চাপাচাপি করে বসতে হয়। ছোটখাটো বৈঠক বিভিন্ন নেতাদের বাসাবাড়িতে এখনো হয়। তবে বড় বৈঠকগুলো যেখানে শ দুয়েক নেতাকর্মী হাজির হওয়ার কথা সেরকম বৈঠকের জন্য কোনো ব্যাংকয়েট হল বা কোনো রেস্তরাঁর একটি অংশ ভাড়া নিয়ে নেওয়া হয়।

যারা যাতায়াত করেন সেখানে:

পাঁচ আগস্টের ঘটনার পর বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে আসা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর বহু শীর্ষস্থানীয় নেতা, সাবেক মন্ত্রী এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বর্তমানে কলকাতা ও আশপাশের এলাকায় বসবাস করছেন।

তালিকায় রয়েছেন বিভিন্ন পেশাজীবী, সাবেক ও বর্তমান সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্য এবং অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তারাও। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ছয় মাস আগে পর্যন্ত অন্তত ৭০ জন সংসদ সদস্য, জেলা পর্যায়ের সভাপতি-সম্পাদক, উপজেলা চেয়ারম্যান ও মেয়রসহ প্রায় ২০০ জনের মতো শীর্ষ নেতা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নেন।

এদের কেউ কেউ পরিবারসহ থাকছেন আবার কেউ কয়েকজন মিলে একটি ফ্ল্যাট ভাগাভাগি করে ভাড়া নিয়েছেন। অনেকের পরিবারের সদস্যরাও মাঝে মাঝে বাংলাদেশ থেকে গিয়ে কিছুদিন থেকে আসেন।

বর্তমানে কলকাতা ও আশেপাশে অবস্থানরত নেতাদের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের অন্তত ৮০ জন সদস্য এবং আগের সংসদের আরও ১০-১২ জন সাবেক এমপি রয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া অনেকে কলকাতায় অবস্থান করে পরে সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা বা অস্ট্রেলিয়ায় চলে গেছেন।

সহযোগী সংগঠনগুলোর একাধিক শীর্ষ নেতাও এই এলাকায় বসবাস করছেন। এসব নেতা কলকাতার একটি বাণিজ্যিক কমপ্লেক্সে গড়ে ওঠা একটি 'পার্টি অফিসে' নিয়মিত বা প্রয়োজন অনুযায়ী যাতায়াত করেন।

তবে এ অফিসের নির্দিষ্ট সময়সূচি নেই। কেউ নিয়মিত যান, কেউ প্রয়োজন হলে যান। মূল উদ্দেশ্য ছিল দলের একটি নির্দিষ্ট সমন্বয় কেন্দ্র গড়ে তোলা যেখানে প্রয়োজনে সবাই এসে মতবিনিময় করতে পারেন।

সাধারণ মানুষের এই অফিস সম্পর্কে না জানাই স্বাভাবিক, এমনকি দলের বহু নেতাকর্মীর কাছেও এই পার্টি অফিসের অস্তিত্ব অজানা। তবে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের অনুমোদন ছাড়া এমন রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ পাওয়ার কথা নয় বলে জানাচ্ছেন বিশ্লেষকরা।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত