ঢাকা, সোমবার, ৪ আগস্ট ২০২৫, ২০ শ্রাবণ ১৪৩২
যাত্রা শুরু হচ্ছে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির, চার অনুষদে থাকছে ২৩ বিষয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্তি বাতিল করে রাজধানীর সাতটি ঐতিহ্যবাহী সরকারি কলেজকে নিয়ে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে একটি পূর্ণাঙ্গ নতুন বিশ্ববিদ্যালয় ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ আন্দোলন, একাধিকবার সড়ক অবরোধ ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর গঠিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনা কমিটি এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নেতৃত্বাধীন উচ্চপর্যায়ের কমিটির সুপারিশে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আজ সোমবার শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরার এক সংবাদ সম্মেলনে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরবেন।
নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম পর্যায়ে চারটি অনুষদের অধীনে ২৩টি বিষয়ে স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হবে। প্রতিষ্ঠানটি ধাপে ধাপে পূর্ণাঙ্গ রূপ পাবে। উল্লেখ্য যে এই বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রথমবারের মতো উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ রাখা হয়েছে যা দেশের অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই।
সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি আগস্ট মাসের শেষ দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এবং এরপরই শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে। এর আগে নিয়োগ দেওয়া হবে একজন উপাচার্য, দুজন উপ-উপাচার্য (একাডেমিক ও প্রশাসনিক), একজন কোষাধ্যক্ষ ও একজন প্রক্টরসহ ১৫ সদস্যের একটি প্রক্টরিয়াল টিম। যেহেতু জাতীয় সংসদ বর্তমানে কার্যকর নয় তাই অধ্যাদেশের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালুর জন্য রাষ্ট্রপতির সম্মতি নেওয়া হবে।
নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান হবে আধুনিক ধাঁচের ইন্টারডিসিপ্লিনারি ও হাইব্রিড পদ্ধতিতে। মোট ক্লাসের ৪০ শতাংশ অনলাইনে এবং ৬০ শতাংশ সরাসরি শ্রেণিকক্ষে নেওয়া হবে। তবে সব পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে সশরীরে। শিক্ষার্থীরা প্রথম চার সেমিস্টারে নন-মেজর ও পরবর্তী চার সেমিস্টারে মেজর কোর্সে অংশগ্রহণ করবেন। পঞ্চম সেমিস্টারে নির্দিষ্ট শর্তে ডিসিপ্লিন পরিবর্তনের সুযোগ থাকবে তবে কলেজ পরিবর্তন করা যাবে না।
বর্তমানে বিভিন্ন বর্ষে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা আগের নিয়মেই তাদের ডিগ্রি সম্পন্ন করবেন। তবে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’র অধীনে পড়াশোনা করবেন এবং এখান থেকেই তাদের সনদ দেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কলেজগুলোকে চারটি অনুষদে ভাগ করা হয়েছে। বিজ্ঞান বিষয়ক পাঠদান হবে ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা কলেজ থেকে। মানবিক অনুষদের কার্যক্রম পরিচালিত হবে সরকারি বাঙলা কলেজ থেকে, ব্যবসায় শিক্ষা পড়ানো হবে সরকারি তিতুমীর কলেজে এবং আইন শিক্ষা হবে কবি নজরুল কলেজ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে।
মিরপুরের সরকারি বাঙলা কলেজে অব্যবহৃত প্রায় ২৫ একর জমিতে গড়ে তোলা হবে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির মূল ক্যাম্পাস যেখানে থাকবে প্রশাসনিক ভবন, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, মেডিকেল সেন্টার ও ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি)।
বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে কাজ করলেও সাত কলেজের মধ্যে পাঁচটিতে একাদশ শ্রেণির পাঠদান আগের মতোই চলবে। ইডেন কলেজ ও কবি নজরুল কলেজে নতুন করে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ক্লাস চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। একই ক্যাম্পাসে উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা টাইম, স্পেস ও রিসোর্স শেয়ারিং পদ্ধতিতে পড়াশোনা করবেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ এবং বাজেট ব্যবস্থাপনা করা হবে কেন্দ্রীয়ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে। প্রতিটি কলেজে থাকবে ‘ওয়ানস্টপ সার্ভিস পয়েন্ট’, আধুনিক লাইব্রেরি, ক্যাফেটেরিয়া, মেডিকেল সেন্টার ও পরিবহন সুবিধা।
৪ ধাপে প্রতিষ্ঠা হবে বিশ্ববিদ্যালয় :
চারটি ধাপে এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে বলে জানা গেছে। প্রথম ধাপে খসড়া আইন প্রণয়ন, খসড়া আইন অনুমোদন এবং অধ্যাদেশ জারি করা হবে। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে স্বাক্ষর হবে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর লক্ষ্যে উপাচার্য নিয়োগসহ অন্যান্য কার্যক্রম শুরু হবে। তবে ইডেন ও বদরুন্নেসা কলেজ শুধু নারীদের কলেজ হওয়ায় সেখানে ছেলেদের প্রবেশের বিষয়টি যেমন অস্পষ্ট তেমনি ঢাকা কলেজ শুধু পুরুষের হওয়ায় এখানে নারীদের প্রবেশের বিষয়টিও স্পষ্ট নয়। এ ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টিও স্পষ্ট নয়। কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন কোনো চুক্তির নজির নেই। যেহেতু শিক্ষা উপদেষ্টা এ বিষয়ে আজ ব্রিফিং করবেন তাই বিষয়টি নিয়ে ইউজিসি বা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
থাকবে যেসব বিষয়:
ঢাকা কলেজে পড়ানো হবে গণিত, পরিসংখ্যান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান, ডাটা সায়েন্স, বায়োকেমিস্ট্রি, বায়োটেকনোলজি ও রসায়নসহ ৭টি বিষয়। ইডেন কলেজে থাকবে পদার্থবিজ্ঞান, অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি, ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি, ফরেস্ট্রি সায়েন্সসহ ৫টি বিষয়। বদরুন্নেসা কলেজে ২টি বিষয়—আরবান অ্যান্ড রুরাল প্ল্যানিং এবং এনভায়রনমেন্ট ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে পড়ার সুযোগ থাকছে। সরকারি তিতুমীর কলেজে পড়ার সুযোগ থাকছে অ্যাকাউন্টিং, ফিন্যান্স, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, হোটেল অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট, মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস এবং ব্যাংক অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স ম্যানেজমেন্টসহ ৬টি বিষয়ে। সরকারি বাঙলা কলেজে জার্নালিজম অ্যান্ড কমিউনিকেশন স্টাডিজ, ফটো অ্যান্ড ভিডিওগ্রাফি, অ্যাপ্লাইড সোশিওলজি, পলিটিক্যাল ইকোনমি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, অর্থনীতি এবং ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্স অ্যান্ড ডিপ্লোমেটিক স্টাডিজসহ ৬টি বিষয় পড়ানো হবে। আর কবি নজরুল কলেজ এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ যৌথভাবে ‘ল অ্যান্ড জাস্টিস’-এর একটি বিভাগে পাঠদান চলবে।
যারা ভর্তি হতে পারবেন:
বিশ্ববিদ্যালয়টির ভর্তি প্রক্রিয়া কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালিত হবে। যারা ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের এসএসসি এবং ২০২৩ বা ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তারা আবেদনের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। গত ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের জন্য যারা আবেদন করেছিলেন তাদের নতুন করে আবেদন করার প্রয়োজন নেই। তবে যারা আবেদন প্রত্যাহার করতে চান তারা ৩ আগস্ট থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত আবেদন প্রত্যাহার করতে পারবেন এবং তাদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে। নতুন করে ৩ আগস্ট থেকে আগামী ১০ আগস্ট পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীরা collegeadmission.eis.du.ac.bd ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন। আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০০ টাকা। সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের যে কোনো শাখায় অথবা অনলাইন পেমেন্টের মাধ্যমে এ ফি জমা দেওয়া যাবে।
ভর্তি পরীক্ষার জন্য আগামী ২২ ও ২৩ আগস্ট দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। কলা ও সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদের ভর্তি পরীক্ষা ২২ আগস্ট বিকেল ৩টা থেকে ৪টা, বিজ্ঞান অনুষদের পরীক্ষা ২৩ আগস্ট সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা এবং ব্যবসা অনুষদের ভর্তি পরীক্ষা ২৩ আগস্ট বিকেল ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র ১৭ আগস্ট থেকে এবং আসনবিন্যাস ২০ আগস্ট থেকে ডাউনলোড করা যাবে।
ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাতটি কলেজ-ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ এবং সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষা কার্যক্রমে নতুন গতি আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সার্বিক বিষয়ে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ও সাত কলেজের অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসক অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস বলেন, ‘যেহেতু শিক্ষা উপদেষ্টা কথা বলবেন (আজকের ব্রিফিং) তাই আমি বিস্তারিত কিছু বলতে চাই না। তবে আমাদের প্রস্তাব ছিল যাই করা হোক না কেন, কলেজগুলোর যেন স্বতন্ত্রতা বজায় থাকে। যেমন ঢাকা কলেজ ছেলেদের ও ইডেন-বদরুন্নেসা মেয়েদের। এসব যেন মিক্সড (মিশ্র) না হয়।’
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- শেয়ারবাজারে আসছে রাষ্ট্র ও বহুজাতিক ১৫ কোম্পানি
- ভারতে ঢাবির দুই ছাত্রীর ছবি নিয়ে তোলপাড়, ক্ষোভ
- ১১'শ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিবে ঘুড্ডি ফাউন্ডেশন
- দ্বিতীয় প্রান্তিকের ইপিএস প্রকাশ করেছে ১৪ কোম্পানি
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স
- ডিএনসিসির শিক্ষাবৃত্তি পাবে ২ হাজার শিক্ষার্থী
- স্কয়ার ফার্মার বাজার মূলধনে নতুন মাইলফলক
- শেয়ারবাজারে বড়দের দাপট, ছোটদের পিছুটান
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে ৪ প্রতিষ্ঠান
- ডিভিডেন্ড পেল দুই কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা
- ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে ৭ প্রতিষ্ঠান
- বিকালে আসছে ১০ কোম্পানির ইপিএস
- বিকালে আসছে ২১ কোম্পানির ইপিএস
- নতুন সিনেট সদস্য হলেন ঢাবির ৫ অধ্যাপক
- শিবলী রুবাইয়াত ও শেখ শামসুদ্দিন শেয়ারবাজারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা