হাসিনার বিচার: আজ সাক্ষ্যগ্রহণ, হবে লাইভ সম্প্রচার

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রোববার (৩ আগস্ট) চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলার সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন এবং সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে। এটি আদালতের অনুমতিক্রমে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।

শনিবার (২ আগস্ট) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম জানান, রোববার (৩ আগস্ট) মামলার সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন এবং প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে। আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে এটি সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গত ১০ জুলাই একটি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলাটিতে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার প্রকৃত তথ্য উদঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হতে আবেদন করেন, আদালত তার আবেদন মঞ্জুর করেছেন। মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য আগস্ট দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।

এই শুনানিতে প্রসিকিউশন পক্ষে উপস্থিত ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, যার নেতৃত্বে মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

অন্যদিকে, শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন শুনানি করেন। আর এই মামলায় গ্রেফতার হয়ে ট্রাইব্যুনালে হাজির থাকা আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

গত ১৬ জুন ট্র্যাইব্যুনাল-১ পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে হাজির হতে একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন এবং পরদিন দু’টি পত্রিকায় শেখ হাসিনা ও কামালকে আত্মসমর্পণ করতে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। তবে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরেও পলাতক দুই আসামি ট্রাইব্যুনালে হাজির না হওয়ায় তাদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী দিয়ে এই মামলায় অভিযোগ গঠন বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করেন। সে অনুযায়ী শুনানি শেষে গত ১০ জুলাই এই মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন ট্র্যাইব্যুনাল-১।

জুলাই আগস্টে ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গত ১ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন। হাসিনার পাশাপাশি এই মামলায় অভিযুক্ত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ এনে অভিযোগ গঠনের আবেদন করে প্রসিকিউশন।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে আ’লীগের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠনের পর গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম বিবিধ মামলা দায়ের করা হয়।

এটি ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আ’লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অপর মামলাটি রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডসংক্রান্ত।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমন করতে গিয়ে আ’লীগ, দলীয় ক্যাডার, প্রশাসনের অনুগত অংশ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে একাধিক আবেদন ও মামলা ট্রাইব্যুনালে জমা পড়ে। বর্তমানে এসব অভিযোগের বিচার চলছে পুনর্গঠিত দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে, যেখানে আলোচিত মামলাগুলোর শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে।