ঢাকা, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২

সাবেক মন্ত্রীদের ফোনে গোপন বার্তা

ডুয়া নিউজ- জাতীয়
২০২৫ জুলাই ২১ ১১:৪৫:৫৬
সাবেক মন্ত্রীদের ফোনে গোপন বার্তা

ঐতিহাসিক ছাত্র-জনতার ‘জুলাই আন্দোলন’ দমনে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ নির্দেশের অভিযোগকে ঘিরেই ঘনীভূত হচ্ছে তদন্ত। মামলার ডিজিটাল প্রমাণ সংগ্রহে ইতোমধ্যে সাবেক ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নেতা তানভীর হাসান সৈকতের ব্যবহার করা সাতটি মোবাইল ফোনসেট ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

সরকার পতনের পর আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন এ তিনজন। গ্রেপ্তারের সময় জব্দ করা মোবাইল ফোনগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির ইন্সপেক্টর আব্দুল্লাহেল বাকী যা আদালত অনুমোদন করে।

ফোন তালিকা : কে কোনটি ব্যবহার করতেন:

জুনাইদ আহমেদ পলক: একটি আইফোন ১৫ প্রো, দুটি স্যামসাং এস২৪ আল্ট্রা

শামসুল হক টুকু: একটি নোকিয়া বাটন ফোন, একটি স্যামসাং এম১৪

তানভীর হাসান সৈকত: একটি আইফোন, একটি ডোকোমো ৫জি ফোন

আবেদনে বলা হয় “আসামিরা সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এবং মাঠপর্যায়ের কৌশল নির্ধারক ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা ও মূল অভিযুক্তদের শনাক্তে এসব ফোন বিশ্লেষণ প্রয়োজন।”

ফরেনসিক বিশ্লেষণে যেসব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে- গোপন বার্তা ও যোগাযোগের ইতিহাস, মুছে ফেলা বা আর্কাইভ করা ফাইল, হোয়াটসঅ্যাপ, সিগন্যাল, টেলিগ্রাম ও ভাইবারে বার্তা, ইন্টারনেট বন্ধের নির্দেশ সংক্রান্ত যোগাযোগ, তৃতীয় কোনো পক্ষের সম্পৃক্ততা।

তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “গ্রেপ্তার হওয়ার আগে আসামিরা তাদের ফোন থেকে প্রায় সব তথ্য মুছে ফেলেন এমনকি কিছু অ্যাপসও ডিলিট করা হয়। ফলে সরাসরি ডিভাইস থেকে তথ্য উদ্ধার সম্ভব হয়নি। এখন ফরেনসিকের মাধ্যমে মুছে ফেলা ডেটা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চলছে।”

তিনি আরও জানান, ফরেনসিকে প্রাপ্ত তথ্যগুলো তদন্ত প্রতিবেদন (চার্জশিট)-এ সংযুক্ত করা হবে।

তদন্তে উঠে এসেছে ২০২৫ সালের জুলাইজুড়ে চলা ব্যাপক আন্দোলনের সময় সরকার চরম সংকটে পড়ে। শেখ হাসিনা তখন একাধিকবার মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ইন্টারনেট বন্ধ, ‘ব্লকরেইড’ ও শেষমেশ গুলি চালানোর নির্দেশের অভিযোগও রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এসব নির্দেশনা ও কথোপকথনের তথ্য রয়েছে পাঠানো ফোনগুলোর কোনো এক বা একাধিকটিতে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশেষ প্রসিকিউটরিয়াল টিমের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজি বলেন, “ফরেনসিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্য যদি মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয় তাহলে তা বিচারিক প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হবে।”

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ২০ জুলাই ঢাকার পল্টন থানায় রিকশাচালক কামাল মিয়ার হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাটিকে জুলাই আন্দোলনের সময় সংঘটিত সহিংসতার অংশ হিসেবে দেখছে তদন্ত সংস্থা।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত