ঢাকা, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগে নতুন রুপরেখা

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার জন্য একটি নতুন রুপরেখার প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এই প্রস্তাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাইয়ে একটি নতুন কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে, যেখানে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী দলের) এবং সংসদের তৃতীয় বৃহত্তম দলের একজন প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত কমিটি একজনকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে চূড়ান্ত করবে এবং রাষ্ট্রপতি তাঁকেই নিয়োগ দেবেন।
রোববার (২০ জুলাই) রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে লিখিতভাবে এই খসড়া প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয় এবং তাদের মতামত চাওয়া হয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার কমিশন তাদের চূড়ান্ত অবস্থান জানাবে।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ১৫তম দিনের আলোচনায় এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সংলাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান নিয়ে আলোচনা হয়।
কমিশনের দেওয়া সমন্বিত প্রস্তাবে সংবিধানের দুটি গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ সংশোধনের কথা বলা হয়েছে: ১২৩(৩) অনুচ্ছেদে মেয়াদ শেষ বা অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে তার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার কথা বলা হয়েছে এবং ৫৮(খ) অনুচ্ছেদে সংসদের মেয়াদ শেষের ১৫ দিন আগে কিংবা কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে তার ১৫ দিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ চূড়ান্ত করতে হবে।
কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাই প্রক্রিয়াটি হবে একটি সুনির্দিষ্ট এবং বহু-স্তরীয় পদ্ধতির মাধ্যমেঃ
বাছাই কমিটি গঠন
সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩০ দিন আগে স্পিকারের সভাপতিত্বে সংসদ সচিবালয়ের ব্যবস্থাপনায় একটি 'নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাই কমিটি' গঠিত হবে। এই কমিটিতে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী দলের) এবং সংসদের তৃতীয় বৃহত্তম দলের একজন প্রতিনিধি থাকবেন।
প্রাথমিক নাম প্রস্তাব
কমিটি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দল এবং জাতীয় সংসদের স্বতন্ত্র সদস্যদের কাছ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন একজন করে ব্যক্তির নাম নেবে।
প্রধান উপদেষ্টা চূড়ান্তকরণ
প্রস্তাবিত নাম নিয়ে বাছাই কমিটি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে একজনকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নির্ধারিত করতে পারবে এবং রাষ্ট্রপতি তাঁকেই নিযুক্ত করবেন।
বিকল্প পদ্ধতি (যদি প্রয়োজন হয়)
যদি বাছাই কমিটি গঠনের পাঁচ দিনের (১২০ ঘণ্টা) মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করতে না পারে, তাহলে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের জন্য সংসদের সরকারি দল/জোট, প্রধান বিরোধী দল/জোট ৩ জন করে এবং তৃতীয় বৃহত্তম দল ২ ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবে।
ক্রমভিত্তিক ভোটিং
পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বৈঠকের মাধ্যমে সরকারি দল তৃতীয় বৃহত্তম দল হতে একজনকে, একইভাবে বিরোধী দল বা জোট একজনকে বাছাই করবে। তৃতীয় বৃহত্তম দল সরকারি দল/জোট, বিরোধী দল/জোট প্রস্তাবিত তালিকা হতে আলাদা আলাদা দুজনকে বাছাই করবে। বাছাই করা ব্যক্তিদের মধ্যে ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ হবেন। তা না হলে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে স্পিকারের তত্ত্বাবধানে বাছাই কমিটির সদস্যরা র্যাংঙ্কড চয়েজ বা ক্রমভিত্তিক ভোটিং পদ্ধতি প্রয়োগ করে সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে একজনকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করবেন।
বয়সসীমা ও মেয়াদ
প্রস্তাব অনুযায়ী, ৭৫ বছরের বেশি বয়সী কেউ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হতে পারবেন না। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ হবে ৯০ দিন। তবে দৈবদুর্বিপাকের কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন না হলে আরও সর্বোচ্চ ৩০ দিন দায়িত্ব পালন করতে পারবে ওই সরকার। নতুন প্রধানমন্ত্রী কার্যভার গ্রহণের তারিখে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত হবে।
উপদেষ্টা নিয়োগ
প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ লাভের পরে বাছাই কমিটির পরামর্শে অনধিক ১৫ ব্যক্তিকে উপদেষ্টা পদের জন্য বাছাই করবেন। সংসদ বহাল অবস্থায় তিনি শপথ নিতে পারবেন না।
বৈঠক শেষে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, প্রস্তাবটির অধিকাংশ বিষয়ে দলগুলো একমত হয়েছে। এই খসড়া প্রস্তাবটির ওপর ভাষাগত ও খুঁটিনাটি দিক পর্যালোচনা করে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত প্রদানের পরিপ্রেক্ষিতে আগামীকাল এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে কমিশন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পর কমিশনের সংলাপে প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান নিয়েও আলোচনা হয়। এতে তিনটি দলের মতামতঃ
বিএনপি
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সংসদীয় ব্যবস্থায় সংসদনেতাকেই মূলত প্রধানমন্ত্রী করা হয় এবং একই ব্যক্তি একসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, দলীয় প্রধান ও সংসদনেতা হতে কোনো অসুবিধা নেই। তিনি যুক্তি দেন যে, এটি গণতান্ত্রিক প্র্যাকটিসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, কারণ গণতন্ত্রের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত যুক্তরাজ্যেও দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি সংসদনেতার ভূমিকা আলংকারিক বলেও উল্লেখ করেন।
জামায়াতে ইসলামী
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদনেতা একই ব্যক্তি হতে পারেন, কারণ দুজন হলে কিছু ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ভঙ্গ হতে পারে। তবে তিনি দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী এক ব্যক্তি যাতে না হন, তার প্রস্তাব দেন। তিনি এর পেছনে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট এবং ক্ষমতার ভারসাম্যের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে তেমন জবাবদিহির ব্যবস্থা নেই। তিনি আরও জানান, এ বিষয়ে তিনি দলীয় ফোরামে আলোচনা করবেন।
এনসিপি
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব কমিশনের প্রস্তাবকে সমর্থন করে বলেন, তিনটি জায়গায় (প্রধানমন্ত্রী, সংসদনেতা, দলীয় প্রধান) একই ব্যক্তি থাকলে বিকল্প নেতৃত্ব বিকশিত হয় না। তিনটি জায়গা আলাদা হলে বিকল্প নেতৃত্ব তৈরি হবে। তিনি মত দেন, নির্বাচনের পরে দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী হলে দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- স্বল্প মূল্যে কম্পিউটার স্কিল ট্রেনিং কোর্সে ভর্তির সুযোগ, আসন সীমিত
- যারা বৃত্তি পাবে না, তাদের জন্য পার্ট-টাইম জবের চিন্তা-ভাবনা
- ডুয়া নিউজের বিশেষ প্রতিযোগিতা, পুরস্কার ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা!
- শেয়ারবাজারের ৩ প্রতিষ্ঠানের ২৯৬ কোটি টাকা মানি লন্ডারিং
- সারজিস আলমকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা, এনসিপির সকল কার্যক্রম স্থগিত
- ঢাবি অ্যালামনাই ও নিউ হরাইজন কানাডিয়ান স্কুলের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর
- ৬ জায়গায় হবে ডাকসুর ভোটগ্রহণ
- জুলাই স্মৃতি জাদুঘর: টেন্ডার ছাড়াই ১১১ কোটি টাকার কাজ পেল দুই প্রতিষ্ঠান
- ১০ লাখ শেয়ার কেনার ঘোষণা তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তার
- ইপিএস ঘোষণার তারিখ জানাল দুই কোম্পানি
- ‘শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই’
- শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম নিয়ে ডিএসইর সতর্কতা
- ইপিএস প্রকাশ করেছে ৪ কোম্পানি
- নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে হবে: দুদু
- শেয়ার কারসাজিকারীদের শাস্তি ১০ বছর করার প্রস্তাব