ঢাকা, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ড. ইউনূসের পদত্যাগে যেসব সংকটে পড়তে পারে দেশ

২০২৫ মে ২৪ ০৯:৩৪:৩৭
ড. ইউনূসের পদত্যাগে যেসব সংকটে পড়তে পারে দেশ

ডুয়া ডেস্ক: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হতাশা এবং পদত্যাগের সম্ভাবনা ঘিরে দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকেই মনে করছেন এমন একটি সংকটময় সময়ে তাঁর সরে দাঁড়ানো দেশকে আরও অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিতে পারে। ফলে দেশের স্বার্থে দ্রুত এই সমস্যার সমাধানে সকল পক্ষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা।

বিশ্লেষকদের ভাষ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসের গণ-আন্দোলনের পর গঠিত এই অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন রাজনৈতিক পক্ষের সমর্থন পেয়েই পথ চলা শুরু করে। কিন্তু বর্তমানে সরকার নিজেই অভিযোগ করছে তাদের কর্মকাণ্ডে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। অপরদিকে বিএনপি ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে তাদের পদত্যাগ দাবি করেছে।

এই পটভূমিতে গত বৃহস্পতিবার ড. ইউনূসের পদত্যাগ নিয়ে গুঞ্জন সামনে আসে, যা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নাটকীয় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। তাঁর পদত্যাগ সত্যিই ঘটলে দেশ কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে—সেই প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে ও বিশ্লেষকদের আলোচনায়।

এ বিষয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, এ মুহূর্তে প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করলে তা দেশের জন্য ভয়ংকর সমস্যা সৃষ্টি করবে। ওই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার মতো সক্ষমতা দেশের নেই।

তিনি বলেন, দেশে এই অনৈক্যের পেছনে পরিকল্পিতভাবে কলকাঠি নাড়ছে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতীয় আধিপত্যবাদ। কোনো না কোনোভাবে গোলযোগ দেখিয়ে, দেশ শাসনে ব্যর্থতা দেখিয়ে এখানে আবার পতিত ফ্যাসিবাদীদের নিয়ে আসতে চাচ্ছে।

প্রায় একই ধরনের মন্তব্য করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করলে দেশে বড় ধরনের ছন্দপতন ঘটবে বলে মনে করেন তিনি।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দেশ একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হবে। এর ফল হবে এতটাই ভয়াবহ যে, আমরা এবং আমাদের পরের প্রজন্মকে মাশুল গুনতে হবে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যুক্ত সব শক্তির ঐক্য প্রয়োজন মন্তব্য করে তিনি বলেন, দুর্ভাগ্য তারা এখন একে অপরের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে। ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির মধ্যে এই দ্বন্দ্ব যত বাড়বে, প্রতিপক্ষ ততই সুযোগ নেবে। এছাড়া জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশের মানুষ এক নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে। ওই স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। দেশের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে সবাইকে প্রজ্ঞা ও সাহসিকতার সঙ্গে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের পর অধ্যাপক ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত এই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সেই আন্দোলনের ছাত্র নেতৃত্ব, বিএনপি, জামায়াতসহ সব দল সর্বাত্মক সমর্থন দিয়েছিল। এত বড় সমর্থন পাওয়ার পরও সেই সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগ কেন আসছে-এমন প্রশ্ন তুলছেন রাজনীতিক ও বিশ্লেষকরা।

কেউ কেউ বলেন, এ পরিস্থিতির জন্য সরকারেরও দায় রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। করিডর, চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়াসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের পদক্ষেপের বিরোধিতা করছে রাজনৈতিক দলগুলো। এসব বিষয় নিয়ে সরকারের সঙ্গে দলগুলোর দূরত্ব কমানো জরুরি।

তারা আরও বলেন, ‘চলামান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য জরুরি।’

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‌‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকার কম কথা বলছে। কোনো কোনো উপদেষ্টার মনোভাব এমন-এটি একটি নিয়মিত সরকার। এছাড়া নির্বাচন, গণহত্যার বিচার ও সংস্কারের বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়। শুধু তাই নয়, সরকার এমন অনেক ‘নিরপেক্ষ’ ব্যক্তিদের উপদেষ্টা করেছেন, যারা বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে চুপ থাকার মধ্য দিয়ে প্রকারান্তে তাদের সহযোগিতা করেছেন। এসব উপদেষ্টাকে দিয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে না। এসব কারণে সরকারের কার্যক্রম নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সন্দেহ-সংশয় তৈরি হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি উত্তরণে সরকার ও রাজনৈতিক দলকে এগিয়ে আসতে হবে। যেসব রাজনৈতিক দলের জনভিত্তি রয়েছে, তাদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরামর্শ করে দেশ চালাতে হবে। একই সঙ্গে সরকারের ক্ষমতার কাঠামোয় পরিবর্তন আনা জরুরি। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন-এমন ব্যক্তিদের সেখানে বসানো দরকার।’

তথ্য : যুগান্তর

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে