ঢাকা, বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পাকিস্তানে ৬৫ বছর পর ফের ফিল্ড মার্শাল, কেন এত তাৎপর্যপূর্ণ?

২০২৫ মে ২১ ১২:১৬:০৪
পাকিস্তানে ৬৫ বছর পর ফের ফিল্ড মার্শাল, কেন এত তাৎপর্যপূর্ণ?

ডুয়া ডেস্ক: পাকিস্তানের সামরিক ইতিহাসে ‘ফিল্ড মার্শাল’ হল সর্বোচ্চ সামরিক উপাধি—যা কেবল অসাধারণ সামরিক দক্ষতা ও অবদানের জন্যই প্রদান করা হয়। ১৯৫৯ সালে প্রথমবারের মতো তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল আইয়ুব খান নিজেকে এই পদে উন্নীত করেছিলেন। যা রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দেয়।

৬৫ বছর পর ২০২৫ সালের ২০ মে আবারও কেউ এই উপাধিতে ভূষিত হলেন—সেনাপ্রধান জেনারেল সৈয়দ অসীম মুনীর। সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার মধ্যে তাঁর কৌশলগত নেতৃত্ব এবং সফল সামরিক প্রতিরোধমূলক অভিযানের কারণে তাকে এই মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।

বিশেষ করে ‘অপারেশন বুনয়ানুম মারসুস’ এবং ‘মার্কা-এ-হক’ অভিযানে তাঁর নেতৃত্ব পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন সরকার মন্ত্রিসভার সম্মতিতে তাঁকে ফিল্ড মার্শাল উপাধি প্রদান করে।

ফিল্ড মার্শাল পদ কতটা ব্যতিক্রমী?

এই পদটি সেনাবাহিনীর নিয়মিত পদোন্নতির আওতাভুক্ত নয়। এটি একটি সম্মানসূচক র‍্যাঙ্ক যা শুধুমাত্র ব্যতিক্রমী সামরিক অবদান ও জাতীয় নিরাপত্তায় অসামান্য নেতৃত্বের স্বীকৃতি হিসেবে প্রদান করা হয়।

পটভূমি: ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক উত্তেজনা

গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে একটি আত্মঘাতী হামলায় ২৬ জন নিহত হলে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা চূড়ায় পৌঁছায়। ভারতের পাল্টা বিমান হামলার জবাবে পাকিস্তান ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে এবং সীমান্তে ভারতের অগ্রযাত্রা আটকে দেয়। এই সংঘাতের মধ্যেই জেনারেল মুনীরের নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হয়।

মন্ত্রিসভার প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ

মন্ত্রিসভা জেনারেল মুনীরের সাহসী নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করে জানায় এটি জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় তাঁর অসামান্য অবদানের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি। এই উপলক্ষে বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল জাহির আহমেদ বাবর সিধুর মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া সামরিক ও বেসামরিক যাঁরা এই অভিযানগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তাঁদের জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত করা হবে।

জেনারেল মুনীর নিজে বলেন, “এই সম্মান আমার একার নয়—এটি পুরো জাতির, সেনাবাহিনীর এবং শহিদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য উৎসর্গীকৃত। এই র‍্যাঙ্ক জাতির কাছে আমার আমানত। লক্ষ লক্ষ ‘অসীম’ এই দেশের জন্য আত্মত্যাগে প্রস্তুত।”

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি তবে প্রেক্ষাপট ভিন্ন

১৯৫৯ সালে জেনারেল আইয়ুব খানের নিজস্ব পদোন্নতি ছিল বিতর্কিত এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কিন্তু জেনারেল মুনীরের ক্ষেত্রে এটি ছিল একটি প্রাতিষ্ঠানিক, সাংবিধানিক এবং সামরিক সাফল্যের স্বীকৃতি।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট

বিশ্বব্যাপী ‘ফিল্ড মার্শাল’ উপাধি শুধুমাত্র যুদ্ধকালীন কৃতিত্ব বা অসাধারণ সামরিক নেতৃত্বের জন্যই দেওয়া হয়। ভারতের ফিল্ড মার্শাল স্যাম মানেকশ ও কে.এম. কারিয়াপ্পা এই মর্যাদা পেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে এটি ‘জেনারেল অব দ্য আর্মি’ নামে পরিচিত যা ডুইট আইজেনহাওয়ারের মতো নেতারা পেয়েছিলেন।

আজকের দিনে এই পদ অনেক দেশে বন্ধ হলেও যেসব দেশে এখনও চালু আছে সেখানে এটি একটি কূটনৈতিক ও প্রতীকী মর্যাদার পরিচায়ক।

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে