ঢাকা, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে পোস্টের জেরে গ্রে'প্তার মুসলিম অধ্যাপক

২০২৫ মে ১৮ ২২:৪১:৪৯
‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে পোস্টের জেরে গ্রে'প্তার মুসলিম অধ্যাপক

ডুয়া ডেস্ক: ভারতের সামরিক অভিযান ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘বিতর্কিত’ মন্তব্য করার অভিযোগে অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মুসলিম অধ্যাপককে গ্রেপ্তার করেছে দিল্লি পুলিশ।

আজ রবিবার (১৮ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ‘রাজধানী দিল্লি থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আলি খান মাহমুদাবাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিজেপি যুব মোর্চার হরিয়ানা শাখার সাধারণ সম্পাদক যোগেশ জাথেরির করা অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়।’

দিল্লির অদূরে হরিয়ানার সোনেপাতে অবস্থিত এই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘তদন্তে পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।’

অপারেশন সিঁদুর পরিচালনার বিষয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর নারী কর্মকর্তাদের সংবাদ সম্মেলন নিয়ে অভিযুক্ত মাহমুদাবাদ তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পোস্টে লেখেন, “অনেক ডানপন্থি সমর্থক কর্নেল সোফিয়া কুরেশির প্রশংসা করছেন। এটা ভালো।”

তিনি আরও লেখেন, “তবে তারা যদি একইরকম জোরালোভাবে গণপিটুনি, বুলডোজার অভিযান ও ঘৃণার রাজনীতির শিকার নাগরিকদেরও রক্ষা করার দাবি তোলেন, তাহলে সেটাই হবে প্রকৃত দেশপ্রেম।”

সবশেষ মাহমুদাবাদ লেখেন, “নারী কর্মকর্তাদের সামনে এনে সংবাদ উপস্থাপন নিঃসন্দেহে একটি প্রতীকী কাজ। কিন্তু এসব যদি বাস্তবে সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তায় প্রতিফলিত না হয়, তাহলে এটি নিছক লোক দেখানো এবং ভণ্ডামি।”

তার এই ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে বিতর্ক শুরু হয়। হরিয়ানা রাজ্য মহিলা কমিশন মন্তব্যটিকে ‘নারী সেনা কর্মকর্তাদের প্রতি অবমাননাকর’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে তাকে নোটিশ পাঠায়।

প্রসঙ্গত, পেহেলগামে এক সন্ত্রাসী হামলার পর ৬ মে ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে পাকিস্তানে অভিযান চালায়। এরপর সেনাবাহিনীর নারী কর্মকর্তাদের সামনে রেখে প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করে ভারতের প্রতিরক্ষা বিভাগ। এই ‘অপটিক্স’ নিয়েই সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্ন তোলেন মাহমুদাবাদ।

পোস্টে তিনি সেনাবাহিনীর মুসলিম নারী কর্মকর্তা কর্নেল সোফিয়া কুরেশির নাম উল্লেখ করেন। সমালোচকদের দাবি অনুযায়ী, ‘ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও বিতর্কের জন্ম দেয়।’

মাহমুদাবাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় তার মন্তব্যে ‘সাম্প্রদায়িক বিভেদ’ ছড়ানোর উপাদান রয়েছে এবং তা ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে মাহমুদাবাদ নিজেই তার মন্তব্যের ব্যাখ্যায় বলেন, “আমি যা বলেছি, তা সম্পূর্ণভাবে নাগরিক ও সেনাদের নিরাপত্তার পক্ষে ছিল। আমার বক্তব্যকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। সেখানে কোনো নারীবিরোধী বা বিদ্বেষমূলক কিছু নেই।”

এদিকে অপারেশন সিঁদুর ঘিরে ভারতে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ব্যাপক ধরপাকড় অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া দেশব্যাপী মুসলিমদের বিভিন্ন স্থাপনা ও বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া দেশটির বিভিন্ন স্থানে মুসলিমদেরকে মব সৃষ্টি করে গণপিটুনি দেওয়া হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এসবের একাধিক ছবি ভাইরাল হয়েছে।

এছাড়াও সম্প্রতি পাকিস্তানের কাছে তথ্য পাচারের অভিযোগে হরিয়ানার জনপ্রিয় ট্রাভেল ব্লগার জ্যোতি মালহোত্রাসহ অন্তত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মাহমুদাবাদের পোস্টে যে গণপিটুনি ও বুলডোজার অভিযানের উল্লেখ আছে, সেটিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও ইতোপূর্বে সমালোচনা করেছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ‘ভারতীয় কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মুসলিমদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিচ্ছে, যেটিকে ‘বুলডোজার জাস্টিস’ বলা হচ্ছে। এটি গভীরভাবে বৈষম্যমূলক ও মানবাধিকার লঙ্ঘন।’

উল্লেখ্য, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ‘বুলডোজার অভিযান’ বন্ধে নির্দেশ দিলেও মাঠপর্যায়ে তা কার্যকর হয়নি বলে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে অধ্যাপক মাহমুদাবাদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে দেশজুড়ে একাধিক বুদ্ধিজীবী ও একাডেমিকরা একত্রিত হয়েছেন। প্রায় ১২০০ শিক্ষাবিদ ও পেশাজীবী একটি খোলা চিঠিতে বলেন, “অধ্যাপক মাহমুদাবাদ আসলে সেনাবাহিনীর সংযমের প্রশংসা করেছেন এবং ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের আদর্শের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দোষী বানানো হচ্ছে।”

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে