ঢাকা, শনিবার, ৩ মে ২০২৫, ২০ বৈশাখ ১৪৩২

বাঙ্কার সংস্কারে ব্যস্ত কাশ্মীরের মানুষ

২০২৫ মে ০৩ ১৩:২৬:৫৭
বাঙ্কার সংস্কারে ব্যস্ত কাশ্মীরের মানুষ

ডুয়া ডেস্ক: পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। পরিস্থিতির এমন অবস্থায় নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) সংলগ্ন এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের মধ্যে যেকোনো সময় যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফলে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখার দুই পাশের মানুষ বাঙ্কার তৈরি ও সংস্কারে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

সম্প্রতি ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের উরি সেক্টরের তুতমার গলি এবং পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত লিপা সেক্টরের সীমান্তে গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। যদিও এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

লিপা উপত্যকার বাসিন্দা এহসান-উল-হক শামি বলেন, “পেহেলগামের ঘটনার পর শুক্রবার ও শনিবার সেনাবাহিনীর মধ্যে গুলি বিনিময় হয়েছে। রাতে হঠাৎ গোলাগুলি শুরু হলে আমরা আতঙ্কে পড়ে যাই। প্রথমেই আমার বৃদ্ধ মাকে বাঙ্কারে সরিয়ে নিই কারণ তিনি চলাফেরা করতে পারেন না।”

তিনি আরও জানান, ওই অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই একটি করে ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার রয়েছে। সেগুলো আগে গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার হলেও এখন যুদ্ধাবস্থার আশঙ্কায় বাঙ্কারগুলোকে প্রস্তুত করে রাখা হচ্ছে।

এদিকে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে বিবেচিত কুপওয়ারা ও বারামুল্লা জেলার নিয়ন্ত্রণরেখা ঘেঁষা এলাকায় প্রবেশে এখন থেকে আগাম অনুমতির প্রয়োজন হবে বলে জানানো হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

যদিও কুপওয়ারায় এখন পর্যন্ত গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেনি তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কারনাহ সেক্টরের বহু মানুষ এখন নিজের খরচে বাঙ্কার নির্মাণ অথবা পুরনোগুলো সংস্কার করছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা পীরজাদা সৈয়দ বলেন, “আমরা সীমান্ত সংঘর্ষের পরিণতি আগেও দেখেছি। প্রাণহানির পাশাপাশি কৃষিকাজ বন্ধ হয়ে মানুষ অনাহারে মরেছে। আল্লাহ না করুক কিছু হোক কিন্তু মনে হচ্ছে যেকোনো সময় বড় কিছু ঘটতে পারে। তাই বাঙ্কার বানিয়ে রাখছি যেন নিরাপদে আশ্রয় নেওয়া যায়।”

উরি সেক্টরের ভাটগ্রান ও চরন্দা এলাকায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ১৬টি বাঙ্কার নির্মিত হলেও সেগুলোর অধিকাংশেই বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থা নেই বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

ভাটগ্রানের বাসিন্দা মোহাম্মদ কুদ্দুস বলেন, “অনেকে নিজের খরচে বাঙ্কার তৈরি করেছেন কিন্তু গরিবদের জন্য কিছুই নেই। এখন আমরা এই বাঙ্কারগুলো পরিষ্কার করছি যেন প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায়।”

উল্লেখ্য, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ৩,৩২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের মধ্যে ৭৪৪ কিলোমিটার কাশ্মীর অঞ্চলে, যা সবচেয়ে বিপজ্জনক বলে বিবেচিত। ১৯৪৯ সালে জাতিসংঘ একে ‘সিজফায়ার লাইন’ ঘোষণা করলেও পরে সিমলা চুক্তির অধীনে একে ‘নিয়ন্ত্রণরেখা’ বলা হয়।

এর আগেও ভারত সরকার জম্মু ও কাশ্মীরের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে ১৯ হাজারের বেশি পাকা ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার নির্মাণ করেছিল।

আরএস পুরার বাসিন্দা কাট্টু মহারাজ বলেন, “এখন এতটাই উত্তেজনা যে, সব কাজ ফেলে মানুষ শুধু বাঙ্কার পরিষ্কার করছে।”

এই অস্থির পরিস্থিতিতে সীমান্তবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তথ্য : বিবিসি বাংলা

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে