ঢাকা, সোমবার, ১৮ আগস্ট ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২
পুরোনো শত্রু মিত্রে পরিণত হওয়ার অনেক উদাহরণ আছে : উপ-প্রেস সচিব

ডুয়া ডেস্ক : প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশপন্থী পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করেছে। বিশ্বে পুরোনো শত্রু মিত্রে পরিণত করার অনেক উদাহরণ রয়েছে। শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড আইডিতে এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন।
ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘প্রাক্তন শত্রুদের মিত্রে পরিণত হওয়ার বহু দৃষ্টান্ত আছে। ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড শত শত বছর ধরে অসংখ্য যুদ্ধ করলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তারা একসঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে লড়েছে। একই যুদ্ধে আমেরিকা জাপানে বোমা মেরেছিল; কিন্তু পরে দেশটিকে মিত্রে পরিণত করে।’
আবুল কালাম আজাদ লিখেছেন, ‘সেদিন এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলেন, বাংলাদেশ কি তার পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তন করে পাকিস্তানপন্থী হচ্ছে? এতে আমরা মোটেও অবাক হইনি। সব সময়ই কিছু মানুষ থাকবে, যারা বাংলাদেশের স্বাধীন পরিচয়ে বিশ্বাস করতে চাইবে না।’
তিনি বলেন, ‘দেশের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে অতীতে যা-ই হয়ে থাকুক না কেন, এখন থেকে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি হবে বাংলাদেশকেন্দ্রিক, যা আমাদের নিজেদের স্বার্থেই পরিচালিত হবে। এক প্রতিবেশীকে খুশি রাখতে গিয়ে আরেক প্রতিবেশী থেকে দূরত্ব বজায় রাখা — -এটা কোনো স্বাধীন দেশের পররাষ্ট্রনীতি হতে পারে না।’
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ২৪ ঘণ্টারও কম সময় লেগেছে পাকিস্তানের সফররত পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচকে দুই দেশের মধ্যে অমীমাংসিত বিষয়গুলো স্মরণ করিয়ে দিতে এবং একই সঙ্গে পারস্পরিক সুবিধার জন্য একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হতে।’
‘বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি আবেগঘন সমস্যা হলো, বাংলাদেশ চায় ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর চালানো গণহত্যা এবং নৃশংসতার জন্য পাকিস্তান ক্ষমা প্রার্থনা করুক।’
তিনি আরও বলেন, ‘এমনকি পাকিস্তানের সুশীল সমাজ, মিডিয়া এবং বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই বিশ্বাস করেন যে এই ক্ষমা চাওয়াটা হবে সদিচ্ছা ও সৌজন্যের বহিঃপ্রকাশ। তবে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তর এবং সামরিক আমলাতন্ত্র সব সময়ই এ ধরনের ধারণার বিরোধিতা করেছিল এবং তাই কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চায়নি পাকিস্তান।’
উপ-প্রেস সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পদ বিভাজনের বিষয়টিও জোরালোভাবে উত্থাপন করেছে, যা অতীতের সরকারগুলোর কাছে একপ্রকার ভুলে যাওয়া বিষয় ছিল, কারণ তারা আলোচনা নয়, বিচ্ছিন্নতাকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছিল।’
একটি হিসাব দিয়ে আজাদ বলেন, ‘১৯৭৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ কমপক্ষে ৪.৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের দাবি করতে পারে। অভ্যন্তরীণ মূলধন সৃষ্টি, বৈদেশিক ঋণ নিষ্পত্তি এবং বৈদেশিক আর্থিক সম্পদের মালিকানা ধরে রাখার ভিত্তিতে এই হিসাব করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রায় ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের আরও একটি দাবি আছে, ১৯৭০ সালের নভেম্বরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঘূর্ণিঝড়-দুর্গতদের জন্য বিভিন্ন বিদেশি দেশ ও সংস্থা অনুদান হিসেবে এই অর্থ দিয়েছিল।’
আজাদ বলেন, ‘এই টাকা তখন ঢাকায় পাকিস্তান স্টেট ব্যাংকের দপ্তরে জমা ছিল, যা ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্থানান্তর করে পাকিস্তান স্টেট ব্যাংকের লাহোর শাখায় পাঠানো হয়।’
তিনি বলেন, ‘দুই দেশের সম্পর্কের প্রতিবন্ধকতার আরেকটি বড় বিষয় হলো (বাংলাদেশে) আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন। অতীতে পাকিস্তান মাত্র ১ লাখ ২৫ হাজার নাগরিককে ফেরত নিয়েছে, অথচ এখনো প্রায় ৩ লাখ ২৫ হাজার মানুষ বাংলাদেশের ১৪টি জেলার ৭৯টি ক্যাম্পে বসবাস করছে।’
আজাদ বলেন, ‘এই বিষয়গুলোই দুই দেশের মধ্যে একটি সুস্থ ও ভবিষ্যৎমুখী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ে তোলার পথে দীর্ঘদিন ধরে বাধা হিসেবে রয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘এই সমস্যাগুলোর সমাধানের সবচেয়ে ভালো উপায় নিঃসন্দেহে আলোচনা—আর অন্তর্বর্তী সরকার ঠিক এটিই করার চেষ্টা করছে। অনেক বছর পর পাকিস্তানকে আলোচনার টেবিলে আনা হয়েছে এবং আলোচনার সময় যথাযথভাবে এই বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে—একই সঙ্গে পারস্পরিক সুবিধার জন্য বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও অনুসন্ধান করা হচ্ছে।’
উপ-প্রেস সচিব স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চলতি বছরের শুরুতে মিসরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক অমীমাংসিত বিষয়গুলো সমাধানের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছিলেন এবং বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আমনা বালুচের সঙ্গে বৈঠকের সময় তিনি আবারও সেই আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।’
‘তবে একই বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস জোর দিয়ে বলেন, এই অঞ্চলের বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পাকিস্তানসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে একটি দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রয়োজন আছে।’
উপ-প্রেস সচিব বলেন, 'সম্ভবত এখনই সময় ভবিষ্যতের স্বার্থে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের অতীতের বিষয়গুলো নিরসন করে একসঙ্গে কাজ করার।'
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- হলে ঢাবি ছাত্রীর হঠাৎ অসুস্থতা, হাসপাতালে মৃত্যু
- মার্জিন ঋণে মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ডে বিনিয়োগ করা যাবে না
- ‘পদত্যাগ করতে পারেন ড. ইউনূস’
- শেয়ারবাজারের ৬ ব্যাংকের রেকর্ড মুনাফা, ৫ ব্যাংকের লোকসান
- বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পছন্দের শীর্ষে পাঁচ শেয়ার
- ঢাবির হলে 'গাঁ’জার আসর', চার শিক্ষার্থীকে আটক
- ১২ আগস্ট : শেয়ারবাজারের সেরা ৯ খবর
- মার্জিন ঋণ নিয়ে গুজব: ফের অস্থির শেয়ারবাজার
- দুই কোম্পানির অস্বাভাবিক শেয়ারদর: ডিএসইর সতর্কবার্তা জারি
- অস্বাভাবিক শেয়ার দাম: ডিএসইর সতর্কবার্তা জারি
- বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘লাল তালিকা’য় ২০ আর্থিক প্রতিষ্ঠান
- বেক্সিমকো-বেক্সিমকো ফার্মাসহ চার ব্যক্তি-এক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা-সতর্ক
- সামিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র কিনছে আরব আমিরাতের কোম্পানি
- বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের নতুন কমিটির অভিষেক শনিবার
- বিসিএসে স্বতন্ত্র বিভাগে অন্য বিভাগ অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবিতে বিক্ষোভ