ঢাকা, রবিবার, ১৭ আগস্ট ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২
গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি নবায়নে যৌথ টেকনিক্যাল কমিটির প্রস্তাবনা
.jpg)
ডুয়া নিউজ: গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি নবায়নের জন্য যৌথ টেকনিক্যাল কমিটি করার আলোচনা করছে বাংলাদেশ ও ভারত। আগামী তিন মাসের মধ্যে যৌথ নদী কমিশন গঠন করা হবে বলে বাংলাদেশ সূত্রে জানা গেছে।
কমিশন এ বিষয়ে ইতিমধ্যে একটি প্রস্তুতি কমিটি করেছে। ওই কমিটির একটি সভাও হয়েছে। কমিটির মতামত অনুযায়ী, ভারতের নদী কমিশনকে যৌথ টেকনিক্যাল কমিটি গঠনের প্রস্তাব করবে বাংলাদেশ।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা ও ফারাক্কায়৩ থেকে ৮ মার্চ অনুষ্ঠিত হচ্ছে যৌথ নদী কমিশনের ৮৬তম বৈঠক। এ বৈঠকে অংশ নিতে বাংলাদেশের যৌথ নদী কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ আবুল হোসেনের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সোমবার (৩ মার্চ) সকালে ঢাকা ছেড়েছে।
ভারত সফরে যাওয়ার আগে মোহাম্মদ আবুল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, এবারের যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে ১১টি এজেন্ডা রয়েছে। কিন্তু সেখানে গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি নবায়নের বিষয়টি নেই। কারণ এ বিষয়ে যৌথ নদী কমিশন আলাদা আলোচনা করবে।
'বাংলাদেশ ইতিমধ্যে একটি প্রস্তুতি কমিটি গঠন করেছে। ওই কমিটির একটি সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। কমিটি জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন মাথায় রেখে পরবর্তী চুক্তিটি করতে হবে।'
তিনি বলেন, পর্যালোচনা করার জন্য কমিটি একটি যৌথ টেকনিক্যাল কমিটি করার সুপারিশ করেছে। সে অনুযায়ী বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতীয় পক্ষকে উভয় দেশের পানিসম্পদ সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে জানানো হয়েছে। 'ভারতও জয়েন্ট টেকনিক্যাল কমিটি করার পক্ষে। আগামী তিন মাসের মধ্যে এ কমিটি গঠন করা হবে। এতে উভয় দেশ থেকে তিনজন করে সদস্য থাকবেন,' বলেন তিনি।
বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল ফারাক্কায় গঙ্গার পানি প্রবাহ সরেজমিনে দেখবে এবং উজানে পানি প্রবাহের তথ্যও সংগ্রহ করবে বলে জানান মোহাম্মদ আবুল হোসেন।
১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি হয়। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩০ বছর মেয়াদি এই চুক্তি করেন।
এই চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ফারাক্কায় গঙ্গা নদীতে যে পানিপ্রবাহ তৈরি হয়, সেটি দুই দেশ ভাগ করে নেয়।
চুক্তিতে বলা হয়েছে, ফারাক্কায় গঙ্গার পানির পরিমাণ ৭০ হাজার কিউসেক পর্যন্ত হলে দুই দেশ সমান সমান, অর্থাৎ মোট পানির ৫০ শতাংশ করে পাবে। আর পানির পরিমাণ ৭০ হাজার কিউসেকের বেশি কিন্তু সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার কিউসেক পর্যন্ত হলে বাংলাদেশ পাবে সর্বোচ্চ ৩৬ হাজার কিউসেক পাবে, অবশিষ্ট পানি পাবে ভারত।
কিন্তু ফারাক্কা পয়েন্টে গঙ্গার পানির পরিমাণ ৭৫ হাজার কিউসেকের বেশি হলে ভারত ৪০ হাজার কিউসেক রেখে বাকি পানি বাংলাদেশকে দিয়ে দেবে। এই পানি ভাগ হয় প্রতি ১০ দিনের পানির পরিমাণ হিসাব করে।
তবে চুক্তিতে শর্ত রয়েছে যে, ১১ মার্চ থেকে ১০ মে পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ ও ভারত ১০ দিন ১০ দিন করে গ্যারান্টিযুক্তভাবে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি পাবে। অর্থাৎ ১১ মার্চ থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ গ্যারান্টিযুক্তভাবে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি পাবে, তার পরের ১০ দিন ভারত গ্যারান্টিযুক্তভাবে ২৫ হাজার কিউসেক পানি পাবে। এভাবে ১০ মে পর্যন্ত চলতে থাকবে।
এই সময়ে পানির প্রবাহ তুলনামূলকভাবে কম থাকে। সেজন্য উভয় দেশ প্রতি দশ দিনে গ্যারান্টিযুক্তভাবে ৩৫ হাজার কিউসেক পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে চুক্তিতে এই শর্ত রেখেছে। যৌথ নদী কমিশন সূত্রমতে, এই চুক্তি করা হয়েছিল ১৯৪৯ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত গঙ্গা নদীর পানির গড় প্রবাহ ধরে। এই চুক্তি অনুযায়ী গত ২৮ বছর ধরে বাংলাদেশ-ভারত পানি ভাগ করে আসছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৮৭ কিউসেক পানি পেয়েছে। আর এ সময়ে ভারত পেয়েছে ২ লাখ ৩৪ হাজার ৬৬৮ কিউসেক পানি।
২০২৬ সালের ডিসেম্বরে এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। ২০২৪ সালে হাসিনার ভারত সফরের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানিয়েছিলেন, গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি নবায়ন নিয়ে দুই দেশ বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে পর্যালোচনায় রাজি হয়েছে।
কিন্তু গত বছরের আগষ্টে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কে আগের মত উষ্ণতা নেই। অনেক ক্ষেত্রেই দুই দেশের সরকার একে অপরকে প্রকাশ্যে সমালোচনা করে আসছে।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে। গঙ্গা ছাড়া আর কোনো নদীর পানি বণ্টনের চুক্তি হয়নি। তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে অনেকদিন ধরে আলোচনা হলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে এ নিয়ে চুক্তি হয়নি।
বৈঠকে যেসব বিষয়ে আলোচনা হবেএবারের বৈঠকে ধরলা, দুধকুমার, গোমতী, খোয়াই, মনু ও মুহুরীসহ মোট ১৪টি নদীর পানি বণ্টন চুক্তি করার বিষয়ে বাংলাদেশ প্রস্তাব করবে। বাংলাদেশ চায় এসব নদীর পানি উভয় দেশ আন্তর্জাতিক পদ্ধতি মেনে ব্যবহার করুক।
উজানের পানির চাপে বাংলাদেশে যেহেতু বন্যা হয়, সেজন্য বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে বন্যা পূর্বাভাস মডেল তৈরি করতে চায়। এবারের নদী কমিশনের বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ প্রস্তাব দেওয়া হবে। এছাড়া সরাসরি তথ্য বিনিময় করার প্রস্তাবও থাকবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ জয়েন্ট ফ্লাড ফোরকাস্টিং সিস্টেম দাঁড় করাতে চায়।
এবারের যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে বাংলাদেশ যাতে পানি উত্তোলন করতে পারে, সে বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন মোহাম্মদ আবুল হোসেন।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- হলে ঢাবি ছাত্রীর হঠাৎ অসুস্থতা, হাসপাতালে মৃত্যু
- মার্জিন ঋণে মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ডে বিনিয়োগ করা যাবে না
- ‘পদত্যাগ করতে পারেন ড. ইউনূস’
- শেয়ারবাজারের ৬ ব্যাংকের রেকর্ড মুনাফা, ৫ ব্যাংকের লোকসান
- বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পছন্দের শীর্ষে পাঁচ শেয়ার
- ঢাবির হলে 'গাঁ’জার আসর', চার শিক্ষার্থীকে আটক
- ১২ আগস্ট : শেয়ারবাজারের সেরা ৯ খবর
- মার্জিন ঋণ নিয়ে গুজব: ফের অস্থির শেয়ারবাজার
- ডিএসইর সতর্কবার্তার জালে দুর্বল দুই কোম্পানির শেয়ার
- দুই কোম্পানির অস্বাভাবিক শেয়ারদর: ডিএসইর সতর্কবার্তা জারি
- অস্বাভাবিক শেয়ার দাম: ডিএসইর সতর্কবার্তা জারি
- সামিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র কিনছে আরব আমিরাতের কোম্পানি
- বেক্সিমকো-বেক্সিমকো ফার্মাসহ চার ব্যক্তি-এক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা-সতর্ক
- বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের নতুন কমিটির অভিষেক শনিবার
- বিসিএসে স্বতন্ত্র বিভাগে অন্য বিভাগ অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবিতে বিক্ষোভ