ঢাকা, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২
ঘনঘন শিক্ষাক্রম পরিবর্তনে দিশেহারা শিক্ষার্থীরা
.jpg)
ডুয়া নিউজ : দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলেছিল করোনা ভাইরাস। সেসময় ব্যাহত হয় প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থীর পড়ালেখা। ধাপে ধাপে এ অচলাবস্থা কাটানোর চেষ্টা হলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে গত কয়েকবছরে বারবার হোঁচট খেয়েছে দেশের শিক্ষাক্ষেত্র। সর্বশেষ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষাক্ষেত্রে নানামুখী সমস্যা আরও তীব্র হয়। আন্দোলনের কারণে দীর্ঘ চার মাস বন্ধ ছিল সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এরপর তা খুললেও এখনো স্বাভাবিক হয়নি। নানা দাবি, আন্দোলনে শিক্ষা কার্যক্রম বারবার ব্যহত হচ্ছে। কাটছে না সেশন জটের শঙ্কাও। অন্যদিকে ঘনঘন শিক্ষাক্রম পরিবর্তনে দিশেহারা হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
স্বাধীনতার পর দেশে শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন এসেছে সাত বার। এই সময়ে মূল্যায়ন পদ্ধতির পরিবর্তন হয়েছে তিন বার। সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন হয়েছে গত দেড় দশকে। শিক্ষাবিদরা বলছেন, স্বাধীনতার ৫ দশকেরও অধিক সময় পার হলেও দেশের শিক্ষাক্রম কী হবে-তা এখনো দেশের বাস্তবতার নিরিখে সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ হয়নি। শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়াই ঘন ঘন শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের ওপর। একটি নতুন শিক্ষাক্রমে অভ্যস্ত হতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনেক সময় চলে যায়। এভাবে একের পর এক নতুন শিক্ষাক্রমের সঙ্গে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বাধ্য হয়ে মানিয়ে নিতে হচ্ছে। ব্রিটিশ শাসনামল থেকে চলে আসছে পরীক্ষানির্ভর মূল্যায়ন পদ্ধতি। তবে এই শিক্ষাক্রম বাদ দিয়ে হুট করে ২০২৩ সাল থেকে অভিজ্ঞতানির্ভর মূল্যায়ন শুরু করেছিল পতিত আওয়ামী লীগ সরকার। এই শিক্ষাক্রমে শেখানোর পন্থা, মূল্যায়ন ব্যবস্থাসহ শিক্ষার প্রচলিত পদ্ধতিই বদলে ফেলা হয়েছিল। একের পর এক শিক্ষাক্রম পরিবর্তনে পালটে যায় শ্রেণিকক্ষের পাঠদান ও মূল্যায়ন পদ্ধতি। এতে দিশেহারা হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা। অভিভাবক মহলে তুমুল সমালোচিত নতুন শিক্ষাক্রম থেকে গত ১ সেপ্টেম্বর মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। শিক্ষকদের প্রস্তুতির ঘাটতি, পাঠ্য বিষয়, মূল্যায়ন নিয়ে অস্পষ্টতা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাবকে দায় দিয়ে এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, এতে অপচয় হয়েছে জনগণের শত শত কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টদের মতে, নতুন শিক্ষাক্রম থেকে সরকার মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় শিক্ষক প্রশিক্ষণের পুরো টাকাই অপচয় হয়েছে।
অন্যদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বয়স চার মাস পার হলেও শিক্ষা ও শিক্ষা প্রশাসন সংস্কার নিয়ে তেমন কোনো সুখবর পাওয়া যায়নি। দেশের নানা ক্ষেত্র সংস্কারের জন্য কমিশন গঠন করা হলেও শিক্ষা সংস্কার নিয়ে কোনো কমিশন গঠিত হয়নি। শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত বছরগুলোয় সমাজ ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠনের সময়ই ‘শিক্ষা কমিশন’ গঠন করা দরকার ছিল। সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টাও শিক্ষা কমিশনসহ আরও কিছু সংস্কার কমিশন গঠনের কথা বললেও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জন’-এর জন্য গঠিত সমন্বয় কমিটিও সমালোচনার কারণে বাতিল করেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে বিভিন্ন কমিশন গঠন হলেও কোনও শিক্ষা কমিশন গঠন হয়নি, যা দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি সরকারের সময়কার সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. আ ন ম এহসানুল হক মিলন। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে বিভিন্ন কমিশন গঠিত হলেও কোনো শিক্ষা কমিশন গঠন হয়নি, যা দুঃখজনক। অথচ আমরা একটি পার্মানেন্ট শিক্ষা কমিশন আশা করেছিলাম। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বেশ কয়েকবার শিক্ষা কমিশন গঠন করা হলেও তা যথাযথ সুফল বয়ে আনতে পারেনি। আমরা চাই এই দফায় একটি শিক্ষা কমিশন গঠন হবে। যারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বিতভাবে শিক্ষা সংস্কারে কাজ করবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান খান, শিক্ষা নিয়েই তো প্রথম সংস্কার কমিশন হওয়া উচিত। যত কমিশনই হোক, মানুষ যদি সুশিক্ষিত না হয় কোনো সিস্টেমে কাজ হবে না। শিক্ষকদের যদি অবমূল্যায়ন করা হয়, তাহলে শিক্ষকতা পেশার প্রতি মানুষ আকৃষ্ট হবে না।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- শেয়ারবাজারে বিস্ময়: এক লাখ টাকার শেয়ার ৮০ কোটি!
- ডিভিডেন্ডের উপর উচ্চ কর: শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ
- মুনাফা থেকে লোকসানে তথ্য প্রযুক্তির দুই কোম্পানি
- বদলে গেছে ধারণা, বিস্মিত ইসরায়েল
- শেয়ারবাজারের শর্ত পূরণে ৬০ কোম্পানিকে বিএসইসির আল্টিমেটাম
- মূলধন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত শেয়ারবাজারের ১৩ ব্যাংকের
- শেয়ারবাজারের ১০ ব্যাংকে আমানত বেড়েছে ৩২ হাজার কোটি টাকা
- নীলক্ষেত হোস্টেল থেকে ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থীর ম’রদেহ উদ্ধার
- ইরানকে হা-ম-লা বন্ধে প্রস্তাব
- ঢাবিতে হটাৎ ছাত্রলীগের বিক্ষোভ, ককটেল বি-স্ফো-র-ণ
- কারাগারে ফাঁসিতে ঝুললেন সেই অস্ত্রধারী আ’লীগ নেতা
- দুই বড় খবরের মধ্যে আজ খুলছে দেশের শেয়ারবাজার
- ডিভিডেন্ড বেড়েছে শেয়ারবাজারের সাত ব্যাংকের
- মূলধনের বেশি রিজার্ভ জ্বালানি খাতের ১৪ কোম্পানির
- মুনাফা বেড়েছে ১৮ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির