ঢাকা, সোমবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

যমুনা–পদ্মা–মেঘনার ২,৩৪০ কোটি আটকে, নিরীক্ষকদের উদ্বেগ

২০২৫ ডিসেম্বর ০৮ ০৬:৫৯:৪৪

যমুনা–পদ্মা–মেঘনার ২,৩৪০ কোটি আটকে, নিরীক্ষকদের উদ্বেগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত তিন তেল বিপনন প্রতিষ্ঠান—যমুনা অয়েল, পদ্মা অয়েল ও মেঘনা পেট্রোলিয়াম—এখন গুরুতর আর্থিক ঝুঁকির মুখোমুখি। পাঁচটি দুরবস্থাগ্রস্ত ব্যাংকে রাখা মোট ২ হাজার ৩৪০ কোটি টাকার স্থায়ী আমানত আটকে যাওয়ায় কোম্পানিগুলোর আর্থিক স্বাস্থ্য নিয়ে নিরীক্ষকেরা বড় ধরনের সতর্কবার্তা দিয়েছেন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের অডিট রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, এসব এফডিআরের মেয়াদ শেষ হলেও তীব্র তারল্য সংকটে থাকা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো অর্থ পরিশোধ করতে পারছে না।

এই স্থায়ী আমানতগুলো রাখা হয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংকে—যেগুলো সম্প্রতি একীভূত হয়ে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’ নামে নতুন ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করেছে। এর মধ্যে যমুনা অয়েল সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে রয়েছে; প্রতিষ্ঠানটির ১ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা উদ্ধার-অনিশ্চয়তায় আছে। শুধু ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকেই আটকে আছে ৭২০ কোটি টাকা, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে ৪৩২ কোটি এবং ইউনিয়ন ব্যাংকে প্রায় ২৮৯ কোটি টাকা। মেঘনা পেট্রোলিয়ামের আটকে থাকা অঙ্ক ৫৪০ কোটি এবং পদ্মা অয়েলের ৩৩৯ কোটি।

১০ থেকে ১২.৫ শতাংশ সুদে এই এফডিআরগুলো এতদিন রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানিগুলোর অ-পরিচালন আয়ের উল্লেখযোগ্য উৎস হিসেবে কাজ করলেও এখন তা উদ্বেগজনক আর্থিক ঝুঁকিতে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন স্বনামধন্য অডিট ফার্ম তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ব্যাংকগুলোর তারল্য পরিস্থিতি এতটাই দুর্বল ছিল যে একীভূত না হয়ে উপায় ছিল না, তবুও তেল কোম্পানিগুলোর জমা অর্থ ফেরত পাওয়ার কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। অডিটরদের মতে, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিবেদন মান অনুযায়ী এসব আমানতের বিপরীতে ক্রেডিট লস বরাদ্দ না রাখলে কোম্পানির সম্পদ প্রকৃত অবস্থার চেয়ে বেশি দেখানোর ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

যমুনা, মেঘনা ও পদ্মা অয়েলের আটকে থাকা টাকার পরিমাণ বিশাল হওয়ায় কোম্পানিগুলোর ওপর চাপ বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভাষ্য, যেহেতু সমস্যা থাকা ব্যাংকগুলো এখন সরকারের অধীনে একীভূত হয়েছে, তাই তারা তহবিল উদ্ধারে সরকারের সিদ্ধান্ত ও ভবিষ্যৎ নির্দেশনার ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছেন। তাঁদের দাবি, অতীতে রাজনৈতিক প্রভাব ও লবিংয়ের কারণে পূর্ববর্তী ব্যবস্থাপনা ঝুঁকিপূর্ণ এসব ব্যাংকে বিপুল অঙ্কের আমানত রেখেছিল, যার দায় বর্তমানে তারা বহন করছেন।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানিগুলো তাদের মূল ব্যবসার চেয়ে সুদের আয়ে বেশি ঝুঁকে পড়েছিল, যা দীর্ঘমেয়াদে দুর্বল ব্যবসায়িক কাঠামো তৈরি করেছে। উচ্চঝুঁকির ব্যাংকে বড় অঙ্কের আমানত রাখায় ভবিষ্যতে কোম্পানিগুলোর আয়ের প্রবৃদ্ধি ও ডিভিডেন্ড প্রদানের সক্ষমতা ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলেও তারা মনে করেন।

এএসএম/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত