ঢাকা, শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

ভূমিকম্পের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে যেসব অঞ্চল-দেখে নিন তালিকা

২০২৫ নভেম্বর ২৭ ২৩:৫২:২৩

ভূমিকম্পের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে যেসব অঞ্চল-দেখে নিন তালিকা

সরকার ফারাবী: ভূমিকম্পের ঝুঁকি বিবেচনা করে বাংলাদেশকে মোট তিনটি ভৌগোলিক জোনে ভাগ করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা জোন–১, মাঝারি ঝুঁকির অঞ্চল জোন–২, আর তুলনামূলক নিম্নঝুঁকির এলাকা জোন–৩ হিসেবে চিহ্নিত। আবহাওয়া অধিদপ্তর প্রকাশিত একটি মানচিত্রে দেশের ভূমিকম্প–সংবেদনশীল অঞ্চলগুলোর সুনির্দিষ্ট চিহ্নায়ন রয়েছে।

মানচিত্র অনুযায়ী দেশের উত্তর ও দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলা জোন–১–এ অন্তর্ভুক্ত, যেখানে কম্পনের আশঙ্কা সর্বোচ্চ। সাধারণত সক্রিয় প্লেট বাউন্ডারি বা ফল্ট লাইনের সংলগ্ন অঞ্চলেই ভূমিকম্পের ঝুঁকি বেশি থাকে। সেই হিসেবে সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের মোট ৯টি জেলা, টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও নরসিংদীর অংশবিশেষ, পুরো কিশোরগঞ্জ জেলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি–রাঙামাটির বড় অংশ উচ্চঝুঁকির তালিকায় রয়েছে। অন্যদিকে খুলনা, যশোর, বরিশাল ও পটুয়াখালীকে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ অর্থাৎ জোন–৩ এলাকা হিসেবে ধরা হয়।

১৯৭৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দেশে অন্তত পাঁচবার শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এসব ভূকম্পনের অধিকাংশ উৎসস্থল ছিল সিলেট, মৌলভীবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান ও কক্সবাজার অঞ্চলে যা ভবিষ্যতেও বড় মাত্রার কম্পনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয় না। ভারতের আসাম ও মেঘালয়ের সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় সিলেট–ময়মনসিংহও দীর্ঘদিন ধরেই উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, বাংলাদেশের চারপাশে অন্তত পাঁচটি সম্ভাব্য কম্পন–উৎপত্তিস্থল বিদ্যমান। এর মধ্যে প্লেট বাউন্ডারি–১ মিয়ানমার থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত বিস্তৃত, প্লেট বাউন্ডারি–২ নোয়াখালী থেকে সিলেট অঞ্চলজুড়ে, আর প্লেট বাউন্ডারি–৩ সিলেট হয়ে ভারতের ভেতরে প্রবেশ করেছে। তাছাড়া ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে ডাউকি ফল্ট এবং মধুপুর ফল্ট রয়েছে যেগুলোও শক্তিশালী ভূমিকম্পের উৎস হিসেবে বিবেচিত।

রাজউকের পরিসংখ্যান বলছে, রাজধানী ঢাকায় প্রায় ২১ লাখ ভবন রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৫ লাখ ভবন দ্বিতীয় তলা বা তার কম উচ্চতার ফলে সেগুলোর ঝুঁকি তুলনামূলক কম। কিন্তু বাকি প্রায় ৬ লাখ ভবন ৪ থেকে ৩০ তলা পর্যন্ত উঁচু, আর সেগুলোকে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ধরা হচ্ছে। বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে এসব ভবন ধসে ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা তাই ঝুঁকিপূর্ণ কাঠামোগুলো সংস্কারের মাধ্যমে ভূমিকম্প সহনশীল করার ওপর জোর দিচ্ছেন।

ভূমিকম্পকে বিশ্বের সবচেয়ে অনিশ্চিত ও বিধ্বংসী দুর্যোগগুলোর একটি হিসেবে উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলেন এটি আটকানো সম্ভব না হলেও আগাম পূর্বাভাস ও প্রস্তুতি ক্ষয়ক্ষতি অনেক কমাতে পারে। উন্নত দেশগুলোতে এই বিষয়ে বড় ধরনের গবেষণা চলছে। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র ভূমিকম্প পূর্বাভাস প্রযুক্তিতে বিপুল বিনিয়োগ করছে।

এ প্রসঙ্গে মতামত জানতে চাইলে বুয়েটের অধ্যাপক ডা. মেহেদী আহমেদ আনসারী জানান, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরেই ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। সাম্প্রতিক ৫.৭ মাত্রার ভূকম্পন এরই ইঙ্গিত দেয়। তিনি আরও বলেন, ঢাকা থেকে মাত্র ৬০ কিলোমিটার দূরে হওয়া মাঝারি মাত্রার কম্পনেই যখন ভবনের ক্ষতি হচ্ছে, তখন আরও বড় কম্পন হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। রাজধানীতে এখনো বিল্ডিং কোড মানা ছাড়াই অসংখ্য ভবন নির্মাণ হচ্ছে এটি খুবই উদ্বেগজনক এবং সরকারকে এখনই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

ট্যাগ: দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশ ভূমিকম্প Earthquake Alert ভূমিকম্প সতর্কতা Earthquake মধুপুর ফল্ট ডাউকি ফল্ট Bangladesh earthquake Madhupur Fault Dauki Fault ভূমিকম্প মানচিত্র earthquake news earthquake update ভূমিকম্প ঝুঁকি ভূমিকম্প সংবাদ ভূমিকম্প প্রস্তুতি Earthquake preparedness ভূমিকম্প আপডেট প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলাদেশ ভূমিকম্প গবেষণা ভূমিকম্প বিশ্লেষণ বিল্ডিং কোড বাংলাদেশ ভূমিকম্প জোন জোন ১ এলাকা সিলেট ভূমিকম্প ময়মনসিংহ ভূমিকম্প ঢাকা ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রাজউক ভবন জরিপ প্লেট বাউন্ডারি বাংলাদেশ ভূকম্পন রেকর্ড ঢাকার ভবন ঝুঁকি সিসমিক জোন বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ জেলা seismic zones Bangladesh earthquake risk map zone 1 area Sylhet earthquake risk Mymensingh seismic risk Dhaka vulnerable buildings RAJUK building data Bangladesh building code plate boundary Bangladesh earthquake hazard map seismic activity Bangladesh natural disaster Bangladesh earthquake research Dhaka high-rise risk seismic zone map seismic analysis high-risk districts disaster management Bangladesh dhaka earthquakes

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত