ঢাকা, শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৫, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
দেশের যে অঞ্চল রেড জোন: যেকোনো সময় আঘাত হানতে পারে ভূমিকম্প
সরকার ফারাবী: উত্তরাঞ্চলের মূল নগরী রংপুরকে প্রায় তিন দশক আগে ভূমিকম্পের ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও এখনো পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো প্রতিরোধমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি এমন অভিযোগ স্থানীয়দের। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বহুতল ভবনের সংখ্যা, কমছে মাটির ধারণক্ষমতা, আর ভূমিকম্পের মাত্রা ও ঘনত্ব ক্রমেই বাড়ছে। গত ১৬ বছরে কেবল রংপুরেই বড়–ছোট মিলিয়ে রেকর্ড হয়েছে ১৮৫টি ভূমিকম্প, যা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অনেক বেশি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান ভূগর্ভীয় কাঠামো ও মাটির বৈশিষ্ট্য বলছে রংপুর যেকোনো সময় ভয়াবহ ভূমিকম্পের মুখোমুখি হতে পারে। অতীতে এ অঞ্চলের বাসিন্দারা বারবার বড় মাত্রার ভূকম্পনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন। ২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল ৭.৫ মাত্রার উৎসস্থল থেকে আসা কম্পনে প্রায় আধা মিনিট কেঁপেছিল পুরো নগরী। এর আগে একই বছরের ৫ জানুয়ারির ভোরে ৬.৭ মাত্রার দুটি ধাক্কায় পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। ২০১১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ৬.৮ মাত্রার দীর্ঘ কম্পন আজও মানুষের মনে আতঙ্কের স্মৃতি হয়ে আছে।
সর্বশেষ ২১ নভেম্বর ২০২৫ নরসিংদীর ঘোরাশাল থেকে ৪০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্বে ভূমিকম্প হলেও রংপুরে তার কম্পন স্পষ্ট অনুভূত হয়। বিশেষজ্ঞরা এটিকে উত্তরাঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা হিসেবে দেখছেন।
দুই সক্রিয় ফল্টের চাপের কেন্দ্রে রংপুর
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোস্তাফিজুর রহমান জানান, রংপুর অবস্থান করছে দুই ভয়ঙ্কর সক্রিয় ফল্ট মধুপুর ফল্ট ও শিলং ফল্ট এর মধ্যবর্তী অঞ্চলে। ফলে এখানে ভূমিকম্পের চাপ অত্যন্ত বেশি। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ তিনটি ভূমিকম্প জোনে বিভক্ত। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সিলেট, আর তার পরেই রংপুর।”
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ১৮ শতকের শেষ দিকে চিলমারী অঞ্চলে ৮.৫ মাত্রার ভয়ংকর ভূমিকম্প হয়েছিল, যার ফলেই যমুনা নদীর বর্তমান প্রবাহ তৈরি হয়। গবেষকদের ধারণা, তেমন মাত্রার ভূমিকম্প আবারও ঘটতে পারে।
মাটির নিচে বিপদের সঞ্চয়
গত ১৫ বছরে রংপুর অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ জলস্তর ২০–৩০ ফুট পর্যন্ত নেমে গেছে। ফলে ভূমির ওপর চাপ বাড়ছে, মাটি হচ্ছে ফাঁপা ও দুর্বল যা শক্তিশালী ভূমিকম্পে সহজেই ধসে পড়তে পারে।
আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, ২০০৯ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ২১ নভেম্বর পর্যন্ত ১৮৫টি ভূমিকম্প রেকর্ড হয়েছে। এর মধ্যে
২০০৭ সালে ২৫ বার
২০০৮ সালে ৪০ বার
২০০৯ সালের আগস্টে ৫ বার, সেপ্টেম্বরে ৩ বার
২০১০ সালে ২ বার
২০২০ সালে ভয়াবহ রেকর্ড—মোট ৭৪ বার, এর মধ্যে
মাত্রা ৩–৪ : ৩৫ বার
মাত্রা ৪–৫ : ৩৩ বার
মাত্রা ৫–৬ : ৬ বার
এ ছাড়া ৬ এপ্রিল ২০২১ রংপুরসহ কয়েক জেলায় ৫.১ মাত্রার কম্পন এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ বদরগঞ্জে ২.৯ ও ভুরুঙ্গামারীতে ২.৪ মাত্রার হালকা কম্পন অনুভূত হয়।
ঘোষণা আছে, বাস্তবায়ন নেই
প্রায় ২৯ বছর আগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় রংপুরকে রেড জোন ঘোষণা করেছিল। কিন্তু বাস্তবে নগরের সর্বত্র গড়ে উঠছে অনুমোদনবিহীন বহুতল ভবন। মডার্ন মোড়, শাপলা চত্বর, ধাপ, মেডিকেল রোড, সেনপাড়া, জুম্মাপাড়া সব জায়গায় ভবনের ঘনত্ব এখন সর্বোচ্চ। বেশিরভাগ ভবনেই নেই কাঠামোগত নিরাপত্তা।
২০১৬ সালের সিটি করপোরেশনের জরিপে ৪৭টি ঝুঁকিপূর্ণ সরকারি ভবন চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ সুপার কার্যালয়, পুরাতন সার্কিট হাউস, ট্রেজারি ভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে যেখানে এখনো কার্যক্রম চলছে অস্থায়ী সংস্কার দিয়ে।
২০২০ সালে সেনাবাহিনীর উদ্যোগে রংপুর সেনানিবাসে পাঁচটি দপ্তর নিয়ে ভূমিকম্প মোকাবিলায় একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হলেও এখনো তা বাস্তবায়ন হয়নি।
উদ্ধার সক্ষমতা সীমিত
ফায়ার সার্ভিসের কাছে পর্যাপ্ত ক্রেন, কাটিং মেশিন, প্রেশার লিফটিং যন্ত্র নেই। বড় বিপর্যয়ে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রংপুর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) বাদশা মাসুদ আলম বলেন, “রংপুর ভৌগোলিকভাবে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ৬ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প হলে প্রাণহানির আশঙ্কা ভয়াবহ হতে পারে।”তিনি জানান, তারা সচেতনতা কার্যক্রম চালালেও এটি বড় বিপর্যয় ঠেকাতে যথেষ্ট নয়।
সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ অনুযায়ী বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে-
কেন্দ্রীয় নগর এলাকা: স্টেশন রোড, জাহাজ কোম্পানি মোড়, শাপলা চত্বর, বড়বাড়ী, লালবাগ, ধাপ
অনুমোদনহীন বহুতল এলাকা: মেডিকেল রোড, সেনপাড়া, জুম্মাপাড়া, মডার্ন মোড়
দুর্বল সরকারি স্থাপনা: COB এলাকা, পুরাতন হাসপাতাল ভবন, পুরাতন সরকারি দপ্তর
যে দাবি বহু বছর ধরেই ঝুলে আছে
রংপুরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবিগুলো হলো—
বিল্ডিং কোড কঠোরভাবে বাস্তবায়ন
ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে সরকারি কার্যক্রম বন্ধ
ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ল্যাব স্থাপন
ফায়ার সার্ভিসের আধুনিকীকরণ
নগরজুড়ে জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র ও নিয়মিত মক ড্রিল
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলক ভূমিকম্প প্রশিক্ষণ
রেড জোন ঘোষণা করা হলেও রংপুরে প্রস্তুতির ঘাটতি প্রকট। জনবহুল এলাকা, দুর্বল অবকাঠামো ও অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণ মিলিয়ে বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হবে ভয়াবহ। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন সময় খুবই সীমিত। এখনই প্রস্তুতি না নিলে রংপুরকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মূল্য দিতে হবে।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- বাংলাদেশ বনাম আয়ারল্যান্ডের ২য় টেস্টের ৪র্থ দিনের খেলা শেষ-দেখুন স্কোর
- বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান: ম্যাচটি সরাসরি(LIVE) দেখুন এখানে
- চলছে বাংলাদেশ বনাম আয়ারল্যান্ডের ২য় টেস্ট ম্যাচ: খেলাটি সরাসরি দেখুন(LIVE)
- ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা-বাংলাদেশের ম্যাচ: কবে, কখন, কোথায়-দেখুন সময়সূচি
- চলছে ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার ২য় টেস্ট: খেলাটি সরাসরি দেখুন এখানে
- বাংলাদেশ বনাম ভারত: সুপার ওভার শেষ, দেখুন ফলাফল
- পরবর্তী ব্রাজিল-বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের ম্যাচ কবে-প্রতিপক্ষ কারা
- বাংলাদেশ বনাম ভারত টি-২০ ম্যাচ: বোলিংয়ে বাংলাদেশ-সরাসরি দেখুন এখানে
- শুক্রবার গ্যাসের চাপ কম থাকবে যেসব এলাকায়
- ঢাবির শীতকালীন ছুটিনিয়ে যা জানা গেল
- আইসিবিকে নতুন তহবিল দেবে না সরকার, ঘুরে দাঁড়ানো আরও কঠিন
- বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তান: টি-টোয়েন্টি ফাইনাল ম্যাচ-কখন, কোথায়-দেখবেন যেভাবে
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
- ভারত বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা: চাপে ভারত-খেলাটি সরাসরি(LIVE) দেখুন
- বাংলাদেশ বনাম আয়ারল্যান্ড: ব্যাটিংয়ে আয়ারল্যান্ড, দেখুন স্কোর-LIVE