ঢাকা, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২

আজ সুপার সাইক্লোন সিডর দিবস

২০২৫ নভেম্বর ১৫ ০৯:৫৪:৩৭

আজ সুপার সাইক্লোন সিডর দিবস

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ভয়াবহ সুপার সাইক্লোন সিডরের আঘাতে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে বাগেরহাটের শরণখোলা এলাকা পরিণত হয়েছিল মৃত্যুপুরীতে। সহস্রাধিক মানুষের প্রাণহানি এবং বসতঘর, গবাদিপশু ও ফসলের ধ্বংস সেই বিভীষিকা আজও স্থানীয়দের স্মৃতিতে উজ্জ্বল।

সিডরের রাতের প্রবল জলোচ্ছ্বাস মুহূর্তেই ভাসিয়ে নিয়েছিল সব কিছু। দুর্বল বেড়িবাঁধ ভেঙে বলেশ্বর নদের প্লাবনে সাউথখালীসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। স্থানীয়রা এখনও সেই লাশের স্তুপ ও স্বজনহারা মানুষের বিলাপ ভুলতে পারেননি।

সিডরের প্রায় ৯ বছর পর, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারে চীনা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সিএইচডব্লিউআই ৬২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ শুরু করে। এর মধ্যে শরণখোলার বগী থেকে মোরেলগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

২০১৬ সালে প্রকল্প শুরু হলেও নানা কারণে এটি প্রায় সাত বছর পরে ২০২৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর পানি উন্নয়ন বোর্ডে হস্তান্তর করা হয়। তবে হস্তান্তরের দুই বছরের মধ্যেই ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। অন্তত ১১টি স্থানে সিসি ব্লক ধসে পড়েছে, কোথাও কোথাও মূল বাঁধ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যথাযথ সম্ভাব্যতা যাচাই ও নদী শাসন না করায় বাঁধ দ্রুত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, সিডরে তারা স্বজন হারিয়েছেন, ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। তারা টেকসই বাঁধ আশা করেছিলেন। গাবতলা গ্রামের মিজান হাওলাদার, দক্ষিণ সাউথখালীর আলমগীর হোসেন ও জাহাঙ্গীর খান জানান, বাঁধ উঁচু হলেও টেকসই হয়নি, নদী শাসন না করায় এক বছরের মধ্যেই ভাঙন শুরু হয়েছে।

ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ইতোমধ্যে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, অতি ঝুঁকিপূর্ণ এক হাজার মিটার এলাকায় প্রাথমিক ভাঙনরোধের কাজ শুরু হয়েছে। বগী এলাকার ৭০০ মিটারে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলা হচ্ছে। ফাশিয়াতলা এলাকাতেও জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হবে। এগুলো শেষ হলে শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জের কিছুটা হলেও সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।

স্থানীয়রা আশা করছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই জরুরি পদক্ষেপ কিছুটা হলেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। তবে তারা সতর্ক, বলেশ্বর নদীর নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও টেকসই নদী শাসন ছাড়া ভাঙন পুনরায় ঘটতে পারে। শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জবাসীর জন্য নিরাপদ ও স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসন, সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার তৎপরতা এখন সময়ের দাবি।

ইএইচপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত