ঢাকা, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২

মাইক্রো বেটিংয়ের জাল: ৪১ পয়সায় দেশের তরুণ বিপদে

২০২৫ নভেম্বর ১২ ১৫:২৯:০৯

মাইক্রো বেটিংয়ের জাল: ৪১ পয়সায় দেশের তরুণ বিপদে

নিজস্ব প্রতিনিধি :দেশে অনলাইন জুয়ার মহামারির মতো পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, এই ধরনের জুয়া মূলত দুবাই, মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে পরিচালিত হচ্ছে এবং তরুণদের লক্ষ্য করে প্রলোভনমূলক বিজ্ঞাপন ছড়িয়ে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক চক্রগুলো মাইক্রো বেটিং নামে পরিচিত পদ্ধতি ব্যবহার করছে, যেখানে সর্বনিম্ন ৪১ পয়সা বা ১ টাকার ক্ষুদ্র লেনদেনের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের আসক্ত করা হচ্ছে। এসব লেনদেন মোবাইল ব্যাংকিং, বিদেশি ই-ওয়ালেট ও ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে বহুস্তরীয় নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে আন্তর্জাতিকভাবে পাচার করা হয়।

দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা সহজেই এসব অনলাইন জুয়ার সাইটে প্রবেশ করতে পারছেন। জুয়ার সাইটগুলো ডাইনামিক লিংক, মিরর সাইট ও এআই-ভিত্তিক ক্যাপচা ব্যবহার করে সার্ভার ও ঠিকানা নিয়মিত পরিবর্তন করছে। ফলে শুধুমাত্র ডোমেইন ব্লক করলেই সাইটগুলো নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এছাড়া, ক্ষুদ্র লেনদেনগুলো জেসন বডির মাধ্যমে লুকানো হয়, যা সাধারণ মনিটরিং সিস্টেমে ধরা পড়ে না।

গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, অনলাইন জুয়া এখন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিচালিত হচ্ছে। ক্রলার ও আইপি শনাক্তকরণ ব্যবস্থা ব্যবহার করেও নজরদারি কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রতিটি অ্যাকাউন্টে একাধিকবার লগইন করলে তা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়, ফলে অনুসন্ধান প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। সরকারী বৈঠকে এই সমস্যার সমাধানের জন্য যৌথ টাস্কফোর্স গঠন, কনটেন্ট ফিল্টারিং এবং অ্যালগরিদমিক নজরদারি বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রথমে ক্ষুদ্র লেনদেন শুরু হয়, এরপর ব্যবহারকারীর আসক্তি বাড়তে থাকে এবং বড় অঙ্কের বেটিংয়ে স্থানান্তর ঘটে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অর্থ পাচার চক্র দেশে প্রবেশ করছে। বাংলাদেশে অনলাইন জুয়ার অবাধ প্রবেশ, ফাঁদে তরুণরা এবং জালিয়াতি অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে লেনদেন পরিচালনা হচ্ছে।

প্রযুক্তিবিদ তানভীর জোহা বলেন, অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে ওয়েবসাইট ব্লক করা যথেষ্ট নয়; মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট ও ব্যবহারকারীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা অপরিহার্য। ইতোমধ্যে ৫৮ হাজার এমএফএস অ্যাকাউন্ট এবং ১ হাজার ৩৩১টি পোর্টাল বন্ধ করা হয়েছে। এনটিএমসি ১২৩টি জুয়ার অ্যাপ বন্ধ করেছে। তবে সমস্যার সমাধান করতে হলে শুধু সাইট ব্লক নয়, জুয়ার লেনদেনের চ্যানেল বন্ধ করতে হবে।

প্রতিবেশী সংস্থাগুলোও সমন্বিতভাবে কাজ করছে। এনএসআই মোবাইল ও আইএসপি অপারেটরদের কনটেন্ট শনাক্তের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করার পরামর্শ দিয়েছে। ডিজিএফআই মোবাইল হ্যান্ডসেটের আইএমইআই ব্ল্যাকলিস্ট পদ্ধতি চালুর প্রস্তাব দিয়েছে। সিআইডি সাইবার পুলিশ সেন্টার গত দুই মাসে ২ হাজারের বেশি সিম, ৬০০টি সাইট ও ৫০টি অ্যাপ চিহ্নিত করেছে।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, সরকার আরও কঠোর অবস্থানে রয়েছে। জুয়ার অ্যাকাউন্ট ও পোর্টাল বন্ধ করা হচ্ছে এবং বিজ্ঞাপন প্রচারণা প্রতিরোধ করা হচ্ছে। এছাড়া মোবাইল অপারেটরদের পপ-আপ ব্লক, ট্রাফিক ক্লাসিফায়ার এবং কনটেন্ট ফিল্টারিং কার্যক্রমও বাড়ানো হয়েছে। এমএফএস চ্যানেল বন্ধ করা হলে অনলাইন জুয়ার মূল অর্থপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে আসবে, যা এই সমস্যা সমাধানের মূল চাবিকাঠি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত