ঢাকা, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৪ কার্তিক ১৪৩২

সঞ্চয়পত্র সিস্টেম হ্যাক: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে অর্থ আত্মসাৎ

২০২৫ অক্টোবর ২৯ ২৩:০২:৩৯

সঞ্চয়পত্র সিস্টেম হ্যাক: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে অর্থ আত্মসাৎ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয়ের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের সিস্টেমে জালিয়াতি করে ২৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। অন্যের নামে কেনা সঞ্চয়পত্র মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ভাঙিয়ে তারা অর্থ স্থানান্তর করেছে নিজেদের নিয়ন্ত্রিত ব্যাংক হিসাবে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সতর্ক নজরদারির কারণে চক্রটি আরও প্রায় ৫০ লাখ টাকা তুলতে ব্যর্থ হয়।

ঘটনাটি ধরা পড়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিস থেকে কেনা একাধিক সঞ্চয়পত্রে। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) এই ঘটনায় মতিঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি মামলার প্রস্তুতিও চলছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী জানিয়েছেন, “যাদের হিসাবে অর্থ গেছে এবং যারা জালিয়াতিতে সরাসরি জড়িত, তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, সঞ্চয়পত্র সিস্টেমের অভ্যন্তরে কারও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেই এই জালিয়াতি সংঘটিত হয়েছে।”

কীভাবে ঘটলো জালিয়াতি

জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের নিয়ম অনুযায়ী, সঞ্চয়পত্র কেনার সময় গ্রাহক যে ব্যাংক হিসাব দেন, মেয়াদ শেষে সেই হিসাবেই টাকা স্থানান্তর হয়। কোনো তথ্য পরিবর্তন বা সঞ্চয়পত্র ভাঙাতে হলে সংশ্লিষ্ট অফিসে আবেদন করে গ্রাহককে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) দিতে হয়। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে অনেক গ্রাহক অভিযোগ করেছেন, তাদের সঞ্চয়পত্রের টাকা উত্তোলনে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে, এই সুযোগে প্রতারকরা ভুয়া আবেদন জমা দিয়ে টাকা সরিয়ে নিচ্ছে।

২৫ লাখ টাকা তোলার কৌশল

গত বৃহস্পতিবার এক গ্রাহক বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিস থেকে ২৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কেনেন। তাঁর ব্যাংক হিসাব ছিল অগ্রণী ব্যাংকের জাতীয় প্রেসক্লাব শাখায়। কিন্তু মাত্র চার দিন পর সোমবার সেই সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়ে টাকা স্থানান্তর করা হয় এনআরবিসি ব্যাংকের দিনাজপুর উপশাখায় এক অপরিচিত ব্যক্তির হিসাবে, যা পরে রাজধানীর শ্যামলী শাখা থেকে উত্তোলন করা হয়।

একই প্রক্রিয়ায় ওইদিনই আরও ৩০ লাখ টাকা ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে এবং ২০ লাখ টাকা এনআরবি ব্যাংকের মাধ্যমে ভাঙানোর চেষ্টা করা হয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘটনাটি ধরতে পারায় বাকি লেনদেনগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়।

জড়িতদের চিহ্নিতকরণ

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতিমধ্যে তিনজন সঞ্চয়পত্র ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হয়েছে—তারা কেউই ভাঙানোর আবেদন করেননি, এমনকি কোনো ওটিপিও পাননি। ফলে মতিঝিল অফিসে যেসব কর্মকর্তার কাছে সিস্টেমের পাসওয়ার্ড ছিল, তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নতুন কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেই প্রতারণা সংঘটিত হয়েছে। যাদের হাতে পাসওয়ার্ড ছিল, তারা এখন কড়া নজরদারিতে আছেন, পাশাপাশি বাইরের কোনো ব্যক্তি জড়িত কিনা তাও তদন্ত করা হচ্ছে।

তদন্ত কমিটি গঠন

এনআরবিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তৌহিদুল আলম খান জানান, ঘটনাটি জানার সঙ্গে সঙ্গে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, ডিএমডির নেতৃত্বে কমিটি ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। বিস্তারিত প্রতিবেদন দ্রুত পাওয়া যাবে।”

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত গ্রাহকদের মোট সঞ্চয়পত্রের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৭১ কোটি টাকা। এসব সঞ্চয়পত্র বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, পোস্ট অফিস ও সঞ্চয় অধিদপ্তরের মোট ১২ হাজার শাখায় বিক্রি ও ভাঙানো হয়।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত