ঢাকা, শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ১০ কার্তিক ১৪৩২

কৃষি খাতে নতুন দিগন্ত

দেশেই উৎপাদিত হবে সব ধরনের কীটনাশক

২০২৫ অক্টোবর ২৫ ২০:৪৯:৫৫

দেশেই উৎপাদিত হবে সব ধরনের কীটনাশক

নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকার দেশে সব ধরনের কীটনাশক উৎপাদনের সুযোগ তৈরি করেছে, যা ওষুধ শিল্পের মতো স্থানীয়ভাবে বালাইনাশক উৎপাদনে পথ প্রশস্ত করবে। এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশের কৃষি খাতের আমদানি নির্ভরতা কমবে, উৎপাদন বাড়বে এবং রপ্তানিতে নতুন সম্ভাবনা যোগ হবে।

সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. সাইফুল ইসলামের স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২১ অক্টোবর মন্ত্রণালয়ে ‘স্থানীয়ভাবে বালাইনাশক উৎপাদন ও রপ্তানির দ্বার উন্মোচন’ শীর্ষক একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ এগ্রোকেমিক্যাল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএএমএ) সভাপতি এবং ১১টি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা এই সভায় উপস্থিত ছিলেন, যার সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব।

সভায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রথমত, ওষুধ শিল্পের মতো বালাইনাশক শিল্পেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি অনুরূপ নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা গড়ে তুলবে। দ্বিতীয়ত, কীটনাশক উৎপাদনের প্রয়োজনীয় কাঁচামালের তালিকা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর কাছে পাঠানো হবে শুল্ক রেয়াত ও আমদানি সহজীকরণের জন্য।

খাতসংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত কৃষি ও এগ্রোকেমিক্যাল শিল্পের জন্য একটি বড় মাইলফলক। দীর্ঘ দিন ধরে উচ্চ শুল্কের কারণে দেশীয়ভাবে কীটনাশক উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছিল। এখন কাঁচামাল আমদানি সহজ ও শুল্ক রেয়াত সুবিধা পেলে স্থানীয় কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে। এর ফলে কৃষকরা সাশ্রয়ী দামে উন্নতমানের কীটনাশক পাবেন এবং দেশীয় শিল্পে রপ্তানির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

বর্তমানে দেশের কীটনাশক বাজারের আকার প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে মাত্র ৪ শতাংশ দেশীয় উৎপাদনকারীদের দখলে। বহুজাতিক কোম্পানির দখলে রয়েছে প্রায় ৫৫ শতাংশ বাজার এবং ৪১ শতাংশ আমদানিকারকদের হাতে। এর প্রধান কারণ হলো, কীটনাশক উৎপাদনের কাঁচামালে ৩০ থেকে ৫৮ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক ছিল, যেখানে প্রস্তুত পণ্য আমদানিতে শুল্ক ছিল মাত্র ৫ শতাংশ।

বিএএমএর সভাপতি কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর সরকার উৎপাদনকারীদের দাবি বাস্তবায়ন করেছে, এর জন্য তারা কৃতজ্ঞ। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এনবিআর দ্রুত পদক্ষেপ নিলে আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে আর কোনো বালাইনাশক আমদানি করতে হবে না এবং দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি সম্ভব হবে। তিনি আরও বলেন, শুল্ক রেয়াত পেলে দেশীয় উৎপাদনকারীরা পণ্যের দাম অন্তত ৩০ শতাংশ কমিয়ে দিতে পারবেন, যা কৃষকদের ভেজাল ও নিম্নমানের আমদানি হওয়া কীটনাশক থেকে মুক্তি দেবে।

বর্তমানে ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার (এনএসি), অ্যাডভান্সড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ (এসিআই), স্কয়ারসহ প্রায় ২০টি স্থানীয় কোম্পানি কীটনাশক উৎপাদনে যুক্ত আছে।

উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ কৃষি খাতে ব্যবহৃত কীটনাশকের কাঁচামাল আমদানিতে সব ধরনের শুল্ক ও কর প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। কিন্তু উচ্চ শুল্কের কারণে এতদিন দেশে কীটনাশক উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল।

স্থানীয় উদ্যোক্তারা মনে করেন, এই সিদ্ধান্ত শুধু একটি শিল্পকে নয়, পুরো কৃষি খাতকে বদলে দেবে। তারা প্রত্যাশা করেন, সরকারের এই নীতিগত সহায়তা দেশীয় উৎপাদনে গতি আনবে, কৃষকের ব্যয় কমাবে এবং আগামী দিনে কীটনাশক রপ্তানিতে ‘বাংলাদেশ’ নামটি গর্বের সঙ্গে উচ্চারিত হবে।

এসপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত