ঢাকা, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ৫ কার্তিক ১৪৩২

শেয়ারবাজারে তিন টাকার নিচে মিলছে দুই ডজনের বেশি শেয়ার

হাসান মাহমুদ ফারাবী
হাসান মাহমুদ ফারাবী

রিপোর্টার

২০২৫ অক্টোবর ২০ ০৭:১২:০৪

শেয়ারবাজারে তিন টাকার নিচে মিলছে দুই ডজনের বেশি শেয়ার

হাসান মাহমুদ ফারাবী: দেশের শেয়ারবাজারে এমন এক চিত্র দেখা যাচ্ছে, যেখানে অনেক কোম্পানির শেয়ার মূল্য ২ টাকা থেকে ৩ টাকার গণ্ডির মধ্যে আটকে আছে। এদেরকে বাজারের ভাষায় 'পেনি স্টক' বলা হয়। এগুলো একদিকে যেমন বিনিয়োগকারীদের জন্য অতি সস্তা দামে বড় আকারের শেয়ার কেনার সুযোগ তৈরি করে, তেমনি অন্যদিকে এদের দুর্বল ভিত্তির কারণে ঝুঁকিও রয়েছে পর্বত সমান।

বাজারের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে শেয়ারবাজারে ৩৯৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রায় দুই ডজন কোম্পানির শেয়ার ১ টাকা থেকে ৩ টাকার মধ্যে লেনদেন হচ্ছে। এরমধ্যে — ব্যাংক খাতের ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক; আর্থিক খাতের মধ্যে বিআইএফসি, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, ফাস ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, ফনিক্স ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং, প্রিমিয়ার লিজিং, প্রাইম ফাইন্যান্স; প্রকৌশল খাতের অ্যাপেলো ইস্পাত; বস্ত্র খাতের সিএন্ডএ টেক্সটাইল, ফ্যামিলিটেক্স, জেনারেশন নেক্সট, নূরানী ডাইং, রিজেন্ট টেক্সটাইল,রিং শাইন ও তুংহাই টেক্সটাইলের শেয়ার এক টাকা থেকে তিন টাকার মধ্যে পাওয়া চ্ছে। এছাড়া, তিন টাকা থেকে চার টাকার নিচে আরও ডজনের বেশি কোম্পানির শেয়ার পাওয়া যাচ্ছে।

এছাড়া, মিউচুয়াল ফান্ড খাতে ফার্স্ট জনতা, এবিবি ফার্স্ট, ইবিএল এনআরবি, এফবিএফআইবি, পিএইচপি ফার্স্ট, পপুলার লাইফ ফান্ড, ট্রাস্ট ব্যাংক ফান্ডের ইউনিট ৩ টাকার নিচে কেনাবেচা হচ্ছে। পাঁচ টাকার নিচে আরও ৭টি মিউচুয়াল ফান্ড পাওয়া যাচ্ছে।

হৃদয়গ্রাহী হলেও সত্য, এই সর্বনিম্ন দামের প্রতিষ্ঠানগুলো সবসময়ই শেয়ারবাজারের কিছু সংখ্যক বিনিয়োগকারীর মনোযোগ আকর্ষণ করে। বর্তমানে বাজারজুড়ে চলমান অস্থিরতা এবং বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে ৫টি ইসলামী ধারার ব্যাংক মার্জার হওয়ার এবং ৯টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়ন হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর এসব দুর্বল কোম্পানির শেয়ার দাম হঠাৎ করেই পানির দামে কেনাবেচা হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের আশা, এত কমে কেনা শেয়ার যেকোনো সময় সামান্য ইতিবাচক খবরেই দ্রুত বেড়ে যেতে পারে এবং বিশাল মুনাফা এনে দিতে পারে। অনেকে এই শেয়ারগুলোতে বড় অংকের বিনিয়োগ করে রাতারাতি ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্নও দেখছেন। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এমন বিনিয়োগ দীর্ঘমেয়াদে হতাশাই নিয়ে আসে, কারণ এই শেয়ারগুলোর মূল সমস্যাগুলো অর্থাৎ দুর্বল ব্যবস্থাপনা, ধারাবাহিক লোকসান এবং ডিভিডেন্ড দিতে না পারার ব্যর্থতা সহজে দূর হয় না।

তবে বিএসইসি এবং বাজার বিশ্লেষকরা বারবার সতর্ক করেছেন, কেবল কম মূল্য দেখে কোনো শেয়ারে বিনিয়োগ করা উচিত নয়। ৩ টাকার নিচে লেনদেন হওয়া এই কোম্পানিগুলোর অধিকাংশই 'জেড' ক্যাটাগরির বা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ। ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে মার্জার ও অবসায়নের খবর আসার ফলে এসব দুর্বল প্রতিষ্ঠানের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা আরও বেড়েছে। তাদের মৌলিক অবস্থা বিবেচনা না করে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকারীর পুরো পুঁজি হারানোর সম্ভাবনা থাকে। তবে মার্জার বা অবসায়নের ক্ষেত্রে যদি বিনিয়োগকারীদের ন্যায্য স্বার্থের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়, তাহলে হয়তো কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর পাল্টে যেতে পারে।

বর্তমানে শেয়ারবাজারের সামগ্রিক অস্থিরতার মধ্যে প্রকৌশল খাতে এবং বস্ত্র খাতেও অনেক শেয়ার দ্রুত ‘পেনি স্ট’-এর তালিকায় যুক্ত হচ্ছে। এসব দুর্বল কোম্পানিগুলোর উত্থান না হওয়া পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের হাজারো কোটি টাকা এই 'পেনি স্টক'-এর জালে আটকে থাকার করুণ গল্প চলতেই থাকবে।

এএসএম/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত