ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৪ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে কর্মী নিয়োগে ঐতিহাসিক চুক্তি

মো :আবু তাহের নয়ন :বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে সাধারণ কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা দুই দেশের শ্রমবাজার সম্প্রসারণ ও অভিবাসন ব্যবস্থার ইতিহাসে নতুন মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সোমবার (৬ অক্টোবর) বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং সৌদি আরবের পক্ষে মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার আহমেদ বিন সোলাইমান আল-রাজী চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
সৌদি আরব ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরের ইতিহাসে এটি প্রথমবারের মতো সাধারণ কর্মী নিয়োগ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক চুক্তি। এর আগে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে কর্মী পাঠানো হতো অনানুষ্ঠানিকভাবে। ১৯৭৬ সালে প্রথম বাংলাদেশি শ্রমিক সৌদি আরবে কাজ শুরু করেন। আজ পর্যন্ত প্রায় ৩০ লাখ বাংলাদেশি সৌদি আরবে কাজ করছেন, যা বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রধান উৎস হিসেবে ভূমিকা রাখছে।
এর আগে ২০১৫ সালে গৃহকর্মী নিয়োগ এবং ২০২২ সালে দক্ষতা যাচাই ও স্বীকৃতি সংক্রান্ত বিশেষ চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও সাধারণ কর্মী নিয়োগে এটি প্রথম আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চুক্তি প্রবাসী কর্মীদের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।
চুক্তি অনুযায়ী এখন বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে দক্ষ, আধা-দক্ষ ও সাধারণ শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে। দুই দেশের যৌথ উদ্যোগে প্রশিক্ষণ, দক্ষতা যাচাই, নিরাপদ অভিবাসন ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে। নিয়োগকর্তা ও কর্মীর মধ্যে চুক্তিভিত্তিক সম্পর্ক, আকামা নবায়ন এবং সময়মতো এক্সিট ভিসা প্রদানের বিষয়গুলোও সুনির্দিষ্টভাবে বাস্তবায়িত হবে।
চুক্তি স্বাক্ষরের আগে দুই দেশের প্রতিনিধিদলের বৈঠকে ড. আসিফ নজরুল সৌদি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান, যেন কর্মীদের অধিকার সুরক্ষিত থাকে, আকামা নবায়নের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা হয় এবং দেশে ফেরত যেতে ইচ্ছুক কর্মীরা দ্রুত এক্সিট ভিসা পান। তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী প্রেরণের আগে প্রশিক্ষণ ও স্কিল সার্টিফিকেশন নিশ্চিত করা হবে, যা সৌদি আরবের শ্রমশক্তিকে আরও গুণগত করবে।”
সৌদি মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার আহমেদ বিন সোলাইমান আল-রাজী বলেন, “বাংলাদেশ আমাদের গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার অংশীদার। এই চুক্তি শুধু নিয়োগ নয়, মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রেও নতুন অধ্যায় শুরু করবে।” তিনি উভয় দেশের মন্ত্রণালয়কে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন যাতে কর্মী কল্যাণ, দক্ষতা উন্নয়ন এবং আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়।
চুক্তির আলোচনায় বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগে প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন, কর্মী নিয়োগে ডিজিটাল যাচাইকরণ ব্যবস্থা, নারী কর্মীদের সুরক্ষা এবং অবৈধ দালাল চক্র দমনসহ যৌথ মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
চুক্তি কার্যকর হলে সৌদি আরবে বাংলাদেশি কর্মীর সংখ্যা আগামী দুই বছরের মধ্যে অন্তত ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে সৌদি আরবে প্রায় ২৭ লাখ বাংলাদেশি কর্মী আছেন, যারা বছরে প্রায় ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠান। চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশি কর্মীরা দক্ষতা অনুযায়ী উন্নত বেতন, কর্মপরিবেশ, চিকিৎসা ও আবাসন সুবিধা পাবেন। পাশাপাশি একটি যৌথ অনলাইন ডেটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হবে, যেখানে নিয়োগ ও কর্মচুক্তির তথ্য সংরক্ষিত থাকবে।
বাংলাদেশ সরকার আশা করছে, এই ঐতিহাসিক চুক্তি দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করবে। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দক্ষ কর্মী রপ্তানি শুধু রেমিট্যান্স বাড়াবে না, এটি বাংলাদেশের বৈদেশিক সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে ভাবমূর্তিকেও আরও উজ্জ্বল করবে।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তান, সরাসরি দেখবেন যেভাবে
- বাংলাদেশ বনাম ইংল্যান্ড, সরাসরি দেখবেন যেভাবে
- শেয়ারবাজারে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিএসইসি চেয়ারম্যানের যুগান্তকারী ঘোষণা
- বাংলাদেশে বনাম আফগানিস্তান,খেলাটি সরাসরি দেখুন (LIVE)
- ‘জেড’ থেকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ফিরেছে তালিকাভুক্ত কোম্পানি
- আফগানিস্তান বনাম বাংলাদেশ, সরাসরি দেখবেন যেভাবে
- ডুবছে ওষুধের দুই কোম্পানি, বিনিয়োকারীদের কপালে চিন্তার ভাজ
- সাত কোম্পানির শেয়ারে কারসাজির গন্ধ!
- RSI এলার্ট: ১০ শেয়ারে বিপদ সংকেত
- শেয়ারবাজারের কোম্পানিতে কারসাজির গন্ধ! তদন্তে নেমেছে বিএসইসি
- ঢাবি শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেবে জাপান, আবেদন করবেন যেভাবে
- উৎপাদন বন্ধ চার কোম্পানির শেয়ার নিয়ে সতর্কতা জারি
- জেডে নেমে তিন শেয়ারের ধস, বিনিয়োগকারীদের নিঃস্ব হওয়ার শঙ্কা
- মশিউর সিকিউরিটিজের গ্রাহকদের জন্য জরুরি নির্দেশনা
- বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় বিএসইসির বড় পদক্ষেপ, আসছে নতুন নিয়ম