ঢাকা, শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৯ আশ্বিন ১৪৩২

কর্মক্ষেত্রে নারীরা এখনো বৈষম্যের শিকার

আসাদুজ্জামান
আসাদুজ্জামান

রিপোর্টার

২০২৫ অক্টোবর ০৪ ১১:৫২:৫৩

কর্মক্ষেত্রে নারীরা এখনো বৈষম্যের শিকার

বাংলাদেশে শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ আগের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। পুরুষদের মতো সমান সময় ও শ্রম দিচ্ছেন নারীরা, কিন্তু মজুরি ও মর্যাদায় রয়ে গেছে বড় বৈষম্য। এমন চিত্রই উঠে এসেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাম্প্রতিক শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৪-এ।

জরিপ অনুযায়ী, দেশে এখন শ্রমক্ষম মানুষের সংখ্যা প্রায় ১২ কোটি ১৮ লাখ, যার মধ্যে সক্রিয়ভাবে শ্রমশক্তিতে যুক্ত আছেন ৭ কোটি ১৭ লাখ। এর মধ্যে নারীর সংখ্যা দুই কোটিরও বেশি, যা মোট শ্রমশক্তির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। ১০ বছর আগে এই হার ছিল মাত্র ২৭ শতাংশ, এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৯ শতাংশে।

এই অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক হলেও নারীর অর্থনৈতিক অবস্থান এখনো দুর্বল। শ্রমবাজারে পুরুষদের অংশগ্রহণ যেখানে ৮০–৮৫ শতাংশ, সেখানে নারীর হার অর্ধেকেরও কম। সক্ষম নারীদের বিশাল অংশ এখনো কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছে না।

দেশে সমান কাজের জন্য সমান মজুরি দেওয়ার আইন থাকলেও বাস্তবে তা কার্যকর নয়। জরিপে দেখা গেছে, পুরুষ শ্রমিকের মাসিক গড় আয় ১৬ হাজার টাকা, আর নারীদের ১২ হাজার ৬০০ টাকা—অর্থাৎ এক-পঞ্চমাংশ কম।

এই বৈষম্য শহর-গ্রাম উভয় জায়গায় স্পষ্ট। কৃষি খাতে নারীর শ্রমকে প্রায়ই “সহায়ক” ধরা হয়, ফলে তাঁদের আয় হিসাবেই ধরা হয় না। শিল্প ও সেবা খাতেও একই কাজের বিনিময়ে নারী শ্রমিকরা পুরুষের চেয়ে কম বেতন পান।

ডব্লিউইএবি সভাপতি নাসরিন ফাতেমা আউয়াল বলেন, “নারীরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে পারছেন, কিন্তু উচ্চ পর্যায়ে গিয়ে বৈষম্যের মুখে পড়ছেন। নারী সংবেদনশীল নীতি ও কাঠামো গড়ে তুলতে না পারলে এই বৈষম্য দূর হবে না।”

বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে, যা নারী কর্মসংস্থানের সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র, সেখানে বেতন বৈষম্য সবচেয়ে প্রকট। গবেষণায় দেখা গেছে, একই কাজের জন্য নারী শ্রমিকের বেতন পুরুষের তুলনায় ২২–৩০ শতাংশ কম।

সাভারের শ্রমিক ঝুমা বেগম বলেন, ছয় বছর ধরে একই পদে কাজ করছি, কিন্তু কোনো প্রমোশন পাইনি। একই কাজ করেও সুযোগে আমরা পিছিয়ে।

উচ্চশিক্ষিত নারীরাও এই বৈষম্যের বাইরে নন। স্নাতক বা এর বেশি ডিগ্রিধারী নারীদের বেকারত্বের হার ২৯ শতাংশ, যেখানে পুরুষদের মাত্র ১২ শতাংশ।

অবৈতনিক যত্নশ্রম: অদৃশ্য অবদানবিবিএসের ‘অবৈতনিক গৃহস্থালি ও যত্নশ্রম জরিপ ২০২৪’-এ দেখা গেছে, নারীরা প্রতিদিন গড়ে ৬ ঘণ্টা ৪০ মিনিট সময় দেন গৃহস্থালি ও যত্নশ্রমে, যেখানে পুরুষরা দেন মাত্র ২ ঘণ্টা ২০ মিনিট। এই শ্রমের আর্থিক মূল্য নির্ধারণ করলে দেশের জিডিপির প্রায় এক-চতুর্থাংশ আসত নারীর অবদানে—কিন্তু এই শ্রমের নেই কোনো পারিশ্রমিক, নেই স্বীকৃতি।

আন্তর্জাতিক তুলনায় বাংলাদেশদক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ কিছু ক্ষেত্রে এগোলেও অনেক ক্ষেত্রেই পিছিয়ে। বিশ্বব্যাংকের তথ্যে বলা হয়েছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে নারীর অংশগ্রহণ কম এবং কাজের বেশির ভাগই অনানুষ্ঠানিক খাতে হয়—বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আইনি কাঠামো থাকলেও বাস্তবায়ন দুর্বল। অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত নারীরা প্রায় পুরোপুরি বঞ্চিত সমান মজুরির অধিকার থেকে। এই বৈষম্য দূর করতে নীতি প্রয়োগের কঠোরতা, সচেতনতা বৃদ্ধি ও কর্মক্ষেত্রে নারী নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এখন সময়ের দাবি।

কেএমএ

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত