ঢাকা, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫, ১৬ আশ্বিন ১৪৩২

বিএসইসির ২৩ কর্মকর্তার বিভাগীয় মামলা তদন্তে নতুন বোর্ড গঠন

২০২৫ সেপ্টেম্বর ৩০ ২২:২২:১৬

বিএসইসির ২৩ কর্মকর্তার বিভাগীয় মামলা তদন্তে নতুন বোর্ড গঠন

হাসান মাহমুদ ফারাবী: শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) প্রতিষ্ঠানটির ২৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনিত বিভাগীয় মামলা তদন্তের জন্য একটি তদন্ত বোর্ড গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে কমিশন বাইরে থেকে কর্মকর্তা নিয়ে তিন সদস্যের এই বোর্ড গঠনের উদ্যোগ নেয় এবং এ বিষয়ে সরকারের কাছে নাম প্রস্তাবের অনুরোধ জানায়।

এর প্রেক্ষিতে গত ২৮ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি) থেকে বোর্ডের সদস্য হিসেবে তিনজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে মনোনীত করেছে। তারা হলেন —অতিরিক্ত সচিব মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস; যুগ্ম সচিব সানিয়া আকতার এবং উপসচিব মোহাম্মদ অতুল মন্ডল।

এর আগে, চলতি বছরের মার্চ মাসে বিএসইসি-এর কর্মকর্তারা চেয়ারম্যান ও তিনজন কমিশনারের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন। ওই আন্দোলনের সময় কর্মকর্তারা বিদ্যুৎ ও সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ করে পুরো অফিস অবরুদ্ধ করে রাখেন এবং প্রায় চার ঘণ্টা কমিশনকে কার্যত 'অবরোধ' করে রাখেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কমিশন শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর সহায়তায় অফিস ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয় এবং কমিশন জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ২৩টি বিভাগীয় মামলা দায়ের করে। এপ্রিল মাসে কমিশন মার্চ মাসের প্রতিবাদ চলাকালীন পরিষেবা বিধি লঙ্ঘনের জন্য একজন নির্বাহী পরিচালক, তিনজন পরিচালক, অতিরিক্ত পরিচালক ও উপ-পরিচালকসহ মোট ২১ জন কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে।

এরপর গত ৩১ আগস্ট এফআইডি-কে লেখা বিএসইসি-এর চিঠি অনুযায়ী, ২৭ জুলাই এক জরুরি বৈঠকে কমিশন স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন এড়াতে বিএসইসি-এর বাইরের কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি তদন্ত বোর্ড গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়।

চিঠিতে বলা হয়েছে, "৫ ও ৬ মার্চ ২০২৫ তারিখের ঘটনা, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রকৃতি ও ধরন, তাদের পদবি এবং ন্যায্য ও স্বচ্ছভাবে বিভাগীয় তদন্ত পরিচালনার প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে—ভয়ভীতিহীন ও নিরপেক্ষভাবে তদন্তের দায়িত্ব পালনের জন্য তদন্ত বোর্ডে সরকার থেকে উপযুক্ত সদস্য মনোনয়ন করা অপরিহার্য মনে করা হয়েছে।"

কমিশন আরও জানায়, পরিষেবা বিধি লঙ্ঘনের কারণে ২৩ জন প্রধান অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আলাদা বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। ২৩ ও ২৪ জুলাই অভিযুক্তদের ব্যক্তিগতভাবে তাদের বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। শুনানি শেষে ২৭ জুলাই কমিশন জরুরি বৈঠকে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে, প্রতিটি অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে পর্যাপ্ত ভিত্তি রয়েছে।

কমিশন মনে করে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রত্যেকের ওপর কঠোর শাস্তি আরোপের পর্যাপ্ত ভিত্তি রয়েছে। ঘটনার সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে, সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে প্রতিটি বিভাগীয় মামলার জন্য আলাদা তদন্ত কর্মকর্তা বা বোর্ড নিয়োগ না করে একটি একক তদন্ত বোর্ড নিয়োগ করা যথাযথ ও প্রয়োজনীয় বলে মনে করা হয়।

মার্চ মাসের আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল ৪ মার্চ। সেদিন কার্যকালের অনিয়মের প্রমাণ দেখিয়ে বিএসইসি-এর নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান-কে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। এছাড়া, কমিশন আরও কয়েকজন কর্মকর্তাকে বিভিন্ন বিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করে এবং অনেকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়। এই সিদ্ধান্ত বিএসইসি-এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি করে। সাইফুর রহমানের বাধ্যতামূলক অবসরের পরের দিনই কর্মকর্তারা চেয়ারম্যান-কমিশনারদের ফ্লোরে জড়ো হন। চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের অভিযোগ ছিল যে কর্মকর্তারা তাদের অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন, যার ফলে তাদের সেনাবাহিনীর সহায়তায় অফিস ছাড়তে হয়েছিল। এর পরের দিন, ৬ মার্চ বিএসইসি কর্মকর্তারা ধর্মঘট পালন করেন। একই দিনে বিএসইসি চেয়ারম্যান তার সহকারী আশিকুর রহমানের মাধ্যমে শেরেবাংলা নগর থানায় ১৬ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

এএসএম/

শেয়ারবাজারের বিশ্লেষণ ও ইনসাইড স্টোরি পেতে আমাদের পেজ ফলো করুন।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত