ঢাকা, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫, ১৬ আশ্বিন ১৪৩২

ইসলামী ব্যাংকে নতুন অস্থিরতা: ২০০ চাকরিচ্যুত, ৪,৯৭১ ওএসডি

২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৯ ২১:৫২:৩০

ইসলামী ব্যাংকে নতুন অস্থিরতা: ২০০ চাকরিচ্যুত, ৪,৯৭১ ওএসডি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বেসরকারি খাতের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংকে শুরু হয়েছে অভূতপূর্ব এক শুদ্ধি অভিযান। চাকরিবিধি ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ২০০ কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ৪ হাজার ৯৭১ জনকে ওএসডি (অন সার্ভিস ডিউটি) তে রাখা হয়েছে। ওএসডি হওয়া কর্মীরা বেতন ও ভাতা পাবেন, কিন্তু কোনো কার্যকর দায়িত্ব বা কর্মস্থলে উপস্থিত থাকবেন না। এ পদক্ষেপের কারণে ব্যাংকের ভেতরে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।

পটিয়ায় নিয়োগের ইতিহাস

চট্টগ্রামের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ ২০১৭ সালে ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর হাজারো কর্মীকে পরীক্ষা ছাড়া সরাসরি সিভি দেখেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। অধিকাংশ নিয়োগ হয় চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার বাসিন্দাদের মধ্যে। ব্যাংকের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, এস আলমের আমলে অযোগ্য লোক নিয়োগের ফলে ব্যাংক ক্ষতির মুখে পড়ে। বর্তমান শুদ্ধি পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা যোগ্যতা যাচাই করছি।

পরীক্ষা ও ওএসডি প্রক্রিয়া

বাংলাদেশ ব্যাংক ও আদালতের নির্দেশনায় গত ২৭ সেপ্টেম্বর এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। মোট ৫,৩৮৫ জন কর্মকর্তা অংশগ্রহণের জন্য বলা হয়েছিল, তবে মাত্র ৪১৪ জন উপস্থিত হন। নিয়মিত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। অন্যরা পরীক্ষা না দেওয়ায় পরদিন থেকেই ওএসডি করা হয়, এবং যারা পরীক্ষার আয়োজন নিয়ে বিতর্ক তৈরি করেছেন, তাদের মধ্যে ২০০ জনকে সরাসরি চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

ওএসডি হওয়া কর্মকর্তাদের দাবি, হাইকোর্ট এক মাস আগে নিয়মিত প্রমোশনাল পরীক্ষা চালানোর নির্দেশ দিয়েছিল। ব্যাংক সেই আদেশ অমান্য করে নতুন পরীক্ষা নিয়েছে, যা তারা বেআইনি মনে করছেন। তারা আবারও আদালতের শরণাপন্ন হবেন বলেও জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মন্তব্য

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ছাঁটাইয়ের উদ্দেশ্যে পরীক্ষা নেওয়ার ঘটনা দেশে এটি প্রথম। সাধারণত পদোন্নতির জন্য ভাইভা নেওয়া হয়, কিন্তু কর্মীদের মান যাচাই পরীক্ষার বিষয়টি নতুন অভিজ্ঞতা। ইসলামী ব্যাংক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান; তাই নিয়োগ ও যোগ্যতা যাচাই তাদের এখতিয়ারভুক্ত, তবে আইন ও নীতিমালার মধ্যে করতে হবে।

ঋণ ও আর্থিক সংকটের পটভূমি

এস আলম গ্রুপ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর প্রায় ১ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকা তোলার অভিযোগ রয়েছে। ফলে ব্যাংক গভীর আর্থিক সংকটে পড়ে। গত বছরের ৫ আগস্ট ব্যাংকের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ নিয়োগের মাধ্যমে নতুন শুদ্ধি প্রক্রিয়া শুরু হয়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই প্রক্রিয়া ব্যাংকের ভেতরে বৃহৎ পরিবর্তনের সূচনা। একই সঙ্গে এটি দেশের ব্যাংকিং খাতে নতুন নজির, যেখানে কর্মীদের দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য সরাসরি পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত