ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০ আশ্বিন ১৪৩২

বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ার কাঠামোতে বড় পরিবর্তন

মোবারক হোসেন
মোবারক হোসেন

সিনিয়র রিপোর্টার

২০২৫ সেপ্টেম্বর ২৫ ২১:০৬:৪৬

বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ার কাঠামোতে বড় পরিবর্তন

মোবারক হোসেন: গত বছরের ৫ আগস্টের রাজনৈতিক অস্থিরতায় দেশের বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বিপর্যয়ের মুখে পড়লেও বেক্সিমকো ফার্মা সেই ধাক্কা সামলে নতুন শক্তি নিয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব সংকটে পড়ার কথা ছিল, সেখানে স্থানীয় ও বৈশ্বিক বাজারে তাদের প্রবৃদ্ধি আরও সুসংহত হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মোহাম্মদ আলী নাওয়াজ গণমাধ্যমকে জানান, হামলা, কার্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, আরজেএসসিতে রিটার্ন জমা বন্ধ থাকা, ট্রেড লাইসেন্স নবায়নে দীর্ঘ বিলম্ব—এসব প্রতিকূলতার মাঝেও বেক্সিমকো ফার্মা সচল থেকেছে মূলত তিন কারণে। প্রথমত, ম্যানেজমেন্ট সবসময় পেশাদারদের হাতে থেকেছে, বোর্ড দৈনন্দিন কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করেনি। দ্বিতীয়ত, মার্কেটিং টিম মাঠে দ্বিগুণ পরিশ্রম করেছে এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রেখেছে। তৃতীয়ত, আন্তর্জাতিক মানের ওষুধের কারণে রোগী ও চিকিৎসকদের আস্থা অটুট থেকেছে।

তিনি বলেন, “বেক্সিমকো ফার্মা আসলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রতিষ্ঠান। উদ্যোক্তাদের হাতে মাত্র ১৪ শতাংশ শেয়ার, আর ৮৬ শতাংশই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। তাই প্রতিকূল সময়ে আমরা উৎপাদন ও কর্মসংস্থান সচল রাখার চেষ্টা করেছি।”

যদিও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটের সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, কোম্পানিটির মোট শেয়ার রয়েছে ৪৪ কোটি ৬১ লাখ ১২ হাজার ৮৯টি। এরমধ্যে উদ্যোক্তাদের কাছে রয়েছে ৩০.১৩ শতাংশ এবং বাকি ৬৯.৮৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, বিদেশি বিনিয়োগকারী এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে।

বেক্সিমকো গ্রুপের বিপুল ঋণের অভিযোগ প্রসঙ্গে আলী নাওয়াজ বলেন, “বলা হয়েছে আমাদের ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ রয়েছে, যা বাস্তবে সত্য নয়। সর্বোচ্চ ৬০০ কোটি টাকা কার্যকরী মূলধন ঋণ নিয়েছিলাম, বর্তমানে ঋণ কমে ২৫০–৩০০ কোটির মধ্যে এসেছে। বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার বিক্রি হয়, তাই ঋণ কোনো চাপ তৈরি করছে না।”

তিনি আরও জানান, বেক্সিমকো ফার্মার মুনাফা থেকে গ্রুপের অন্য প্রতিষ্ঠানে অর্থ সরবরাহের অভিযোগও ভিত্তিহীন। “এটা সম্ভবই নয়। বেক্সিমকো ফার্মা সম্পূর্ণ আলাদা প্রতিষ্ঠান এবং লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হওয়ায় কঠোর আর্থিক স্বচ্ছতার মধ্যে পরিচালিত হয়।”

বেক্সিমকো ফার্মার সিএফও’র ভাষায়, ২০১০ সালের পর থেকে বাংলাদেশের ওষুধশিল্প ধারাবাহিকভাবে ডাবল ডিজিট প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। বর্তমানে বাজারের আকার প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার, যার ৯৮ শতাংশই স্থানীয় উৎপাদন। প্রতিবছর বড় কোম্পানিগুলো ২০–৩০টি নতুন ওষুধ বাজারে আনছে।

বর্তমানে বেক্সিমকো ফার্মা ৬০টিরও বেশি দেশে ২৫০ ধরনের ওষুধ রপ্তানি করছে। সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে ২০টি ওষুধ নিবন্ধিত, এর মধ্যে ৮টি রপ্তানি হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আয় প্রায় ১৬ মিলিয়ন ডলার।

তবে রপ্তানি প্রক্রিয়াকে ‘অত্যন্ত জটিল ও ব্যয়বহুল’ উল্লেখ করে আলী নাওয়াজ বলেন, একেকটি দেশে অনুমোদন পেতে ছয় মাস থেকে সাড়ে তিন বছর পর্যন্ত সময় লাগে এবং কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়। তবুও ইউএস এফডিএ সার্টিফিকেশন থাকায় অন্যান্য দেশে অনুমোদন পাওয়া তুলনামূলক সহজ হয়েছে।

তিনি সতর্ক করে বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশ পেটেন্ট ছাড় হারাবে। তখন নতুন ওষুধ উৎপাদনে আবিষ্কারক কোম্পানির লাইসেন্স ও রয়্যালটি দিতে হবে। এতে উৎপাদন ব্যয় বাড়বে এবং রপ্তানিও কমতে পারে। তাই আগেভাগেই প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।

বেক্সিমকো ফার্মার প্রধান লক্ষ্য এখন বায়োলজিকস—বিশেষ করে অ্যান্টি ক্যানসার ও অ্যান্টি ডায়াবেটিস ওষুধ। পাশাপাশি নতুন ওষুধ দ্রুত রেজিস্ট্রেশন ও বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারিত্ব বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

এএসএম/

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত