ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩ আশ্বিন ১৪৩২

দুদক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা, আইনে রূপান্তর কবে?

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৯ ০১:৩৯:০৬

দুদক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা, আইনে রূপান্তর কবে?

নিজস্ব প্রতিবেদক: ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশনের বেশিরভাগ সুপারিশকে আইনে পরিণত করার উদ্যোগ নিয়েছে। এই প্রক্রিয়া অনেকটাই এগিয়ে গেছে এবং আইন মন্ত্রণালয়ে খসড়া বিল প্রণয়নের কাজ চলছে। অক্টোবর মাসের মধ্যেই এটি উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হতে পারে। প্রথমে অধ্যাদেশের মাধ্যমে এটিকে আইনে রূপান্তর করা হলেও, পরে জাতীয় নির্বাচনের পর সংসদ গঠিত হলে বিল আকারে উপস্থাপন করে অনুমোদন নেওয়া হবে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুদককে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়াসহ অর্ধশতাধিক সুপারিশ করা হয়েছে। এই প্রতিবেদনে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারকে 'চৌর্যতান্ত্রিক (ক্লেপ্টোক্রেটিক) সরকার' হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, দুদক গঠনের পর থেকে এটি স্বাধীনতা, কার্যকারিতা ও দক্ষতা নিয়ে নানা প্রশ্নের মুখে ছিল। এর কাঠামোগত দুর্বলতা, জনবল ও প্রযুক্তির অভাব, তদন্তে দীর্ঘসূত্রতা, মামলা নিষ্পত্তিতে সময়ক্ষেপণ, রাজনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ এবং দায়বদ্ধতার সংকট রয়েছে। তবে রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকলে আইন সংস্কারও কাগুজে আইনে পরিণত হতে পারে বলে তারা মত দিয়েছেন।

দুদকের আইন বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে এবং এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে মতামতও দেওয়া হয়েছে।

সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে 'জুলাই ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে চৌর্যতান্ত্রিক সরকারের পতনের পর' একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর দুদকের বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কমিশন দুদকের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা, আইনি কাঠামো, কার্যপদ্ধতি, জবাবদিহি, আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা, অভ্যন্তরীণ সুশাসন, পেশাগত দক্ষতা, দুর্নীতি প্রতিরোধী ভূমিকা এবং আন্তঃএজেন্সি সহযোগিতা ও সমন্বয়কে চিহ্নিত করে। সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্য স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি (৬ মাস, ১৮ মাস ও ৪৮ মাস) পথরেখা প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিশেষত, দুর্নীতিকে শুধু শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয়, বরং একটি সামাজিক ব্যাধি হিসেবে চিহ্নিত করে কৌশলগত ও টেকসই প্রতিরোধ কার্যক্রম পরিচালনায় দুদককে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে: দুদককে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া, ন্যূনতম একজন নারীসহ কমিশনারের সংখ্যা তিন থেকে পাঁচে উন্নীত করা, ওপেন গভর্নমেন্ট পার্টনারশিপের পক্ষভুক্ত হওয়া, ব্যক্তিগত স্বার্থে সাংবিধানিক ও আইনগত ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ করা, একটি দুর্নীতিবিরোধী জাতীয় কৌশলপত্র প্রণয়ন, ন্যায়পালের পদ সৃষ্টি করে সাংবিধানিকভাবে ক্ষমতায়িত করা, বৈধ উৎসবিহীন আয়কে বৈধতাদানের সব চর্চা বন্ধ করা, স্বার্থের দ্বন্দ্ব নিরসন ও প্রতিরোধ-সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করা, কোম্পানি, ট্রাস্ট বা ফাউন্ডেশনের প্রকৃত সুবিধাভোগীর পরিচয় প্রকাশ নিশ্চিত করা, নির্বাচনী আইনে সংস্কারের মাধ্যমে রাজনৈতিক ও নির্বাচনী অর্থায়নে স্বচ্ছতা আনা এবং সেবা প্রদানকারী সব সরকারি প্রতিষ্ঠানকে সম্পূর্ণ অটোমেশনের আওতায় আনা। এছাড়াও, বেসরকারি খাতের ঘুষ লেনদেনকে স্বতন্ত্র অপরাধ হিসেবে শাস্তির আওতায় আনা এবং দেশে ও বিদেশে আর্থিক লেনদেনের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে কমন রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ডস বাস্তবায়ন করার কথা বলা হয়েছে। দুদক চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগে সংসদীয় কমিটির সুপারিশ নেওয়া এবং প্রতি বছর দুদকের কার্যক্রমের মূল্যায়ন নেওয়াসহ মোট পঞ্চাশটি সুপারিশ করা হয়েছে।

গত ১৪ আগস্ট আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং জানান যে, দুদক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা আইনে পরিণত করার কাজ চলছে এবং আগামী এক থেকে দুই মাসের মধ্যে তা আইনে রূপান্তর করা হবে।

দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন জানিয়েছেন, দুদক ও আইন মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজ করছে এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে দুদকের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় মতামত দেওয়া হবে। তবে এটি কবে নাগাদ চূড়ান্ত হবে তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি তিনি।

এসপি

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত