ঢাকা, বুধবার, ৫ নভেম্বর ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন: রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৭ ২০:৪৩:৩০

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন: রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত

নিজস্ব প্রতিবেদক: জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সাংবিধানিক আদেশ ও গণভোটের প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো আবারও দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। কিছু দল এটিকে নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা হিসেবে দেখছে এবং মনে করছে এর মাধ্যমে নতুন সংকট তৈরি হতে পারে। অন্যদিকে, অনেকে সংবিধানের ১০৬ ধারা অনুসরণের কথা বলছেন।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সাংবিধানিক আদেশ ও গণভোটের বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত জানিয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজের বক্তব্যের পর জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বিশেষজ্ঞদের মতামত তুলে ধরেন।

তিনি জানান, বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন যে অন্তর্বর্তী সরকার একটি 'কনস্টিটিউশন অর্ডার' ঘোষণা করতে পারে, যা জুলাই ঘোষণার ২২ দফা অনুসরণ করে। এই অর্ডারে সংবিধান সংশ্লিষ্ট মূল সংস্কারগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে। কনস্টিটিউশন অর্ডারটি তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে, তবে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের সময় একটি গণভোটের মাধ্যমে জনগণের সম্মতি নিয়ে এটিকে 'ভ্যালিডেটেড' করা হবে এবং আইনটি তৈরির সময় থেকে এর বাস্তবায়ন বিবেচনা করা হবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত:

কমিশনের বৈঠকের মধ্যাহ্ন বিরতির সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা তাদের মতামত তুলে ধরেন। বিএনপি ও জামায়াত নেতারা এ নিয়ে এখনো মন্তব্য করেননি। দলগুলোর মধ্যে কেউ কেউ বিশেষজ্ঞদের মতামতের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন, আবার কেউ কেউ দ্বিমত করেছেন।

এনসিপি: জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন সংবিধানের ১০৬ ধারা অনুযায়ী সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে গণপরিষদ নির্বাচন দাবি করেছেন।

এবি পার্টি: আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু সাংবিধানিক আদেশ বা গণভোটের প্রস্তাবকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন এবং গণভোটের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।

এলডিপি: লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব অ্যাডভোকেট রেদোয়ান আহমেদ জুলাই ঘোষণার ২২ নম্বর অনুচ্ছেদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি না থাকায় এর বিরোধিতা করেছেন এবং সংবিধানের ১০৬ ধারা অনুযায়ী বর্তমান সরকারের কার্যক্রমকে সমর্থন করেছেন।

গণঅধিকার পরিষদ: গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান মনে করেন, সরকার রাজনৈতিক দলগুলোকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে এবং দায় নিতে চাইছে না। তিনি গণভোটের ফল নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।

গণসংহতি আন্দোলন: গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বিশেষজ্ঞদের প্রস্তাবিত সাংবিধানিক আদেশ ও গণভোটের সমালোচনা করে বলেন, এটি জুলাই ঘোষণার ২৫ নম্বর ধারার সঙ্গে স্ববিরোধী। তিনি ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একটি অধ্যাদেশ জারির কথা বলেছেন।

জেএসডি: জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন ১০৬ ধারা অনুসরণ করে একটি আইনি ভিত্তি তৈরির কথা বলেছেন।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ: মহাসচিব মঞ্জুররুল ইসলাম আফেন্দি সংবিধান সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো আগামী সংসদে পাস এবং অন্যান্য বিষয়গুলো অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়নের পক্ষে। গণভোটকে তিনি সমস্যা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে দেখেছেন।

বাসদ (মার্কসবাদী): সমন্বয়ক মাসুদ রানা গণভোটের বিষয়টি সংবিধানের পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছেন এবং সনদ বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জমুক্ত ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন।

ভাসানী জনশক্তি পার্টি: মহাসচিব আবু ইউসুফ সেলিম জুলাই ঘোষণার ২২ ধারাকে ২৫ ধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক আখ্যা দিয়ে সংবিধানের ১০৬ ধারা অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামত এবং পরবর্তী সংসদে তা কার্যকর করার প্রস্তাব দিয়েছেন।

এসপি

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত