ঢাকা, শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২ ভাদ্র ১৪৩২

রাজপথেই দাবি বাস্তবায়নের প্রস্তুতি এনসিপির

২০২৫ সেপ্টেম্বর ০৬ ১০:১৭:২৯

রাজপথেই দাবি বাস্তবায়নের প্রস্তুতি এনসিপির

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি সপ্তাহে চূড়ান্ত হওয়ার পথে রয়েছে ‘জুলাই সনদ’। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মনে করছে, সনদে মৌলিক সংস্কার কতটা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এবং তা কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, সে বিষয়ে এখনও স্পষ্টতা নেই। দলের মতে, গণহত্যার বিচারের অগ্রগতি ধীর এবং সরকারের কিছু পদক্ষেপ রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

এনসিপি নেতারা আরও জানান, অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে, অথচ সংস্কার ও বিচারের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। নতুন সংবিধান প্রণয়নেও অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। ফলে জুলাইয়ের মূল আকাঙ্ক্ষা অনেকটাই ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, এবং ফ্যাসিবাদী শক্তি পুনরায় মাথাচাড়া দিতে পারে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “জুলাই সনদ বাস্তবায়নে যদি কোনো গাফিলতি বা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়, তবে আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে আন্দোলন শুরু করব। টেবিল আলোচনায় সমাধান না হলে মাঠের কর্মসূচি অপরিহার্য।”

দলের একাধিক সূত্র জানায়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মরণে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ এবং ‘উঠানে নতুন সংবিধান’ কর্মসূচি চলমান। এসব কর্মসূচিতে গণপরিষদ নির্বাচন, নতুন সংবিধান, বিচার ও সংস্কারের দাবিতে সারা দেশে সমাবেশ ও উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এনসিপি এখন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দাবিতে রাজপথে নতুন ধরনের কর্মসূচি নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।

সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, “জুলাই সনদের মৌলিক সংস্কার কোনো দল বা ব্যক্তির স্বার্থের কারণে আটকে রাখা যাবে না। সনদে আইনি ভিত্তি না থাকলে আন্দোলনের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হবে। আমরা রাজপথের আন্দোলনের ভরসা রাখি এবং যারা একমত, তাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে চলতে রাজি।”

এনসিপির নেতারা মনে করেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ১৫ বছরের স্বৈরাচার প্রতিহত করে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করলেও সরকার পদক্ষেপে অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থতা দেখিয়েছে। দায়িত্ব নেওয়ার এক বছরের মাথায় কমিশনের মাধ্যমে সনদ চূড়ান্ত করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কার্যক্রম অসম্পূর্ণ এবং অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে এগোচ্ছে।

সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, “চূড়ান্ত না হওয়া জুলাই সনদে নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশের আগে পর্যাপ্ত অগ্রগতি থাকা প্রয়োজন। কিন্তু কমিশন এখনও সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নির্ধারণ করতে পারেনি। এতে ভবিষ্যতে সংকট তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”

এনসিপি নেতারা সতর্ক করে বলেন, স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে গণহত্যার বিচারের অগ্রগতি ধীর, ফ্যাসিবাদী শক্তি মাথাচাড়া দিচ্ছে, প্রশাসন ও বুরোক্র্যাটদের গোপন তৎপরতা বেড়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ ছাড়াই একপক্ষীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ জাতীয় ঐকমত্যকে দুর্বল করছে।

মার্চে প্রথম দফায় ৩২টি দল ও জোটের সঙ্গে ১৬৬টি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করে ঐকমত্য কমিশন, যেখানে ৬২টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়। দ্বিতীয় দফায় আরও ২০টি বিষয়ে সমঝোতা হয়। কিন্তু কিছু বিষয়ে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি ও অন্যান্য দলের ভিন্নমত তৈরি হয়। এরপর ২৮ জুলাই প্রাথমিক খসড়া এবং ১৬ আগস্ট চূড়ান্ত খসড়া দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়।

এবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ দুই ভাগে বিভক্ত করে চূড়ান্ত করে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে কিছু দলের আপত্তি, অঙ্গীকারনামায় ভাষাগত পরিবর্তন এবং বাস্তবায়নের পদ্ধতির অস্পষ্টতা এখনও অব্যাহত।

নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ ঘোষণার পর আখতার হোসেন বলেন, “সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা না হলে রাজপথে নামতে আমরা পিছপা হব না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নেব।”

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

সর্বোচ্চ পঠিত