ঢাকা, সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭ ভাদ্র ১৪৩২
বহুদলীয় গণতন্ত্রের ধারা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করাই বিএনপির মূল লক্ষ্য: তারেক রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, শুভানুধ্যায়ী ও দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এই বিশেষ দিনে তিনি দেশব্যাপী চলমান 'মব সংস্কৃতি'র অবসান ঘটানোর উপর জোর দিয়েছেন এবং বহুদলীয় গণতন্ত্রের ধারা পুনঃপ্রতিষ্ঠাকে দলের মূল লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা করেছেন।
তিনি বলেন, জনগণের অধিকার আদায়ে তাদের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করাসহ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের ধারা আবারও পুনঃপ্রতিষ্ঠা করাই এখন বিএনপির মূল লক্ষ্য।
লন্ডন স্থানীয় সময় রোববার (৩১ আগস্ট) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক পোস্টে তারেক রহমান এই শুভেচ্ছা ও অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। তিনি স্মরণ করেন যে, জাতীয়তাবাদী আদর্শের সঙ্গে জনগণকে একত্রিত করার লক্ষ্যে মহান স্বাধীনতার ঘোষক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার মতে, আজকের দিনটি বাংলাদেশি মানুষের জন্য আনন্দ, উদ্দীপনা ও প্রেরণার। বিএনপি বাংলাদেশি ভূখণ্ডের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা, শক্তিশালী সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা এবং বহুদলীয় গণতন্ত্রকে স্থায়ী রূপ দেওয়ার নীতিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।
তারেক রহমান তার বার্তায় স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর দ্বারা গণতন্ত্র হত্যা ও একদলীয় বাকশালী শাসন কায়েমের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতাত্তোর আওয়ামী দুঃশাসনে বিশৃঙ্খলা, সহিংসতা ও রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছিল, যার ফলশ্রুতিতে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষে ১০ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। বাকশাল কায়েমের মাধ্যমে স্বৈরশাসনকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করে বিচার বিভাগ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছিল বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি শহীদ জিয়াউর রহমানের অবদানের কথা তুলে ধরে বলেন, শহীদ জিয়া ক্ষমতাসীন হয়ে বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে পুনরুজ্জীবিত করেন এবং জনগণের নাগরিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন। শহীদ জিয়ার প্রতিষ্ঠিত বিএনপি বিগত ৪৭ বছরে কয়েকবার সুষ্ঠু নির্বাচনে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে দেশ ও জনগণের সমৃদ্ধি ও কল্যাণে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছে। তিনি স্বাধীনতার মহান ঘোষক, সফল রাষ্ট্রনায়ক ও আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম-এর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
তারেক রহমান বলেন, নানামুখী সুদূরপ্রসারী চক্রান্তের মধ্যেও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় চিরউন্নতশির বিএনপি অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। নির্বাসিত গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে অসংখ্য নেতাকর্মী নির্দ্বিধায় জীবন উৎসর্গ করেছেন। ৮০’র দশকে ৯ বছরের সামরিক স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির আপসহীন ভূমিকা ইতিহাসের একটি উজ্জ্বল অধ্যায়, যার ফলস্বরূপ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অবদানের কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে বিএনপি ১৯৯১ সালে নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালনকালে সাংবিধানিক সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন করেছে, যার নেতৃত্ব দিয়েছেন গণতন্ত্রের প্রতীক খালেদা জিয়া। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে বারবার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে এর চর্চা ও বিকাশসহ দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্যই বিএনপি আজ সমধিক জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের আদর্শিক ভিত্তি উদারনীতি এবং দলের সামাজিক অঙ্গীকার ও অর্থনৈতিক নীতি উদারপন্থি রাজনীতির দ্বারা অনুপ্রাণিত। বিএনপি যতবারই ক্ষমতায় এসেছে ততবারই সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি প্রসারিত করেছে। দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও নারীর ক্ষমতায়নসহ তাদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। সেক্ষেত্রে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প বাণিজ্য সেক্টরসহ ব্যাংক ঋণ, বৈদেশিক কর্মসংস্থান, রেমিটেন্স প্রবাহ ইত্যাদিতে যুগান্তকারী অগ্রগতি লাভ করে। দেশীয় অর্থনীতি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে শুরু করে।
তারেক রহমান দৃঢ়তার সাথে বলেন যে, গণতন্ত্র সমুন্নত ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য বিএনপি সরকারের উদ্যম ও উদ্যোগের ফলশ্রুতিতে দেশে আর দুর্ভিক্ষ স্পর্শ করেনি এবং মানুষ আর্থিক দুরাবস্থা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বিশ্বাস করেন যে, জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অক্ষুণ্ণ রেখে দেশমাতৃকার সেবায় নিজেদের নিবেদন করে বিএনপি আগামী দিনগুলোতেও বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে।
তিনি জন্মলগ্ন থেকে এ পর্যন্ত দলের যে সমস্ত নেতাকর্মী মৃত্যুবরণ করেছেন এবং দেড় দশকের আওয়ামী ফ্যাসিবাদের করাল গ্রাস ও গত বছর ছাত্রজনতার রক্তঝরা আন্দোলনে যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের প্রতিও গভীর শ্রদ্ধা জানান। তারেক রহমান বলেন, এখনও প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আইনের শাসন, স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ, সংবাদপত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারলেই জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। আর এজন্য জনগণের নির্বাচিত জবাবদিহিমূলক সরকার অতীব জরুরি।
তারেক রহমান আহ্বান জানান যে, গত দেড়যুগব্যাপী গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে শহীদদের আত্মদান সার্থক হবে, যদি আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, সুশাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে পারি। এটিই হোক বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভলগ্নে আমাদের অঙ্গীকার। তিনি প্রত্যাশা করেন, দেশজুড়ে যেন আর কখনোই গুম, গুপ্তহত্যা, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নারী ও শিশুদের ওপর পৈশাচিকতা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, টাকা পাচারের মতো ঘৃণ্য বিভীষিকার পুনরাবৃত্তি না হয়। নতুনভাবে আবির্ভূত 'মব সংস্কৃতি'র অবসান ঘটাতে হবে, কারণ এটি আইন বহির্ভূত একটি হিংসাত্মক আচরণ, যা জনমনে ভীতি ও আতঙ্ক তৈরি করে।
শেষে তিনি যোগ করেন, জনগণের অধিকার আদায়ে তাদের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করাসহ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের ধারা আবারও পুনঃপ্রতিষ্ঠা করাই এখন বিএনপির মূল লক্ষ্য।
এমজে
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- সম্ভাবনার নতুন দিগন্তে শেয়ারবাজারের খান ব্রাদার্স
- বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে শেয়ারবাজারের ১১ কোম্পানিতে
- মূলধন ঘাটতিতে দুই ব্রোকারেজ হাউজ, ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ
- চলতি বছর শেয়ারবাজারে আসছে রাষ্ট্রায়াত্ব দুই প্রতিষ্ঠান
- মার্জারের সাফল্যে উজ্জ্বল ফার কেমিক্যাল
- সাকিবের মোনার্কসহ ৮ ব্রোকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ
- তালিকাভুক্ত কোম্পানির ১৫ লাখ শেয়ার কেনার ঘোষণা
- বিমা আইন সংস্কার: বিনিয়োগ ও আস্থায় নতুন দিগন্ত
- শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পর প্রথম ‘নো ডিভিডেন্ড’
- ডেনিম উৎপাদন বাড়াতে এভিন্স টেক্সটাইলসের বড় পরিকল্পনা
- শেয়ারবাজারে রেকর্ড: বছরের সর্বোচ্চ দামে ১৭ কোম্পানি
- তিন শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি, ডিএসইর সতর্কবার্তা
- চলতি সপ্তাহে ঘোষণা আসছে ৫ কোম্পানির ডিভিডেন্ড-ইপিএস
- ব্যাখ্যা শুনতে ডাকা হচ্ছে শেয়ারবাজারের পাঁচ ব্যাংককে
- তিন কোম্পানির অস্বাভাবিক শেয়ারদর: ডিএসইর সতর্কবার্তা