ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২

‘স'ন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে জুলাই যোদ্ধাদের সেবা দিতে বারণ করা হয়

ডুয়া নিউজ- জাতীয়
২০২৫ আগস্ট ২৬ ১৭:১৯:১৭
‘স'ন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে জুলাই যোদ্ধাদের সেবা দিতে বারণ করা হয়

জুলাই আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে তাদের চিকিৎসা সেবা দিতে বারণ করেছিলেন তৎকালীন সরকার-সমর্থিত স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) কতিপয় চিকিৎসক। এমনকি আহতদের সেবা দেওয়ায় পাঁচজন চিকিৎসককে শাস্তিমূলক বদলিও করা হয়েছিল।

মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষ্য দিতে এসে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি বিভাগের তৎকালীন আবাসিক সার্জন ডা. মোস্তাক আহমেদ।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দায়ের করা এই মামলায় ২৭ নম্বর সাক্ষী হিসেবে ডা. মোস্তাক তার জবানবন্দিতে সেই সময়ের ভয়াবহ পরিস্থিতি তুলে ধরেন। ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

ডা. মোস্তাক বলেন, "গুলিবিদ্ধ ছাত্রদের চিকিৎসা দিতে আমাদের অতিউৎসাহী হতে বারণ করেন স্বাচিপের কতিপয় চিকিৎসক। তারা বলেন, ‘এরা সন্ত্রাসী। এদের চিকিৎসা দেওয়া যাবে না।’" তিনি আরও জানান, এই নির্দেশনা অমান্য করে আহতদের চিকিৎসা দেওয়ায় গত বছরের ২৫ জুলাই তাদের পাঁচজন চিকিৎসককে অন্যত্র বদলি করা হয়, যার মূল উদ্দেশ্যই ছিল চিকিৎসায় বাধা সৃষ্টি করা।

সাক্ষীর ভাষ্যমতে, জুলাই আন্দোলনের আহতদের গুলির ধরন ছিল সাধারণের চেয়ে ভিন্ন। তিনি বলেন, "তাদের গুলির ডিরেকশন ছিল ওপর থেকে নিচের দিকে। রোগীদের কোনো উঁচু জায়গা বা হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হয়েছে। কোনো কোনো আহতের মাথায় গুলি লেগে পিঠ দিয়ে বের হয়ে যায়।"

হাসপাতালের ভেতরের ভীতিকর পরিবেশের বর্ণনা দিয়ে ডা. মোস্তাক বলেন, "চিকিৎসা চলাকালে ছাত্রলীগের সশস্ত্র কর্মীরা হাসপাতালে ঢুকে আহতদের খোঁজখবর নিত। তখন গুলিবিদ্ধ ছাত্ররা নিজেদের পরিচয় গোপন রাখার জন্য আমাদের অনুরোধ করতেন।" এছাড়া, ঢামেকের গেটে ছাত্রলীগের কর্মীরা অ্যাম্বুলেন্স থামিয়ে আহতদের ছাত্র পরিচয় পেলে হাসপাতালে প্রবেশে বাধা দিত বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

জবানবন্দিতে তিনি এক বাবা-ছেলের গুলিবিদ্ধ হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনার স্মৃতিচারণ করে বলেন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাবা মারা গেলে ছেলেটি আক্ষেপ করে বলেছিল, ‘বাবাকে বাঁচাতে পারলাম না।’

এই নৃশংসতার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে দায়ী করে ডা. মোস্তাক আহমেদ সে সময় দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও বিচার ও শাস্তি দাবি করেন।

এদিন ট্রাইব্যুনালে আরও দুজন চিকিৎসক সাক্ষ্য দেন। নবম দিনের মতো সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে মোট ২৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত