ঢাকা, সোমবার, ৪ আগস্ট ২০২৫, ২০ শ্রাবণ ১৪৩২

দিল্লিতেও শেখ হাসিনা শেষ পর্যন্ত ‘অবাঞ্ছিত’

ডুয়া নিউজ- জাতীয়
২০২৫ আগস্ট ০৪ ১৩:৪৯:৫৫
দিল্লিতেও শেখ হাসিনা শেষ পর্যন্ত ‘অবাঞ্ছিত’

দীর্ঘদিন বাংলাদেশের ক্ষমতায় থাকা এবং ভারত-ঘনিষ্ঠ নীতির প্রতীক শেখ হাসিনা এখন নীরব, নিঃসঙ্গ ও কার্যত অন্তরীণ জীবনযাপন করছেন ভারতের রাজধানী দিল্লিতে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এক সময়ের প্রভাবশালী এই নেত্রী এখন নিজের দল ও সাবেক মিত্র রাষ্ট্রউভয়ের কাছেই যেন এক ধরনের ‘অবাঞ্ছিত’ চরিত্রে পরিণত হয়েছেন।

দিল্লির কূটনৈতিক পাড়ায় চাণক্যপুরীর একটি সুরক্ষিত ভবনে শেখ হাসিনা অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। সেখানে ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর কড়া নজরদারিতে বাস করছেন তিনি। ভেতরে প্রবেশাধিকার নেই দলীয় নেতাদেরও। এমনকি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ দিল্লিতে অবস্থান করেও তার সঙ্গে দেখা করতে পারেননি বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

দলের অভ্যন্তরীন সুত্রগুলো বলছে, শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে চাওয়া প্রবাসী আওয়ামীপন্থী নেতারাও ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই সংবেদনশীল যে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। তবে প্রভাবশালী ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য প্রিন্ট ও টাইমস নাউ এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিল্লির দৃষ্টিতে এখন শেখ হাসিনা ‘রাজনৈতিক বোঝা’।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের দীর্ঘ ১৫ বছরের বাংলাদেশনীতি ছিল ‘ব্যক্তিনির্ভর’ শেখ হাসিনাকেন্দ্রিক। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই নীতির কার্যকারিতা হারিয়েছে এবং ভারত আজ বাংলাদেশে নিজেদের প্রভাব হারিয়ে ফেলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে। এ অবস্থাকে কেউ কেউ বলছেন "ভূ-কৌশলগত ফাঁদে" পড়া।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের টানাপোড়েনের নানা ইঙ্গিতও মিলেছে। চিকিৎসা ভিসা স্থগিত, সীমান্তে পুশ-ইন ও গুলি চালনার মতো ঘটনা বদলে যাওয়া সম্পর্কেরই প্রতিফলন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ভারতের কূটনৈতিক পরিমণ্ডলে এ অবস্থাকে “কৌশলগত নীরবতা” নামে অভিহিত করা হচ্ছে।

অন্যদিকে দেশে অন্তর্বর্তী সরকার হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি প্রশাসন আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এমনকি চীনও এই প্রশাসনের প্রতি ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে। জাতিসংঘও বলেছে বাংলাদেশে এখন ‘অংশগ্রহণমূলক শাসনের’ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

দিল্লির এক গোয়েন্দা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, “এই মুহূর্তে শেখ হাসিনার মতো স্পর্শকাতর ব্যক্তি আর নেই। তাকে রাখতে গেলে কূটনৈতিক ঝুঁকি আবার সরানোও রাজনৈতিকভাবে ঝাঁঝালো হয়ে উঠতে পারে। ফলে সময়ই এখন ভারতের একমাত্র কৌশল।”

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন শেষে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বা বিদায়ী ভাষণ ছাড়াই শেখ হাসিনার এই নীরব অন্তর্ধান যেন এক করুণ ইতিহাসের সূচনা। এক সময় তিনি বলেছিলেন, “ভারতকে যা দিয়েছি তা তারা সারাজীবন মনে রাখবে।” কিন্তু ইতিহাসের নির্মমতা হলো রাষ্ট্রের স্মৃতি বড় বেশি স্বার্থনির্ভর।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত