ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

পুনরায় ইরান-ই'সরায়েল সংঘাত সময়ের ব্যাপার মাত্র!

ডুয়া নিউজ- আন্তর্জাতিক
২০২৫ জুন ২৫ ১৭:৩৬:০৬
পুনরায় ইরান-ই'সরায়েল সংঘাত সময়ের ব্যাপার মাত্র!

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার যুদ্ধ আপাতত থেমেছে। যুদ্ধবিরতির ফলে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে মধ্যপ্রাচ্যে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই ১২ দিনের সংঘাতকে '১২ দিনের যুদ্ধ' হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং দাবি করেছেন, তার প্রচেষ্টাতেই যুদ্ধবিরতি সম্ভব হয়েছে। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও ইরানের শীর্ষ নেতারা বলছেন, আলোচনার টেবিলে তাদের দেওয়া শর্তই মেনে নেওয়া হয়েছে।

তবে যুদ্ধ কী আদৌ থেমেছে? আবারও কি হামলার আশঙ্কা রয়েছে? এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বিশেষজ্ঞদের মনে।

গত শনিবার রাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এ সংঘাতে অংশ নেয়। মার্কিন বাহিনী ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক কেন্দ্র—ফোরদো, নাতানজ ও ইস্পাহানে হামলা চালায়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, এসব ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনা ‘পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে’।

জবাবে ইরানও পাল্টা জবাব দেয়। সোমবার কাতারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বিমানঘাঁটি ‘আল উদেইদ’-এ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তারা। এতে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে একটি দীর্ঘস্থায়ী ও বিস্তৃত সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়।

কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম 'ট্রুথ সোশ্যালে' ঘোষণা দেন, "ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ এবং সামগ্রিক যুদ্ধবিরতিতে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।"

ট্রাম্পের মতে, "না থামালে এই যুদ্ধ বছরের পর বছর ধরে চলতে পারতো এবং পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে ধ্বংস করে দিত।"

তবে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার চার ঘণ্টা পরই ইরান থেকে দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয় ইসরায়েলের উদ্দেশে। যদিও ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় সেগুলো আকাশেই ধ্বংস করে দেওয়া হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল তেহরানে পাল্টা হামলার ঘোষণা দেয়।

এই ঘটনায় ট্রাম্প ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "ইসরায়েল আজ সকালে যা করেছে, তাতে আমি সত্যিই হতাশ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দুটি দেশ এত দিন ধরে এমনভাবে লড়ছে যে তারা নিজেরাই জানে না কী করছে।"

ইরান অবশ্য ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার কথা অস্বীকার করেছে। পরে ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর ফোনালাপে পরিস্থিতি শান্ত হয় এবং যুদ্ধবিরতি পুনরায় কার্যকর হয়।

আবারও কি হামলার আশঙ্কা আছে?

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়েছে, তবে তা কোনো শান্তিচুক্তি নয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে এখন দুটি পথ খোলা রয়েছে। প্রথমটি, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি নতুন চুক্তির দিকে যাওয়া। এটি ২০১৫ সালের ‘জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন’ (জেসিপিওএ)-এর আদলে হতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

তবে সমস্যা হলো, অতীতের মতো এবারও ইসরায়েল কোনো ধরনের পরমাণু চুক্তির ঘোর বিরোধী এবং নতুন কোনো সমঝোতায় রাজি হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র আগের চুক্তি থেকে বেরিয়ে এসেছে এবং ইরানে সামরিক হামলায় জড়িয়েছে। ফলে তেহরান কতটা ছাড় দেবে তা নিয়েও রয়েছে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা।

ইতোমধ্যে ইরানের সংসদের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-এর সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা স্থগিতের একটি প্রস্তাব পাস করেছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি ইরানকে তাদের পরমাণু কর্মসূচি পুনরায় চালু করতে দেবেন না।

সুতরাং, দুই পক্ষের এই অনড় অবস্থানের কারণে আবারও একটি সংঘাত শুরু হওয়া এখন কেবল সময়ের ব্যাপার বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত