ঢাকা, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: ভারতের কৌশলগত স্বপ্নে কালো ছায়া

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত এখন আর শুধু মধ্যপ্রাচ্যের সীমায় আটকে নেই—এটি ভারতের জন্যও এক জটিল কূটনৈতিক ও কৌশলগত বিপর্যয়ে পরিণত হয়েছে। চাবাহার বন্দর উন্নয়ন, নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডোর (আইএনএসটিসি) বাস্তবায়ন এবং ইরানের সঙ্গে শক্তিশালী জ্বালানি ও বাণিজ্যিক অংশীদারিত্বের স্বপ্ন এখন বড় ধরনের অনিশ্চয়তার মুখে। সংঘাত যতই তীব্র হচ্ছে, ভারতের পশ্চিমমুখী ভূরাজনৈতিক পরিকল্পনা ততই ধাক্কা খাচ্ছে।
চাবাহার: কৌশলগত স্বপ্নে অনিশ্চয়তার ছায়াচাবাহার বন্দর ভারতের কাছে কেবল একটি সমুদ্রবন্দর নয়, এটি আফগানিস্তান, মধ্য এশিয়া ও রাশিয়ার সঙ্গে বিকল্প যোগাযোগ স্থাপনের একটি কৌশলগত প্রবেশদ্বার। শহিদ বেহেশ্তি টার্মিনাল উন্নয়নে ভারত প্রায় ৮৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে এবং রেল সংযোগসহ লজিস্টিক সুবিধা স্থাপন করছে। ৭০০ কিমি দীর্ঘ চাবাহার-জাহেদান রেললাইন ভারত ও ইরানের যৌথ প্রকল্প এবং এটি আইএনএসটিসি করিডোরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
তবে চলমান যুদ্ধ ও নিরাপত্তা ঝুঁকি এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে বিলম্ব ঘটাচ্ছে। ভারতীয় প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা এখন অন্যতম প্রধান উদ্বেগ। জরুরি উদ্ধার মিশন "অপারেশন সিন্ধু" এই অনিশ্চয়তাকেই সামনে এনে দিয়েছে।
জ্বালানি ও বাণিজ্যেও বাড়ছে ঝুঁকিইরান একসময় ভারতের অপরিশোধিত তেলের ১২ শতাংশ সরবরাহ করত। যদিও মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে সেই আমদানি কমে গেছে, ভবিষ্যতে তা পুনরায় চালুর আলোচনা চলছিল। কিন্তু যুদ্ধ পরিস্থিতি সেই সম্ভাবনাও অনিশ্চিত করে তুলেছে। পারস্য উপসাগর বা সুয়েজ খালের মতো সমুদ্রপথ বিঘ্নিত হলে জাহাজ চলাচল ব্যয়বহুল হবে। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ১০০ ডলার ছাড়িয়ে গেলে ভারতীয় অর্থনীতি ভয়াবহ চাপে পড়বে।
শুধু জ্বালানি নয়, ইরানের সঙ্গে ভারতের শুকনো ফল, রাসায়নিক, সিমেন্টসহ নানা পণ্যের আমদানি-রপ্তানিও হুমকির মুখে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের আমদানিকারকেরা বিকল্প উৎস খুঁজতে বাধ্য হচ্ছেন।
সমুদ্রপথে অচলাবস্থা, বাড়তে পারে দ্রব্যমূল্যসমুদ্রপথে সামরিক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে ভারতের আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে করে পণ্য পরিবহণ ব্যয় ৪০–৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে, যার প্রভাব পড়বে অভ্যন্তরীণ বাজারে। মূল্যস্ফীতি বাড়বে, রুপির মান দুর্বল হবে, ফলে আমদানি আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে।
কূটনৈতিক ভারসাম্যের চ্যালেঞ্জভারত ইসরায়েলের সঙ্গে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষাক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ অংশীদার, আবার ইরানও জ্বালানি ও আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ। এই দুই বিপরীতমুখী সম্পর্কের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা ভারতের জন্য এক বড় কূটনৈতিক পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক পক্ষকে গুরুত্ব দিলে অন্য পক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
চাবাহার বন্দর, আইএনএসটিসি করিডোর ও ইরান-ভারত সহযোগিতা এখন এক গভীর অনিশ্চয়তার মুখে। এই সংঘাত কেবল মধ্যপ্রাচ্যের নয়—ভারতের বহুপাক্ষিক কৌশলগত ভবিষ্যৎও এই উত্তেজনার ওপর নির্ভর করছে।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- সরাসরি পারমাণবিক অ'স্ত্র পাবে ইরান!
- ‘বিপর্যয় থেকে বিশ্ব মাত্র কয়েক মিনিট দূরে’
- প্রথম প্রান্তিকে মুনাফা থেকে লোকসানে গেল চার ব্যাংক
- সাত কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের পুঁজির বড় অংশ উধাও
- হা'মলার পর হন্যে হয়ে ইরানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের
- ভিডিও ফাঁস করার বিষয়ে মুখ খুলেছেন শরীয়তপুরের সেই ডিসি
- দুর্বল ১৫ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিলুপ্তির চিন্তাভাবনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক
- জবাব দিতে শুরু করেছে ইরান
- একাধিক মিসাইল ছুঁড়েছে উত্তর কোরিয়া
- ইরানে বড় ধ্বংসলীল : ৬ বিমানবন্দরে একযোগে হামলা
- শেয়ার কিনেছেন চার কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা
- ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে ঢাবিতে ক্লাস ছুটি কতদিন, যা জানা গেল
- মোবাইলে কল এলেই ইন্টারনেট বন্ধ? এক মিনিটেই সমাধান!
- জেরুজালেম ও তেল আবিবে বড় বিস্ফোরণ, ট্রাম্পের জরুরি বৈঠক
- বিএসইসির তদন্তের জালে শেয়ারবাজারের ৫ ঋণগ্রস্ত কোম্পানি