ঢাকা, শনিবার, ২ আগস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২

আইএমএফের ১৩০ কোটি ডলার পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ

ডুয়া নিউজ- অর্থনীতি
২০২৫ জুন ১৫ ০৬:৪৫:৩৩
আইএমএফের ১৩০ কোটি ডলার পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী পর্ষদের আগামী ২৩ জুনের সভায় বাংলাদেশের জন্য চলমান ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড়ের প্রস্তাব উঠছে। আইএমএফ পর্ষদ যদি এই প্রস্তাব অনুমোদন করে, তাহলে বাংলাদেশ একসঙ্গে ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার পাবে। আইএমএফ শুক্রবার তাদের কার্যসূচিতে নির্বাহী পর্ষদের সভার এই তারিখ নির্ধারণের তথ্য প্রকাশ করেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আইএমএফ পর্ষদের বৈঠকে চলমান ঋণ কর্মসূচির পর্যালোচনা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে। প্রতিবেদনটি অনুমোদন পেলেই বাংলাদেশ একসঙ্গে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ পাবে। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য সাড়ে তিন বছর মেয়াদি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করেছিল।

আইএমএফ ঋণের উদ্দেশ্য ও প্রাপ্ত কিস্তি

বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, ঝুঁকিতে থাকা ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশসম্মত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা দিতে আইএমএফ এই ঋণ কর্মসূচিটি অনুমোদন করেছে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়ে যাওয়া, টাকার দরপতন ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার কারণে ওই সময় আইএমএফের কাছে ঋণ চাওয়া হয়।

আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির মধ্যে বর্ধিত ঋণসহায়তা (ECF) ও বর্ধিত তহবিল সহায়তা (EFF) বাবদ ৩৩০ কোটি ডলার এবং রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (RSF) বাবদ ১৪০ কোটি ডলার রয়েছে। RSF আইএমএফের একটি নতুন তহবিল, যেখান থেকে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকেই প্রথম ঋণ দেওয়া হচ্ছে।

এরপর বাংলাদেশ ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায়। একই বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার এবং ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পায়। সব মিলিয়ে তিন কিস্তিতে আইএমএফের কাছ থেকে এ পর্যন্ত ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ, বাকি আছে ২৩৯ কোটি ডলার।

শর্ত পরিপালন ও জটিলতার অবসান

আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তির অর্থ গত বছরের ডিসেম্বরে পাওয়ার কথা থাকলেও শর্ত পরিপালন, বিশেষত টাকা-ডলার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি একসঙ্গে ছাড়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত এপ্রিলে আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল শর্ত পালনের অগ্রগতি পর্যালোচনায় ঢাকায় আসে। তবে তখন সমঝোতা না হওয়ায় চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড় আটকে যায়। এরপর ওয়াশিংটনে গত ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে এ বিষয়ে আরও আলোচনা হয় এবং অর্থ ছাড়ের বিষয়ে কাংখিত অগ্রগতি হয়।

গত মাসে আইএমএফের সঙ্গে কয়েকটি ভার্চুয়াল বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১২ মে দুই পক্ষের মধ্যে চূড়ান্ত সমঝোতা হয় এবং আইএমএফের পরামর্শ অনুযায়ি বাংলাদেশ তার বিনিময় হারকে বাজারভিত্তিক করেছে।

এরপর ১৪ মে আইএমএফ ওয়াশিংটন থেকে এক বিবৃতিতে জানায়, দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে এবং পর্ষদ সভার অনুমোদন সাপেক্ষে ঋণের অর্থ জুনে ছাড় করা হবে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ৭৬ কোটি ডলার বাড়তি ঋণ চেয়েছে, যা যোগ হলে মোট ঋণের পরিমাণ ৫৪০ কোটি ডলারে দাঁড়াবে। বিবৃতিতে বিনিময় হার, রাজস্ব আদায়, ব্যাংক খাতসহ বিভিন্ন সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত

অর্থনীতি এর অন্যান্য সংবাদ