ঢাকা, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২

দুই বড় খবরের মধ্যে আজ খুলছে দেশের শেয়ারবাজার

ডুয়া নিউজ- শেয়ারবাজার
২০২৫ জুন ১৫ ০৬:২৭:৩০
দুই বড় খবরের মধ্যে আজ খুলছে দেশের শেয়ারবাজার

দীর্ঘ ১০ দিনের ঈদুল আজহার বিরতির পর আজ (১৫ জুন) খুলছে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার। এমন এক সময়ে বাজার খুলছে, যখন দেশের রাজনীতিতে যেমন নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে, তেমনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেখা দিয়েছে ঘোরতর যুদ্ধাআতঙ্ক। এই দুই বড় খবরের আবহে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া নিয়ে শুরু হচ্ছে লেনদেন।

প্রথম বড় খবর: নির্বাচন নিয়ে কাটছে ধোঁয়াশা, আসছে স্বস্তি

দেশের রাজনৈতিক বড় অনিশ্চয়তা কেটেছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের লন্ডন সফরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের পর নির্বাচন নিয়ে বিরাজমান ধোঁয়াশা কেটেছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এই বৈঠককে একটি 'বড় ভালো খবর' হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ এটি দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে একটি পদক্ষেপ হতে পারে, যা সাধারণত বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ায় এবং বাজারের জন্য ইতিবাচক সংকেত বহন করে। একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়।

দ্বিতীয় বড় খবর: ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু, বাড়ছে বৈশ্বিক উদ্বেগ

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক বড় খারাপ খবর হলো, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু হয়েছে। যার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের দামামা আরও বেড়ে উঠেছে এবং পারমাণবিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে। ইসরায়েলের ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইরানের পাল্টা জবাব, এবং তেহরানকে 'পুড়িয়ে ছারখার' করার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর হুমকি পরিস্থিতিকে চরম উদ্বেগের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এমন সংঘাত আন্তর্জাতিক তেল মূল্য, সরবরাহ শৃঙ্খল এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যা বাংলাদেশের মতো আমদানিনির্ভর অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের কারণ। বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীরা এমন পরিস্থিতিতে সাধারণত ঝুঁকি এড়ানোর প্রবণতা দেখান, যার প্রভাব স্থানীয় শেয়ারবাজারেও পড়তে পারে।

বাজারের বর্তমান চিত্র ও বিনিয়োগকারীদের চ্যালেঞ্জ

গত বছরের আগস্ট মাস থেকে শেয়ারবাজারের পুনরুদ্ধারের জন্য বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উচ্চ প্রত্যাশা থাকলেও বিগত ১০ মাসে তা পূরণ হয়নি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদে বেঞ্চমার্ক সূচক ডিএসইএক্স ১ হাজার৩০৬ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৭০৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেনের পরিমাণও উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে, যা বাজারের মন্দা অবস্থাকেই নির্দেশ করে।

নতুন বাজেটে কিছু ভালো প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে। যেমন তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর্পোরেট করের ব্যবধান বাড়ানো, সিকিউরিটিজ ট্রেডিংয়ের উপর অগ্রিম আয়কর কমানো এবং মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর কর্পোরেট করের হার কমানো। কিন্তু তারপরও বাজারের অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিরা বিএসইসি'র বর্তমান নেতৃত্বের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না।

আজ যখন বাজার খুলছে, তখন বিনিয়োগকারীরা একটি জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি। একদিকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সম্ভাবনা তাদের মধ্যে কিছুটা আশার সঞ্চার করতে পারে, অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ পরিস্থিতি বৈশ্বিক অর্থনীতির অস্থিরতা বাড়িয়ে তাদের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। বিশেষ করে, জ্বালানি তেল এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হতে পারে, যা কোম্পানির মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিনিয়োগকারীদেরযা করা উচিত

শেয়ারবাজারের বর্তমান মন্দা পরিস্থিতি এবং বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক লোকসানের বিষয়টি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। তবে এই কঠিন সময়ে শেয়ার বিক্রি করে লোকসান নিশ্চিত করা কতটা বুদ্ধিমানের কাজ, তা নিয়ে গভীর চিন্তাভাবনা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, শেয়ারবাজারের ইতিহাসে মন্দা চিরস্থায়ী নয়; এটি চক্রাকারে চলে। যখন বাজার তলানিতে থাকে, তখন অনেক সময়ই এটি ভবিষ্যতে ঘুরে দাঁড়ানোর এক নীরব ইঙ্গিত বহন করে।

বিশেষ করে বর্তমান প্রেক্ষাপটে যখন দেশের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কিছুটা হলেও কমছে এবং নতুন বাজেটে বাজারকে চাঙ্গা করার জন্য কিছু প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে, তখন ধৈর্য ধরাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। যেসব বিনিয়োগকারী ভালো মৌলিক ভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিতে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করেছেন, তাদের জন্য এই সময়টা শেয়ার ধরে রাখার বা এমনকি আরও কম মূল্যে শেয়ার কেনার একটি সুযোগ হতে পারে। অতীতে দেখা গেছে, মন্দা কাটিয়ে বাজার যখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তখন যারা ধৈর্য ধরেছিলেন, তারাই শেষ পর্যন্ত লাভবান হয়েছেন। তাই লোকসানে শেয়ার বিক্রি না করে পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং বাজারের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোই বিচক্ষণতার পরিচয়।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত