ঢাকা, রবিবার, ৮ জুন ২০২৫, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
নির্বাচনের তারিখ নিয়ে বিভক্ত মত, কে কি ভাবছেন?

২০২৬ সালের এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে—প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এমন ঘোষণা ঘিরে আবারও সরব হয়ে উঠেছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। ঈদুল আজহার আগের দিন (৬ জুন) জাতির উদ্দেশে ভাষণে তিনি এই সময়সীমা ঘোষণা করেন।
এর আগে ডিসেম্বরে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিল বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। প্রধান উপদেষ্টা সময় ঘোষণা করলেও বিএনপির দাবি, জাতির প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হলে তা গ্রহণযোগ্য হতো। কিন্তু বর্ষা, পরীক্ষা ও রোজার সময় মাথায় রেখেও এপ্রিলে নির্বাচনের ঘোষণা জাতিকে হতাশ করেছে।” তিনি আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।
এপ্রিলে নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সম্পূর্ণ উল্টো দিকে অবস্থান করছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান এক বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনের দিন ঘোষণায় সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, এই ঘোষণায় জাতি আশ্বস্ত হয়েছে এবং ঘোষিত সময়ের মধ্যেই একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে জাতি আশা প্রকাশ করছে। জাতির তীব্র আকাঙ্খার সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন এই তিনটি বিষয়ের ভিত্তিতে এবং ‘জুলাই সনদ’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশকে একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবেন।
তবে বিএনপির সুরে সুর মিলিয়েছে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর দাবিগুলো গুরুত্ব দেননি। বর্ষাকাল নির্বাচনের জন্য অনুপযুক্ত।” তিনি অভিযোগ করেন, সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই চলমান সংকট মোকাবেলার চেষ্টা করছে।
সাইফুল হক আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ভাষণে বোঝাতে পারেন নাই কেন নির্বাচন ডিসেম্বরে নয়। সর্বোচ্চ জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি; এরপর নির্বাচন যাওয়া ঠিক নয়। চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের দেওয়ার বিরুদ্ধে যারা কথা বলছে, প্রধান উপদেষ্টা তাদের প্রতিহত করার কথা বলেছেন। করিডোর প্রশ্ন তিনি অস্বীকার করলেন। এক ধরনের প্যাসেজ আলোচনা ছিলো, তার থেকে তিনি বেড়িয়ে গেলেন। সরকার রাজনৈতিক দলকে দূরে রেখে কাজ করছে।
প্রধান উপদেষ্টার এই ভাষণের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক সঙ্কট নতুন মাত্রা পেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, এটা একটা অগ্রগতি বলে মনে হলেও এখানে জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি। কারণ, দেশের মানুষ ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচিত সরকার দেখতে চায়। আমরাও তা-ই চাই।
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা কেন কালক্ষেপণ করে এপ্রিলে নির্বাচনের কথা বলছেন, তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। দেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থে তিনি কী কী কাজ করতে চান তা-ও আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। সব মিলিয়ে আরও অধিক সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় থাকলে জনজীবনের সঙ্কটেই ঘনীভূত হবে বলে আমরা মনে করছি।
হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মহিউদ্দিন রব্বানী বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের যে দিন ঘোষণা করেছেন তা সঠিক নাকি ভুল এই বিবেচনা দেশবাসী করবেন। তবে একটি ধর্মীয় রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা মনে করি, এপ্রিল থেকে দুই-এক মাস আগেও নির্বাচন হতে পারে। তবে সেটি প্রধান উপদেষ্টা পুনরায় বিবেচনা করবেন বলে আমরা আশা করি।
এদিকে এপ্রিল মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণায় জামায়াতের মতো সন্তোষ প্রকাশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে নির্বাচনের দিনক্ষণের ঘোষণা নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহবায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে কোনো দ্বিধা নেই। তবে, তার আগে জুলাই সনদ, দৃশ্যমান বিচার এবং সংস্কার হতে হবে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পরিপ্রেক্ষিতে এক বিবৃতিতে বলেছেন, নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে এক ধরণের অস্থিরতা প্রশমিত হয়েছে। একই সঙ্গে বন্দর, মানবিক করিডোর নিয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করে উদ্বেগ দূর করায় ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রসংস্কারই ছিলো জুলাই অভ্যুত্থানের প্রধান লক্ষ্য এবং অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম কর্তব্য। সেই সংস্কার কাজের যে অগ্রগতির বিবরণ তিনি তুলে ধরেছেন তাতে আমরা আশান্বিত হয়েছি। আমরা প্রত্যাশা করি তিনি ও তার সরকার সকল বাঁধা উপেক্ষা করে সংস্কারের কাজ শেষ করবেন। বিচারের ক্ষেত্রে যে অগ্রগতির বিবরণ দিয়েছেন তা জাতিকে আশ্বস্ত করেছে।
অন্যদিকে এবি পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, এপ্রিল মাসে আমাদের আবহাওয়াজনিত একটা থ্রেট আছে। প্রধান উপদেষ্টা বিচার, সংস্কার, নির্বাচনের যে রূপরেখা দিয়েছেন, তার ওপর আমরা আস্থা রাখতে চাই। এখানে ষড়যন্ত্র বা চাপ এই বিষয়গুলোকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি না। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি, তাহলে এপ্রিলের মধ্যে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকি প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও নির্বাচন এপ্রিলের আগে করার পক্ষে মত দিয়েছেন। তার মতে, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করার সুযোগ আছে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সময় নির্ধারণ করা উচিত।
পাঠকের মতামত:
সর্বোচ্চ পঠিত
- লাইভে এসে হিরো আলমের আ-ত্ম-হ-ত্যা
- পাঁচ কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিএসসি
- শেয়ার কারসাজিতে ১৪ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে ২.৫২ কোটি টাকা জরিমানা
- শিক্ষা ক্যাডারে ৪৯তম বিশেষ বিসিএস সার্কুলার প্রকাশে পিএসসির চেয়ারম্যানকে স্মারকলিপি
- মৌসুমী-হাসান জাহাঙ্গীরের বিয়ে: ওমর সানীর ‘জুতাপেটা’র হুমকি
- বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড দেয়ায় ক্যাটাগরি উন্নতি
- মূলধন বাড়াতে রাইট শেয়ার ইস্যুর সিদ্ধান্ত
- শেয়ারবাজার বাঁচাতে অর্থ উপদেষ্টা ও বিএসইসি চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবি
- বাজেটে শেয়ারবাজারের জন্য সুখবর: কমছে কর, বাড়ছে সুযোগ
- প্রথমবারের মতো লোকসানে কোম্পানি, ডিভিডেন্ডও তলানিতে
- শেয়ারবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ চান বিনিয়োগকারীরা
- শেয়ারবাজারের ৫ ইসলামী ব্যাংক একীভূত করতে রোডম্যাপ ঘোষণা
- বিচ হ্যাচারি: ঝলমলে অবস্থান থেকে হঠাৎ অন্ধকারে!
- ডিএসইর চোখে বাজেট শেয়ারবাজারবান্ধব
- শেয়ার কারসাজির দায়ে হিরু-সাকিবদের ২০৮ কোটি টাকা জরিমানা