ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বাজেটে ইতিবাচক বার্তা, নতুন গতি আসবে শেয়ারবাজারে: সিএসই

ডুয়া নিউজ- শেয়ারবাজার
২০২৫ জুন ০৩ ২২:৩৪:০২
বাজেটে ইতিবাচক বার্তা, নতুন গতি আসবে শেয়ারবাজারে: সিএসই

প্রস্তাবিত ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেট শেয়ারবাজারে গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। বাজেট প্রণোদনা, ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করার উৎসাহ এবং ব্রোকারেজ হাউজসহ বাজার-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর করের বোঝা হ্রাস পাওয়ার বিষয়গুলোকে সিএসই ইতিবাচকভাবে দেখছে। আজ মঙ্গলবার (৩ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে সিএসই এই তথ্য জানিয়েছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বাজেট এবং শেয়ারবাজারের জন্য প্রণোদনা

সিএসই'র বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সোমবার (০২ জুন) ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করেন। এটি দেশের ৫৪তম বাজেট এবং অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট।

ঘোষিত বাজেটে শেয়ারবাজারের সার্বিক উন্নয়নে তিনটি প্রত্যক্ষ প্রণোদনার প্রস্তাব করা হয়েছে-

প্রথমত, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ও তালিকাবহির্ভূত প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্পোরেট করের ব্যবধান ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭.৫ শতাংশ করা।

দ্বিতীয়ত, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর বিদ্যমান কর্পোরেট করহার ৩৭.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৭.৫ শতাংশ করা।

তৃতীয়ত, শেয়ারবাজারে লেনদেনের ওপর উৎস অগ্রিম কর বিদ্যমান ০.০৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.০৩ শতাংশ করা।

সিএসই মনে করে, এসব প্রণোদনা ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করতে এবং ব্রোকারেজ হাউজসহ বাজার-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর করের বোঝা হ্রাস পাওয়ায় শেয়ারবাজারে গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা ও পূর্ববর্তী সরকারি পদক্ষেপ

সিএসই জানিয়েছে, বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা শেয়ারবাজার উন্নয়নে গত ১১ মে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে প্রদত্ত পাঁচটি নির্দেশনা বাস্তবায়নের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন।

সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য সরাসরি কোনো প্রণোদনার প্রস্তাব প্রস্তাবিত বাজেটে উল্লেখ না থাকলেও গত বছরের ৪ নভেম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) তালিকাভুক্ত কোম্পানি থেকে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের অর্জিত ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মূলধনি আয় সম্পূর্ণ করমুক্ত রাখার বিধান অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ৫০ লক্ষ টাকার ঊর্ধ্বে মূলধনি আয়ের উপর কর ১৫ শতাংশে হ্রাস করেছে।

এছাড়াও, সম্প্রতি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কর্তৃক বিনিয়োগকারীদের বিও অ্যাকাউন্টের উপর ধার্য বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ ফি ৭৫% হ্রাসের নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং গ্রাহক অ্যাকাউন্টে অর্জিত সুদের ২৫ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ব্যয়ের জন্য ইনভেস্টরস প্রোটেকশন ফান্ডে জমার সিদ্ধান্ত শেয়ারবাজারের টেকসই উন্নয়নে বড় প্রভাব রাখবে বলে আশা করা যায়।

অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় ও সুপারিশ

বাজেটে প্রস্তাবিত শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্ট আরও কিছু বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে-

করমুক্ত দানের আওতায় স্থাবর/অস্থাবর সম্পদ হস্তান্তরের ক্ষেত্রে বিদ্যমান তালিকায় আপন ভাই ও বোনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার হস্তান্তরের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদ আয়ে উৎস কর ৫% এর পরিবর্তে ১০% করা হয়েছে। এর ফলে প্রকৃত সুদ আয় কমে যাওয়ায় শেয়ারে বিনিয়োগে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।

তবে, সিএসই মনে করে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোনো শেয়ার বা তহবিলের স্পনসর, ডিরেক্টর বা প্লেসমেন্ট হোল্ডারদের হস্তান্তর কার্যক্রম করার পূর্বে উৎস কর ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ (পূর্বে এ হার ছিল ৫%) নির্ধারণ করা হয়েছে, যা পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে।

এছাড়া, তালিকাভুক্ত কোম্পানির ঘোষিত লভ্যাংশ আয় সম্পূর্ণ করমুক্ত বা অগ্রিম কর্তিত আয় চূড়ান্ত করদায় হিসেবে বাজেটে বিবেচনা করলে তাতে সরাসরি সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কিছুটা উপকৃত হতেন এবং আবাসন খাতের মতো শেয়ারবাজারেও অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগের সুযোগ দিলে বাজারে গতি সঞ্চারিত হতে পারতো।

কমোডিটি ডেরিভেটিভ মার্কেট ও সিএসই'র প্রত্যাশা

উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন সম্প্রতি “চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (কমোডিটি ডেরিভেটিভ) প্রবিধানমালা, ২০২৫” অনুমোদন দিয়েছে। এর ফলশ্রুতিতে দেশের প্রথম কমোডিটি এক্সচেঞ্জ হিসেবে নিবন্ধন সনদ পাওয়া চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে কমোডিটি মার্কেট অপারেশন চালুর মাধ্যমে ডেরিভেটিভ পণ্যের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে, যা নিঃসন্দেহে দেশের শেয়ারবাজারের জন্য একটি অনন্য মাইলফলক। সিএসই আশা করে, কমোডিটি এক্সচেঞ্জ বিকাশে সিএসইকে কর অবকাশ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সিএসই মনে করে, বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ও সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সাম্প্রতিক সময়ে শেয়ারবাজারের উন্নয়নে সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপগুলো প্রশংসার দাবি রাখে। তবে বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণ এবং শেয়ারবাজারকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সমন্বিত ও কৌশলগত উদ্যোগ প্রয়োজন।

সার্বিকভাবে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা, বাজেটে উল্লিখিত প্রস্তাবনা, এনবিআর এবং বিএসইসি কর্তৃক গৃহীত সকল সিদ্ধান্ত শেয়ারবাজারের দীর্ঘমেয়াদী টেকসই উন্নয়নে সরকারের সদিচ্ছা, আন্তরিকতা, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং দৃঢ় প্রতিশ্রুতির পরিচায়ক হওয়ায় সিএসই পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টা, অর্থ উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং এনবিআরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছে।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত