ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সংকট থেকে সম্ভাবনায়

বিমান বাংলাদেশের নেতৃত্বে আকাশপথে রপ্তানির রূপান্তর

ডুয়া নিউজ- জাতীয়
২০২৫ জুন ০৩ ১৮:০২:৩৮
বিমান বাংলাদেশের নেতৃত্বে আকাশপথে রপ্তানির রূপান্তর

বাংলাদেশের আকাশপথে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের প্রধান কেন্দ্র হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এখানে প্রতিবছর গড়ে ২,১০,০০০ মেট্রিক টন রপ্তানি ও ১,২১,০০০ মেট্রিক টন আমদানি পণ্য পরিবাহিত হয়। তুলনায় চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রপ্তানি মাত্র ৩,৩৫২ এবং আমদানি ২,৯২০ মেট্রিক টন, যা দেশীয় আকাশপথের বাণিজ্যিক প্রবাহে ঢাকার একচ্ছত্র আধিপত্যকে নির্দেশ করে।

সড়কপথে ভারতে পণ্য পাঠিয়ে ট্রান্সশিপমেন্টের সুবিধা আগে থাকলেও, হঠাৎ ভারত সে সুবিধা বন্ধ করে দিলে রপ্তানিকারকরা এক অনিশ্চয়তায় পড়ে যান। এই সংকটের সময়েই দৃঢ় নেতৃত্ব নিয়ে সামনে আসে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। তাদের উদ্যোগ ও সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের সমন্বিত পরিকল্পনায় আকাশপথে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়।

সিলেট: আঞ্চলিক কেন্দ্র থেকে বৈশ্বিক ফ্রেইটার হাবে উত্তরণ

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সক্রিয় অংশগ্রহণে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে কার্গো ফ্লাইট উপযোগী করে তোলা হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যের মান নিশ্চিত করতে RA3 সার্টিফিকেশন (ভ্যালিড ২০২৮ পর্যন্ত) অর্জিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৫ সালের ২৭ এপ্রিল সিলেট থেকে স্পেনের জারাগোজা পর্যন্ত প্রথম এয়ার ফ্রেইটার উড্ডয়ন করে, যার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।

মে ২০২৫ পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে একটি করে ফ্রেইটার চলেছে, জুন থেকে তা বাড়িয়ে সপ্তাহে দুটি করা হচ্ছে, এবং ভবিষ্যতে চারটি পর্যন্ত পরিচালনার প্রস্তুতি রয়েছে।

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার: প্রস্তুতি নিচ্ছে নতুন কেন্দ্র

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেও কার্গো ফ্রেইটার চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। অবকাঠামো নির্মাণ ও বিমানের প্রস্তুতি চলমান।

অন্যদিকে, সম্প্রসারিত রানওয়ে ও রেল সংযোগ সুবিধায় কক্সবাজার বিমানবন্দর দেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক কার্গো হাবে পরিণত হওয়ার পথে। এখানে কম খরচে ও দ্রুত পণ্য পরিবহনের সুবিধা কাজে লাগাতে বিমান জনবল, কার্গো ওয়্যারহাউজ ও হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি প্রস্তুত করছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।

তৃতীয় টার্মিনাল: ঢাকার সক্ষমতা তিনগুণে উন্নীত হওয়ার পথে

ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নবনির্মিত তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে কার্গো পরিচালনার সক্ষমতা প্রায় তিনগুণ বাড়বে। ২০১৯ সালে যেখানে মোট কার্গো পরিবহন ছিল ৩.৩৪ লক্ষ মেট্রিক টন, তা ২০২৫ সালে হবে ৪.৩৪ লক্ষ এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে পৌঁছাবে ৬.৬৩ লক্ষ মেট্রিক টনে।

নতুন কার্গো টার্মিনালের জন্য ৩৮১টি আধুনিক হ্যান্ডলিং সরঞ্জাম সংগ্রহ ও সংযোজনের কাজ চলছে, যার অধিকাংশ ইতোমধ্যেই যুক্ত হয়েছে। এতে থাকবে হাইড্রোলিক ট্রলি, ফর্কলিফট, টো ট্রাক্টর ও বাগি।

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও অংশীদারিত্ব

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ইতোমধ্যেই RA3 ও ACC3 সার্টিফিকেশন অর্জন করেছে, যা ইউরোপে কার্গো পরিবহনের জন্য বাধ্যতামূলক। বিমান বর্তমানে ৪৮টি আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সের নির্ধারিত কার্গো হ্যান্ডলিং এজেন্ট এবং প্রতিবছর গড়ে ২,১০০টি নন-সিডিউল চার্টার ফ্লাইট পরিচালনা করে।

বিমান কার্গো বিভাগ ইতিহাদ, এমিরেটস, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, এয়ার ফ্রান্সসহ শীর্ষ এয়ারলাইন্সের সঙ্গে SPA, BSA ও কোড-শেয়ার চুক্তির মাধ্যমে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে কাজ করছে। পাশাপাশি ঢাকা হয়ে ট্রানজিট ও ট্রান্সফার কার্গো পরিবহনের ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

সম্ভাবনার ডানা ছড়াচ্ছে বিমান

২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিমানের কার্গো বিভাগ রেকর্ড আয় করেছে। কেবল একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা নয়, বিমান আজ দেশের আকাশপথে বাণিজ্যের মূল চালক। সংকটকে সম্ভাবনায় রূপান্তর করে, বৈশ্বিক মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এখন কেবল একটি পরিবহন প্রতিষ্ঠান নয়, বরং দেশের অর্থনীতির বিশ্ববিস্তারে এক নির্ভরযোগ্য অগ্রদূত।

কার্গো এখন কেবল পণ্য নয়, এটা দেশের সম্ভাবনা ও বিশ্বজয়ের প্রতীক। আর সেই প্রতীকে নতুন প্রাণ ও গতি দিচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।

পাঠকের মতামত:

ডুয়ার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

সর্বোচ্চ পঠিত